রিদুয়ান ইসলাম
চলছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালে এই মাসে বাংলার কিছু তরুণ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে তাদের প্রাণ নিবেদিত করেছিলেন। তাদের সেই আত্মত্যাগের ফলেই আজ আমরা স্বাধীনভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে পারছি। তাদের স্মরণে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই পরম শ্রদ্ধার সাথে আমরা ভাষা শহীদদের স্মরণ করি থাকি। এবারের ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের স্মরণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন? জানাচ্ছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক রিদুয়ান ইসলাম।
বাংলা ভাষা হোক স্ব-অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি জানান, বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। শুধু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্যই সেই ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় নানা আন্দোলন হয়েছিল। যার চূড়ান্ত অবসান হয় ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও আমরা বাংলাকে সকল স্তরে অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে ব্যাবহার করতে পারছি না। আইনি সকল প্রক্রিয়ায় মামলার রায় আজও ইংরেজিতে দেওয়া হয়, ফলে সাধারণ শ্রেণির মানুষেরা মামলার রায়গুলো সঠিকভাবে বুজতে পারছে না। ভাষার মাসে সকল বাঙালিদের পক্ষ থেকে আজ এই আর্জি পেশ করছি, যেন আমাদের বাংলা ভাষাকে সর্বমহলে পূর্ণাঙ্গভাবে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া হয়। তাহলেই বাংলা ভাষা হবে সকল মানুষের স্ব-অনুভূতি প্রকাশের বাহন।
সর্বস্তরে অটুট থাকুক ভাষার মর্যাদা
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাহিন হোসেনের মতে, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, বাঙালির জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চাপিয়ে দেওয়া উর্দু ভাষাকে উপেক্ষা করে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিউরসহ হাজারো সূর্যসন্তানের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৪৮ সাল থেকে বিশ্বে বাঙালিই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছে অকাতরে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলা ভাষা আজ হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ বিদেশি ভাষার মিশ্রণ ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। হিন্দি, ইংরেজির মিশ্রণ ছাড়াও সর্বস্তরে রয়েছে শুদ্ধতার অভাব। অপমানিত হচ্ছে রক্তক্ষয়ী মায়ের ভাষা। বাংলার প্রতিটা মুখে ভাষার মাসে ফুটে উঠুক বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও শুদ্ধতা চর্চার একমাত্র অঙ্গীকার।
মাতৃভাষার সম্মানে ঘাটতি
জবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মুর্শিদা বলেন, ভাষার মাস! কথাটা শুনেলেই যেন বুকটা গর্বে ভরে যায়। কারণ, এই ভাষায় জন্যে আমাদের দামাল ভাইয়েরা তাদের প্রাণ উৎসর্গ করে দিয়েছিল। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আজ সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীন ভাষা বাংলা ভাষা। কিন্তু এখন আমাদের ভাষাকে আমরা যথাযথ সম্মানের সাথে ব্যবহার করতে পারছি না। ভাষার সম্মানে আমরা পিছুপা। যে ভাষার জন্য এতো আত্মত্যাগ, এতো আন্দোলন, এতো দৌরাত্ম্য সে ভাষাকেই আমরা আজ অবহেলা করছি, বিকৃত করছি।
তরুণ এই শিক্ষার্থীর মতে, দিনে দিনে আমরা ঝুঁকে পড়ছি বিদেশি ভাষার প্রতি। অথচ, একমাত্র বাংলা ভাষা ছাড়া বিশ্বের আর কোনো রাষ্ট্র তাদের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি। আমরা দিয়েছি, রক্ষা করেছি মাতৃভাষা। তাই আমাদের উচিত বাংলার শহীদদের সম্মানে, মাতৃভাষার সম্মানে সর্বাবস্থায় বাংলা ভাষা ব্যবহার করা। তাহলেই আবার বিশ্বের বুকে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ ভাষা হিসেবে দাঁড় করাতে পারব।
রংবাহারি মিশ্রভাষা পরিত্যাগ চাই
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মনির হোসেন শান্ত বলেন, বাঙালি জাতির অসংখ্য অর্জনের মধ্যে অন্যতম হলো মাতৃভাষা। অনেক আন্দোলনের পরে ১৯৫২ সালে বাংলার জন্য বাংলা মাতৃভাষাকে নিজস্ব করে নেয় বাঙালি। এর পেছনে রয়েছে রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা মাতৃভাষার সম্মান। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাঙালি জাতির মনেপ্রাণে জেগে ওঠে ভাষার প্রেম। পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় তাদের। বাঙালি জাতির আরেক অনুপ্রেরণার শক্তির নাম ফেব্রুয়ারি মাস।
আরও পড়ুন : করোনার টিকা নিয়ে কী ভাবছে তরুণরা?
তার মতে, অনেক আবেগ জর্জরিত থাকে এ মাসে। কিন্তু যে ভাষার জন্য এতো আন্দোলন, এতো রক্তক্ষয় সেই বাংলা ভাষাকেই আজ আমরা অবজ্ঞা করে চলছি। কথা বলার ভাষায় নিয়ে এসেছি কত রংবাহারি মিশ্র ভাষা। এসব কি আমাদের মায়ের ভাষাকে অপমান করা নয়? পরিশেষে একটাই প্রত্যাশা, বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা যেন আমাদের মায়ের ভাষাকে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতে পারি।
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড