• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দেশ থেকে দূর করতে হবে সব মাকাল ফল

  রহমান মৃধা

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:১৮
দেশ থেকে দূর করতে হবে সব মাকাল ফল
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

যখনই কোনো কিছু বাস্তবায়ন করার আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করা হয় বা হচ্ছে তখনই ধরে নিতে হবে এ কাজের গোড়ায় গলদ আছে বা তাড়াহুড়ো করে কিছু একটা করার চেষ্টা মাত্র। কারণ বলা হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে সোমবার নতুন কারিকুলামের খসড়া অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেছেন বাস হয়ে গেল সারাদেশে এর গ্রহণযোগ্য। কখন না শুনি ডাক্তাররা বলতে শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রুগীর দেহ থেকে মাথা সরানো হয়েছে। এভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে দেশের পরিকাঠামোকে দিন দিন দুর্বল করা হচ্ছে।

আমি হুবহু নতুন কারিকুলাম দেখেছি। এই কারিকুলামের অনেক নতুন দিক রয়েছে। নতুন শতকে পা দিয়ে নতুন কারিকুলাম চালুর বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভালো। প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সময়ে সময়ে এর মধ্যে সংযোজন, বিয়োজন তথা পরিমার্জন হবারই কথা। এবারের নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্ট ১০টি যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করবে বলা হচ্ছে। এর মানে অতীতে এটা সুনির্দিষ্ট ছিল না, তবে নব্বইয়ের দশকে আমাদের দেশে প্রাথমিক স্তরে যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম চালু করা হয়েছিল।

এবার মাধ্যমিক স্তরেও তা চালু হতে যাচ্ছে। এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে গিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ ও একুশ শতকের দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়েছে। পরীক্ষা নির্ভরতা কমিয়ে ক্লাসরুমভিত্তিক মূল্যায়নকে জোর দেওয়া হয়েছে। পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দক্ষতা, কলাকৌশল প্রয়োগ এবং মুখস্থভিত্তিক পড়াশোনা থেকে সরে এসে কার্যভিত্তিক শিখনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি বিষয়ে আন্তঃসম্পর্ক ও সমন্বয় এই শিক্ষাক্রমে রয়েছে। যেমন বাংলা শিখতে গেলে তার মধ্যে কিন্তু ইতিহাসের কোনো প্রসঙ্গও আসতে পারে। গণিত শিখতে গেলে তার মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয় চলে আসবে। প্রতিটি শ্রেণির যোগ্যতাভিত্তিক দক্ষতা অর্জন সম্ভব হবে। প্রতিটি স্তরে শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের কাজ শুরু হয় নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরপরই ইত্যাদি বলা হয়েছে।

শিক্ষাক্রমের সঙ্গে শিখন-শেখানোর সামগ্রীও গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক গাইড, টিচার্স ম্যানুয়াল ও অন্যান্য সামগ্রী। এসবের মাধ্যমে একটি কম্প্রিহেনসিভ পাঠ পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১১ সালে প্রাথমিকের যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলামে মোট ২৯টি দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন মাধ্যমিকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে ১০টি দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

মাধ্যমিকে এতদিন যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম ছিল না। এই স্তরে শিখনফল ভিত্তিক বা উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রম অনুসরণ করা হতো। এখন থেকে এই স্তরেও যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু হবে; ১০টি দক্ষতা অর্জন করবে শিক্ষার্থীরা। এই ১০টি দক্ষতা হলো-সূক্ষ্ণ চিন্তন দক্ষতা, সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা, সমস্যা সমাধান দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা, স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, সহযোগিতামূলক দক্ষতা, বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা, জীবিকায়ন দক্ষতা এবং মৌলিক দক্ষতা। শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, গুণাবলি ও মূল্যবোধ সংযুক্ত করে শিখন ক্ষেত্রে এ দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আটটি বিষয়ের তিনটি বই, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে আটটি বিষয়ে ৬টি বই এবং ১০টি শিখন ফল রাখা আছে। মাধ্যমিক স্তরে ১০টি বিষয়। আগে প্রাথমিক স্তরে সংগীত ও চারুকলা পৃথক দুটি বিষয় ছিল। এখন এ দুটিতে এক করে নাম দেওয়া হয়েছে শিল্পকলা। এসব বিষয়ে ক্লাসেই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।

এতে শিশু শিক্ষার্থীর ওপর বইয়ের বোঝা কমবে। এই স্তরের শারীরিক শিক্ষা বিষয়টির নামও এবার বদলে গেছে। নতুন নামকরণ করা হয়েছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয় কমে যাবে মাধ্যমিক স্তরেও। মাধ্যমিকে আগে ১৪টি বিষয় ছিল। নতুন কারিকুলামে ১০টি বিষয় হবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসেই সব শিখবে। লেখাপড়া সমস্ত কাজ বিদ্যালয়েই হবে। কাজ করে করে তারা শিখবে। ক্লাসরুমে শিক্ষকরা তাদের দলে ভাগ করে ছোট ছোট কাজ দেবেন, ছোট ছোট প্রশ্ন করবেন, মার্কিং করে গ্রেড দেবেন। এভাবেই তাদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।

আরও পড়ুন : হৃদয়ে এসেছে শরৎ

এবার মূল্যায়নের ব্যাপারটি বলি। দুইভাবে মূল্যায়ন হবে। একটি ধারাবাহিক মূল্যায়ন, যা ক্লাসে হবে। অন্যটি সামষ্টিক মূল্যায়ন, যা পরীক্ষার মাধ্যমে হবে। তবে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। কোনো কোনো ক্লাসে ৬০ ভাগ ধারাবাহিক ও ৪০ ভাগ সামষ্টিক, আবার মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণিতে ৫০ ভাগ ধারাবাহিক ও ৫০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।

নতুন কারিকুলামের বড় বৈশিষ্ট্য হলো- শিক্ষার্থীরা বাড়িতে সময় পাবে এবং খেলাধুলা করবে। তাদের ওপর বইয়ের চাপ, পরীক্ষার চাপ কমবে। সপ্তাহে তারা দু'দিন ছুটি পাবে। কোনো বাড়ির কাজ দেওয়া হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার প্রশ্ন যারা এ কাজ গুলো করতে সাহায্য করবেন তারা কি শতভাগ কমিটেড একাজ করতে? আছে কি বা দেওয়া হচ্ছে বা হয়েছি কী সে ধরণের প্রশিক্ষণ তাদের? তা যদি না দেওয়া হয়ে থাকে কীভাবে সম্ভব হবে পুরো প্রশিক্ষণকে বাস্তবায়ন করা? পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে কী যাচাই করা হবে যে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি সুশিক্ষার রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে?

যদি সেটা পরিকল্পনায় থেকে থাকে তবে সেটা হবে ভুল, কারণ যাদের সামর্থ্য আছে তারাই হয়ত ভালো করবে পরীক্ষার ফলাফল, কারণ তারা দুইদিন ছুটি থাকায় ঘরে বসে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ পাবে, কিন্তু অভাগা গরীব পরিবারের সন্তানদের কী হবে?

বাংলাদেশ নকল করতে পাকা, হুট করে দেখা গেল একটি দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে কপি করে ফেলেছে। একবার ভাববার প্রয়োজন পড়ল না যে সেদেশের পরিকাঠামো আর আমাদের দেশের পরিকাঠামো এক নয়। যেমন সেখানকার অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গুলোর সঙ্গে আমাদের আদোও মিল আছে কী ইত্যাদি।

দেশের দায়িত্বশীল কর্মীরা শুধুমাত্র প্রধান মন্ত্রীর দোহায় দিয়ে একের পর সমস্যার সমাধান করার কথা বলছে। সত্যিকার্থে সমাধান হচ্ছে কি? বিশ্বে স্যাটেলাইট রয়েছে আমাদেরও থাকতে হবে।

পৃথিবীর সব চেয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি হাসপাতালে কিনে ভর্তি করা হয়েছে অথচ সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। স্যাটেলাইট আকাশে উড়ছে তার সঠিক ব্যবহার নেই।

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের হোমপেজ খুললে মনে হবে বাহ চমৎকার, দেশে কোন কিছুরই অভাব নেই। অথচ সহজ বাংলা ভাষায় বলতে হয় ‘উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট।’ যে দেশে গানের শুরে বলা হয় মাকালের ফল দেখিতে ভালো উপরে লাল তার ভিতরে কালো, সে দেশের প্রতিটি স্তরের একই অবস্থা। এখন কাজ একটাই সেটা হলো মাকাল ফলকে দূর করতে হবে। কে করবে সেই কাজটি সেটাই এখন রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন?

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড