• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৭১ পূর্ব-পরবর্তী জাতীয় সঙ্গীত জাতীয় সঙ্গীত ও ভাস্কর্য

  রহমান মৃথা

২০ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:২৮
অধিকার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য (ছবি : সংগৃহীত)

দেশ স্বাধীন হবার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার গড়ে উঠেছে এবং সেখানে ফুলের মালা দিয়ে, কুরআন থেকে তেলাওয়াত করে দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করি। এটা যে শুধু বাংলাদেশে করা হয় তা নয়, বিশ্বের সর্বত্রই এমনটি হয়ে থাকে।

তাছাড়া প্রতিটি স্বাধীন দেশে রয়েছে জাতীয় সঙ্গীত। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, ন্যাচার, কালচার ইত্যাদির উপর বিচার বিশ্লেষণ করেই জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণ করা হয়। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত ছিল এমন–

পাকিস্তান জিন্দাবাদ... পূরব বাংলার শ্যামলীমায় পঞ্চনদীর তীরে অরুণিমায় ধূসর সিন্ধু মরু সাহারায ঝাণ্ডা জাগে যে আজাদ... খাইবার দ্বারে দ্বারে পতাকাবাহী মেঘনার কূলে যত বীর সিপাহী প্রাচ্য প্রতীচ্যের মিলন গাহি ঝাণ্ডা জাগে যে আজাদ... পাকিস্তান জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।

এটি ছিল বিকল্প জাতীয় সঙ্গীত যা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের অস্তিত্ব থাকাকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গাওয়া হতো। গানটি বাংলা ভাষায় লিখিত হয় গোলাম মোস্তফা কর্তৃক ১৯৫৬ সালে। তারানা-ই-পাকিস্তান নামক একটি কবিতা থেকে এটি গৃহীত হয়েছিল। গানটির সূর করেন নাজির আহমেদ।

দেশ স্বাধীন হবার অব্যবহিত পূর্বে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতেহারে —“আমার সোনার বাংলা" গানটি গীত হয়।

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥ ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥ কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো— কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে। মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মরি হায়, হায় রে— মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥

সন্দেহাতীতভাবেই বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য ছিল দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন ঘটানো। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু একটা সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, যে সোনার বাংলার উপমা তিনি পেয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে, ভালোবেসে বঙ্গবন্ধু সেই সোনার বাংলার স্বপ্নকে তার দেশের জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়। বঙ্গমাতা সম্পর্কে এই গাঁথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ১৯০৫ সালে রচিত। বাউল গায়ক গগন হরকরার গান "আমি কোথায় পাব তারে" থেকে এই গানের সূর ও সঙ্গীত উদ্ভূত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সম্পূর্ণ আমার সোনার বাংলা গানটির প্রথম দশ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃত। ইদানীং ফেসবুকের মাধ্যমে দেখছি মাদ্রাসা শিক্ষা-প্রশিক্ষণে সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী মিলিত হয়ে রবীন্দ্রনাথের সূরকে নকল করে মুসলমানের জাতীয় সঙ্গীত চর্চা চলছে!

ইসলাম ধর্মের কোন কিতাবে কে লিখেছে এটা? এবং এরা কোন দেশের মুসলমান? কোথায় পৌঁছে গেছে এই বর্বরেরা! এখনই লাগাম টেনে না ধরলে দেশটা বর্বর যুগে ঠেলে নিয়ে যাবে এরা। হিন্দি সিনেমার গানের সূরে এরা ইসলামী গজল গায়। এখন আবার জাতীয় সঙ্গীতের চর্চা চলছে এভাবে-

“দয়ার আল্লাহ আমি তোমায় ভালোবাসি চিরদিন তোমার দয়ায় তোমার মায়ায় অধম আমি বেঁচে আছি... দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনের, সঙ্গে আমাদের সবার। মাতৃভূমিকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করা এবং সরকার যদি সেটা জেনে না জানার ভান করে তবে নতুন করে দূর্গ গড়তে হবে।

পাকিস্তানের সময় যে গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সেই গান আর রবীন্দ্রনাথের গানে শুধু পার্থক্য এটাই, রবীন্দ্রনাথ নন মুসলিম। এটাই যদি সমস্যা হয় তবে প্রযুক্তির সমস্ত ডিভাইস (টেলিফোন, টেলিভিশন, ক্যামেরা, কম্পিউটার ইত্যাদি) থেকে শুরু করে সমস্ত পণ্যদ্রব্য, ওষুধ তৈরিতে যেখানে মুসলমানদের কোনো সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই সেগুলোও বয়কট করতে হবে। শুধু সুবিধাবাদী মুসলিম হলে চলবে না।

ভাস্কর্য এবং মূর্তি দুটো ভিন্ন জিনিসকে মিশ্রিত করে সমাজকে দূষিত করা হচ্ছে। যেভাবে ভাস্কর্যে ফুল দেয়া হচ্ছে তাতে মূর্তি পূজার সঙ্গে মিল মনে হচ্ছে অনেকের কাছে। যখন একটি ভাস্কর্য এত বেশি সম্মানিত যে পূজোর সঙ্গে তুলনীয় সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে বিষয়টি ভাবার বিষয় রয়েছে। তবে ভাস্কর্যের কারণে বিষয়টি যদি সত্যি শিরিকে পরিণত হয়ে যায় তাহলে সেটা হবে সেই ভাস্কর্য পরিবারের জন্য দুঃখজনক।

জাতির পিতা যেহেতু সবার সম্বল সেক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিকভাবে ভাবা দরকার। তবে এমন কিছু করা যাবে না যেটা শুধু বাংলাদেশকেই নয়; বিশ্বের দরবারে ইসলাম ধর্মকেও ছোট করে। পবিত্র কোরআনে শত শতবার বলা হয়েছে নামাজ কায়েম কর, হজ্জ কর, জাকাত দাও, মিথ্যা কথা বলো না, দুর্নীতি করো না, ধর্ষণ করো না। এগুলোর উপর সঠিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, অথচ ভাস্কর্যের উপর এত গুরুত্ব কেন?

গুরুত্ব যদি দিতেই হয় তবে কোরআন বা হাদিস কর্তৃক সঠিক তথ্য জানতে হবে। ভাস্কর্য নিয়ে কিছু বর্ণনা করা এবং সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়া মূর্তির সঙ্গে তুলনা করা ঠিক হবে না।

তবে আবু হুরায়রা (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ বলেন, ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শস্য কিংবা একটি যব! – সহীহ বুখারী: ৫৯৫৩।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত দিবসে আজাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদের সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার করো। – সহীহ বুখারী: ৭৫৫৭; ৭৫৫৮।

এই হাদিসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভাস্কর্য নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন কবীরা গুনাহ। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কুফরীর পর্যায়েও পৌঁছে যায়। ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমি সেই ধর্মে বিশ্বাসী। আমার বাপ-দাদাসহ তাদের চৌদ্দপুরুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। সেই ধর্মকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমারও রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো রকম ভুলভ্রান্তিকে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে মেনে নেয়া অন্যায়। সবাইকে অনুরোধ করবো দয়া করে ক্ষান্ত হোন। নিজ নিজ চরকায় তেল দিন, পরের পিছে না লেগে। আমরা সবাই এখন সব ধর্ম সম্পর্কে কম বেশি সচেতন। আমাদের ভালো-মন্দের দায়ভার আমাদের নিজেদের। যে কারণে আল্লাহপাক কোরআনে জানিয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর পরে আর কোন নবী বা রসূলের আগমন হবে না। কারণ তিনি শেষ নবী এবং রসুল এবং আমরা আমাদের ভালো-মন্দের জন্য দায়ী। দয়া করে অন্যকে হেদায়েত না করে নিজে হেদায়েত হোন এবং অন্যকে নষ্ট এবং ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন পরম করুণাময় এবং অত্যন্ত দয়ালু, তিনি আমাদের হেফাজত করবেন। কারণ তিনি রহমানের রাহিম। আমিন।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। [email protected]
চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড