রহমান মৃধা
ইতিহাস আমাদের কী শিক্ষা দেয়? ইতিহাস মনে করিয়ে দেয় পুরনো স্মৃতিকে। ইতিহাস থেকে আমরা উদাহরণ খুঁজে পাই। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কেউ জীবন গড়ি আর কেউ শিক্ষা না নিয়ে জীবন থেকে হারিয়ে যাই। ভালো-মন্দের সমন্বয়ে গড়া অন্যের জীবনের স্মৃতিচারণ করতে আমরা পছন্দ করি। খুব কম সময় ব্যয় করি নিজেকে, নিজের ইনার ইঞ্জিনিয়ারিংকে (Inner Engineering) জানতে, বুঝতে এবং শিখতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। তিনি ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৫ সালে তার হত্যার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নৈতিক, সাংস্কৃতিক, সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকটের সময় তিনি আমেরিকাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি ইউনিয়ন সংরক্ষণ, দাসত্ব বিলোপ, ফেডারেল সরকারকে মজবুত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আধুনিকীকরণে সফল হয়েছেন। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে নিশ্চিত বলা যেতে পারে অল্প সময়ে স্বল্প নয় অনেক কিছুই তিনি করেছেন।
ওবামা ৫৫ বছর বয়সে অবসর নিয়েছেন। দুই দুইবার তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ট্রাম্প ৭০ বছর বয়স পার করলেও তার শুরু দেখেছি শেষ দেখিনি। এখনো তিনি রাজনীতি করছেন এবং দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ঢাকার সময় যখন দুপুর বারোটা স্টকহোমের সময় তখন সকাল সাত অথবা আটটা। অর্থাৎ সুইডেন বাংলাদেশের তুলনায় চার-পাঁচ ঘণ্টা পিছিয়ে আছে। এর অর্থ এই নয় যে, স্টকহোম ঢাকার তুলনায় কোনো দিক দিয়ে পিছেন আছে।
অনেকে ২২-২৩ বছর বয়সে মাস্টার্স পাশ করে বেকার হয়ে আছে, আবার অনেকে ২২-২৩ বছর বয়সে চাকরি থেকে শুরু করে বিয়েশাদী পর্যন্ত সবকিছু শেষ করে দিব্যি সুখের সংসার করছে।
অনেকে জাহাজ, প্লেন, মেডিসিন তৈরি করছে। অনেকে খাবারের সন্ধানে সারাদিন ব্যয় করছে।
বিল গেটস যে বয়সে (১৯৭০ ও ১৯৮০ দশকে) মাইক্রোকম্পিউটার বিপ্লবের অন্যতম সেরা উদ্যোক্তা এবং পথিকৃৎ হয়েছেন, অনেকে সে বয়সে লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি।
জ্যাক মার জনপ্রিয় ট্রেডিং সাইট আলিবাবা ডট কম নামের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। জ্যাক মা বিশ্বাস করেন ৫০ বছরের পর মানুষ শুধু ঘুরবে, মজা করবে, জীবনের মানে খুঁজবে এবং বেঁচে থাকবে ৯০ বছর অবধি।
আরও পড়ুন : দেশ এবং রাষ্ট্র বলতে কী বুঝায়?
অন্য দিকে অনেকে ৪০ বছরে বিয়ে করতে পারেনি, আবার অনেকে ঐ বয়সে দাদা-দাদি বা নানা-নানী হয়ে গেছে।
জীবনের শুরু থেকে মানুষ তার নিজ নিজ গতি এবং অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে কাজ করে চলেছে। এখন ধরুন একটি উদাহরণ হিসাবে আমি তুলে ধরলাম যেমন নদী বহুল দেশ বাংলাদেশ, আমার মতে বাংলাদেশে ভাসমান মার্কেট তৈরি করা, হতে পারে একটা দারুণ ব্যাপার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নদীর পাড় এবং পানির ক্ষতি না করে ব্যবসা করা, বাজার বসানো একটা রোমাঞ্চকর ধারণা মনের মাঝে তৈরি করা যেতে পারে।
এ ধারণার পক্ষে এবং বিপক্ষে আলোচনা হতেই পারে, তবে আমাদেরকে মত এবং দ্বিমতের উপর রেসপেক্ট দেখাতে শিখতে হবে। সবার মতামতকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। সব সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। বিশ্বের সকল মানুষেরই একটা ভয় হলো, আমরা হেরে যেতে ভয় পাই। ফিয়ার অব ফেইলিয়র আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। এটাকে জয় করা আমাদের প্রথম আর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আমাদের ভেতরে একটা হীনম্মন্যতা আছে। এসব ভেঙে নিজের ক্ষমতাকে দক্ষতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। নিজের ভালো-মন্দ, শক্তিশালী আর দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং একই গতিতে লেগে থাকতে হবে ভালো থেকে আরও ভালো হবার জন্য। এরপর বাকি সবকিছুই সহজ হয়ে যাবে। তারপরও হয়তো মনে হবে কেউ আমার পেছনে বা কেউ আমার সামনে।
প্রত্যেকেই তার নিজস্ব সময়ে নিজের মতো করে চলার কথা কিন্তু হিংসা, উপহাসের কারণে কেউ ধুকে ধুকে মরছে। আবার কেউ প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে নিজেকে সমাজে প্রমাণিত করছে, একজন সফল মানুষ হিসেবে।
পড়ালেখার সাথে সাথে আমি চাকরি শুরু করেছি ১৯৮৫ সাল থেকে। চাকরির সাথে সাথে আমি একজকেটিভ এমবিএ শেষ করি স্টকহোম স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে ২০০৪ সালে। জানিনে পৃথিবীতে কয়জন এমনটি করেছে। তবে আমি করেছি। কারণ বাঁধা এসেছে সামলিয়েছি।
চাকরিতে নতুন প্রমোশন হবে, দেখা গেল শিক্ষার যোগ্যতা কম প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায়। ঠিক আছে, কাজের ফাঁকে সেটাও করেছি। দুই বছরের কোর্স ছায় মাসে শেষ করতে হবে কী করা! প্রচুর টাকার দরকার। কোম্পানির প্রফিট বাড়িয়ে সেখান থেকে বোনাস জোগাড় করে টাকার সমস্যার সমাধান করেছি। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময়, হাজার সুযোগ সামনে অথচ চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। চাকরি ছেড়েছি আমি, মন খারাপ হয়েছে অন্যদের। সবাই লেখে কিছু পেতে আমি লিখি কিছু দিতে।
আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে
কারণ-
Life is a choice, so relax.
You are not advanced. You're not late.
You're on time. You are in your time.
So don’t worry be happy.
লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড