আসমাউল মুত্তাকিন
রাত ১১.৩০। নতুন সহকর্মীকে লেখা সম্পাদনা কাজ দেখিয়ে দিতে একটু দেড়ি। এ দিকে সময় আর আমাকে থাকতে দিতে চাচ্ছে না। চলে যাওয়া সময় হয়েছে। নতুন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে অফিস থেকে নিচে নামলাম। তার অতীত ও বর্তমান নানা বিষয় নিয়ে খোশগল্প করতে করতে বাসার দিকে হাটা দিলাম।
একটু যেতেই তিনি তার পথ নিয়ে বিদায় নিলেন। আমি সামনের দিকে হাঁটা-দিলাম। ঘড়ির কাটা তখন রাত ১২টায় এসে থেমেছে। আশপাশের সব দোকান-পাট বন্ধ। শীতও অনেক পড়েছে। এমন সময় পিছন থেকে ইঠাৎ ডাক..
‘মামা একটা তিলের খাঁজা নিবেন? মাত্র ১০ টাকা। নিয়েন নেন ভালো লাগবে।’
একটু চমকে গেলাম! আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মানুষ। শরীরে একটা ময়লাযুক্ত কম্বল। মুখে একটা মিষ্টি হাসি। হাসি পেছনে একটা কষ্টের গল্প আছে তা দেখলেই বুঝা যায়। মনটা কেমন জানি করছে! তার গল্পটা শোনা দরকার। না হলে মনটা তৃপ্তি পাবে না।
বাসার দিকে না গিয়ে বসলাম তার পাশে। গল্প হলো তার সাথে কিছু সময়। তার নাম আমিরুল ইসলাম। তিনি কুষ্টিয়ায় থেকে ঢাকায় এসেছেন কাজ করার জন্য। তার এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে। তারা খুবই ছোট। তিনি ঢাকার আবদুল্লাহপুরে থাকেন। দুই বছর আগে একটা দুর্ঘটনায় তিনি তার পায়ের আঘাত পান। যার কারণে এখন আর বড় বা ভারী কাজ করতে পারেন না। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জন করেন তিনি। বড় অভাবের সংসার। কারও কাছে সাহায্য নিতে নারাজ তিনি। নিজে কিছু করতে চান।
সাহায্য গ্রহণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামা অন্যের কাছে হাত পাততে ভালো লাগে না। আর ভিক্ষা করারও ভালো লাগে না। মানুষ অনেক কথা কয়। আর মোর ভাইয়েরাও দেখে না। আত্মীয়স্বজন সবাই নিজের কাজ নিয়ে থাকে। কে কারে দেখব কন? আমি নিজে এইভাবে সারারাত এই বেচাকেনা কাজ করি আর সংসার চালাই। রাতে তাড়াতাড়ি বাড়িতে গেলে কম বেচা হয় এই জন্য যাই না। দেড়িতে যাই। দেখি কি হয়?’
তার সাথে কথা বলতে বলতে তিনি আমাকে তার তিলের খাঁজাটা দিলেন। আমি নিয়ে তাকে ৫০ টাকার নোটটা দিলাম। তিনি ফেরত দিতে চাইলেন আমি না নিয়ে রেখে দিলাম। তিনি একটা সুন্দর হাসি দিলেন।
অতঃপর বাসার দিকে রওনা দিলাম। যদিও অনেক টাকা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু মানিব্যাগের অবস্থাও করুন। দিতে পারিনি। আক্ষেপ কিছুটা ছিল!
পরিশেষে এটাই বলতে চাই, আসুন এইভাবে এসব মানুষদের পাশে দাঁড়াই। আসুন মানবিক হয়ে উঠি।
শিক্ষার্থী, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড