• রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল ও আধুনিক দুর্নীতি!

  কাজী ফিরোজ আহমেদ

১০ জুলাই ২০২১, ১৬:৩৮
মতামত
ছবি : সংগৃহীত

করোনা মহামারিতে স্থবির হয়ে আছে পুরো বিশ্ব। নাজুক হয়ে আছে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা। একই কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এর কিছুদিন পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নামমাত্র অনলাইনে ক্লাস চালু করে।

অনলাইন ক্লাস ও অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় দুর্নীতির আশ্রয় নেয় বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। চার মাস করে সেমিস্টার শেষ করাটাই যেন মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজারো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সেমিস্টারের পর সেমিস্টারের শেষ করছে তারা। বিশেষ করে ল্যাব কোর্সগুলোর কথা না বললেই নয়, যেখানে থিওরি ক্লাস অনলাইনে শেষ করা কঠিনতম বাস্তবতা, সেখানে ইলেকট্রনিকস বা সিএসইর মতো বিভাগের ল্যাব ক্লাস অনলাইনে নেওয়া বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। ব্যাপারটা এমন যে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। সেমিস্টার ঠিকই শেষ হচ্ছে, তবে সেটা নামকাওয়াস্তে।

অনলাইনে ক্লাস করা মানে মাইক্রোফোন, ভিডিয়ো বন্ধ করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে জম্পেশ আড্ডা দেওয়া, জুম ক্লাসে হাজিরা দেওয়াটাই মুখ্য উদ্দেশ্য। পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, বেশীরভাগ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শুধু নামেমাত্র অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষা মূল্যায়ন করছে। পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাজারো অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু শিক্ষার্থীরা জানান, যারা ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিয়ে সিজিপিএ ৩ পয়েন্ট তুলতে হিমসিম খেতো সেখানে তারা প্রায় ৪ পয়েন্ট ছুঁইছুঁই পাচ্ছে। একটা সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করে অন্য সেমিস্টার মাঝপথে চলে আসলেও বিগত সেমিস্টারের রেজাল্ট দেওয়ার নামগন্ধ থাকছে না। অথচ কোনোভাবে সেমিস্টার শেষ করে টিউশন ফি আদায় করাই যেন প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা মূল্যায়ন নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ। ম্যাথ ক্লাস অনলাইনে করানোর ধরণ নিয়েও রয়েছে নানা যোজন-বিয়োজন। অনেকটা রিডিং পড়ানোর স্টাইলে হচ্ছে অনলাইনে ম্যাথ ক্লাস। শিক্ষার্থীরাও মুখস্থ করে অনলাইন পরীক্ষায় বসছে। সবাই নিশ্চিতভাবেই যেন সাজানো নাটকের অভিনেতা। কারণ ফেল শব্দটাই এখন অনলাইন যুগে নেই।

এভাবেই অনলাইনে সেমিস্টার মানে আধুনিক দুনীতির আশ্রয় নিচ্ছে দেশের অধিকাংশ সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে অনলাইন নির্ভর এই ‘ভাইরাসের’ প্রভাব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অপেক্ষাকৃত বেশি। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নামেমাত্র অনলাইন সেমিস্টার পার করে ফি আদায় করা। এছাড়া রয়েছে পর্দার আড়ালে নানারকম গল্প।

এমনও অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে, সিএসই বিভাগের প্রোগ্রামিং ক্লাসের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন যে শিক্ষক যার ব্যাকগ্রাউন্ড কিনা সিএসই না। অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড এর স্যার এসে সিএসই বিভাগের ক্লাস নিচ্ছে, এটা নিছকই মজার এবং হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জুম ক্লাসে ইচ্ছেমতো সময়ে ক্লাসের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ডেকে নিচ্ছে শিক্ষকরা। এতে একদিকে যেমন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ক্লাস অংশগ্রহণ করতে পারছে না, অন্যদিকে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের ঝরে যাওয়ার হার। এমনিতেই নানা সীমাবদ্ধতায় শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ কম, তার মধ্যে এই ব্যাপারগুলো ঘটার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নামেমাত্র।

এ দিকে, ইন্টারনেটের ধীরগতির ফলে ক্লাস করার জন্য রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে হয় অনেক শিক্ষার্থীদেরই। এরকম হাজারো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শিক্ষার্থী চেষ্টা করে যাচ্ছে ক্লাসে অংশগ্রহণ করার। এরমধ্যে কিছু শিক্ষকের উদাসীনতা সঠিকভাবে অনেক কিছুই হচ্ছে না।

এমনও শিক্ষক আছেন, যিনি কিনা জুমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানোর সময়ে অন্য লোকের সাথে চ্যাটিং এ ব্যস্ত। আবার এই শিক্ষকই ভাইভা মূল্যায়নের সময় শিক্ষার্থীদের শাসায় ‘ক্লাসে ছিলা না, কিছুই পারো না। আমি ফেল করায় দেবো তোমাকে।’

এভাবে করে সেমিস্টারের পর সেমিস্টার শেষ করছে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অত্যাধুনিক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সেমিস্টার শেষ করায় এই গল্পে পঙ্গু হচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্ম। প্রযুক্তিনির্ভর দুর্নীতি এবং শিক্ষার্থীদের ওপর বেপরোয়া টিউশনি ফি নেওয়ার শেষ কোথায়, এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের!

লেখক: শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

ওডি/আইএইচএন

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড