রহমান মৃধা
ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের আগমনের আগ পর্যন্ত রাজকীয় বিলাসিতা ও রোমান্টিক যৌনতার ওপর যে বন্যা বয়ে চলছিল সেই যৌনতার প্রতি সর্বজনের আকর্ষণ কেড়ে নিতে বিখ্যাত বিখ্যাত ও নামকরা পরিচিত বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে অ্যারোটিক আকারে খোদাই করে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়, যা ইন্ডিয়া ভ্রমণে গেলে এখনো নিদর্শনস্বরূপ সকলের চোখে পড়ে।
জানা মতে, ব্রিটিশের আগমনের পর অ্যারোটিক যৌনতার বিলুপ্তি ঘটতে শুরু হয় যা আজকের যুগে শুধু নিষিদ্ধ নয়, মনে হচ্ছে সূর্য যেমন মেঘে ঢাকা পড়ে, ঠিক যুগের পরিবর্তনের সাথে যৌনতাও তেমনি করে ঢাকা পড়েছে। তাই শুধু ভারত নয় বাংলাদেশেও সেক্স বা যৌনতার ওপর কথা বা আলোচনা বন্ধ রয়েছে আজও।
মানবজাতির বায়োলজিক্যাল অ্যাকটিভিটিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাট্রাকশন বা বিনোদন হোল সেক্স এবং যা মানবজাতির মনের মধ্যে প্রতি মিনিটে জানতে বা অজান্তে বিরাজ করছে ভাবনায় কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে শুধু অন্ধকারে নির্বিঘ্নে, নিরিবিলি ও নিরাময়ে। মনে হচ্ছে কথা কম কাজ বেশি তাইতো ঘরে ঘরে সংখ্যায় মানবজাতির বিস্তৃতি ঘটে চলেছে দিনের পর দিন।
মজার ব্যাপার হোল পৃথিবীর কোনো কাজ নেই যা মানবজাতি প্রশিক্ষণ ছাড়া উন্নতির শীর্ষে উঠতে সক্ষম হয়েছে যেমন- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, কৃষক যাই ধরি না কেন, এর পিছনে রয়েছে প্রশিক্ষণ কিন্তু সেক্সের ওপর কোনো ধরণের প্রশিক্ষণ বা আলাপ আলোচনা ছাড়াই চলছে সেক্স তার নিজের গতিতে, পাশাপাশি ডিজিটালের যুগে সেক্সের ওপর খুলেছে গুগোল সেক্স অ্যারোটিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে দেদারছে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর আনাগোনা চলছে, কোনো শিক্ষক ছাড়া এবং এই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে কেউ সমাজের নিয়মকানুন ভাঙছে আর কেউবা স্বপ্নের রাজ্যে রাজত্ব করছে।
আমাদের জন্মের শুরুতে আমরা সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণতায় জন্মেছি এবং কোনো কাপড় ছাড়া মানে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত নতুন কিছুই শরীরে আসেনি শুধু চিন্তাধারার পরিবর্তন এবং হরমোনের আবির্ভাব ছাড়া এবং দৈহিক গঠনের পরিবর্তন যা ছোট ছিল তা সাইজে বড় হয়েছে মাত্র। আমরা ছোটবেলার মতো উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করিনে তাই কাপড় পরি, কিন্তু কাপড়ের তলে আমরা সবাই উলঙ্গ এ বিষয় নিশ্চিত।
আরও পড়ুন : দেশ থেকে দূর করতে হবে সব মাকাল ফল
হঠাৎ কী হোল যার কারণে আমরা কাপড় পরতে শুরু করলাম? লজ্জা বা শরমের কারণে, নাকি ধর্মীয় কারণে? নাকি শরীরের সেই ছোট্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বড় হয়ে যৌনতার ওপর আমাদের মাইন্ডসেটের প্রভাব বিস্তার করেছে তার কারণে? কারণ যেটাই হোক না কেন সমস্যা নেই, সমস্যা একটাই তা হোল আমরা কেন এই যৌনতার আলোচনায় চুপ?
এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অথচ আমরা নীরব! শিশুর কৈশোরের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সেক্সের ওপর শিক্ষা প্রশিক্ষণ খুবই দরকার বিশেষ করে গ্লোবাল ডিজিটালের যুগে এবং ছোট-বড় সবার জন্য। যেভাবে সেক্সের ওপর অশ্লীল চলচ্চিত্র তৈরি করে গুগোলের যুগে ডিজিটালের মাধ্যমে সেক্সের প্রচলন চলছে তা শুধু সেক্সের ওপর নোংরামির পরিচয় ছাড়া অন্য কিছু শিখতে বা জানতে সাহায্য করছে না বিধায় স্বর্গীয় ভালোবাসা বা রোমান্সের যে সম্পর্ক তৈরি হবার কথা তা হচ্ছে না, যার কারণে নর-নারীর ভালোবাসায় ভাঙ্গনের সাথে যুক্ত হতে শুরু হয়েছে ঘৃণা।
এর থেকে রেহাই পেতে হলে দরকার সঠিক প্রশিক্ষণ। সমস্যা হোল, যে সব শিক্ষক রয়েছে বর্তমান তারা নিজেরাই তো জানে না কী শিক্ষা? এবং কীভাবে শিক্ষা? এর জন্য দরকার বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান যেখানে যৌনতার ওপর আলোচনা হতে পারে।
আরও পড়ুন : হৃদয়ে এসেছে শরৎ
ভাঙ্গতে হবে কুসংস্কার, করতে হবে মন পরিষ্কার, তবেই হবে মনুষ্যত্বের পরিবর্তন। পাশ্চাত্যে বিশেষ করে সুইডেনে সেক্সের ওপর ডিজিটালের আবির্ভাবের সাথে সাথে প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ায় এখানে সেক্সকে যেমনটি করে ভাবা হচ্ছে অনেক দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে তেমনটি করে ভাবা হচ্ছে না। যার কারণে অনেক সময় অনেকে বলে, জানো সুইডেনে সেক্স ফ্রি? আমরা কি জানি? কী মিন করা হয়েছে এতে? সুইডেনে সেক্সের কেনাবেচা নিষিদ্ধ। কেউ এমনটি করলে বা ধরা খেলে কঠিন সাজার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে সেক্সের সমন্বয় ঘটে ভালোবাসা বা পছন্দের বিনিময়ে, টাকা, প্রেসার বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে নয়। যদি এমনটি ঘটে তখন নিয়ম অমান্যের কারণে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সুইডেনের প্রশিক্ষণে ক্লাস ওয়ান থেকে নাইন অব্ধি সময়কে প্রাইমারি স্কুল বলা হয় এবং এই প্রাইমারি স্কুলের তিনটি স্তর রয়েছে তা হোল লোগ, (লো) মেলান (মিডিয়াম) এবং হোগ (হাই) লেভেল। সেক্সের ওপর এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় প্রাইমারির মিডিয়াম এবং হাই লেভেলে, কারণ একটাই তা হোল শিশুর শারীরিক পরিবর্তনের সাথে মানসিক পরিবর্তনের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে তাকে মানসিকভাবে তৈরি করা।
এখানের স্কুলে এবং বাড়িতে শিক্ষার্থীকে জানানো হয়, মেন্সট্রেশনের কারণ, সেক্সের সমন্বয় এবং দৈহিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা (হাইজিন), সর্বোপরি সতর্কতা, এবং ওপেনলি বা খোলামেলাভাবে আলোচনা করা হয় সেক্স কী? কেন সেক্স? কোন বয়সে সেক্স? ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের বাবা-মা এবং স্কুলের শিক্ষকদের এ বিষয়টির ওপর বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া দরকার। টিন এজের এ সময় নানা ধরণের জটিলতা দেখা দেয় যা কেউ জানে না, অনেকে ডিপ্রেশনে ভোগে, অনেকে নিজের ওপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করে এমনকি আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ কারণ ঘটে থাকে।
বাবা-মা চিন্তায় ঘুম হারাম করতে শুরু করে অথচ কেউ সেক্স বা যৌনতার বিষয় কথা বলে না। সেক্স মানব জাতির জন্য স্বর্গীয় আশীর্বাদ এবং ভালোবাসার ফল এবং এ বিষয়ে সেইভাবে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, সাথে সুশিক্ষার সমন্বয়ে মানবজাতির চরিত্রের পরিবর্তন আনতে হবে।
আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে
মনের কলুষতা দূর করতে হলে এবিষয়ের ওপর খোলামেলা আলোচনা হতে হবে, তা নাহলে আমাদের মুরাল ভ্যালুর পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। মনে রাখতে হবে, সেক্স বা যৌনতা এ অভিশাপ নয় এ মানবজাতির জন্য স্বর্গীয় আশীর্বাদ।
লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড