মাহবুব নাহিদ
লেখক এবং প্রকাশক হওয়ার কথা একে অপরের পরিপূরক কিন্তু হয়ে আছে উল্টোটা। খুব কম ক্ষেত্রেই লেখক প্রকাশকের সম্পর্ক মধুর হয়। সম্পর্ক না হওয়ার পিছনে বেশকিছু কারণ আছে।
একদম সবার প্রথম কারণ হচ্ছে ব্যবসায়িক মনোভাব। অনেক প্রকাশক নিতান্তই ব্যবসা করতে বসেছেন। সাহিত্য সম্পর্কে ধারনা না থাকলেও সাহিত্যের ধারক বাহক হয়ে গেছেন। লেখক হচ্ছে সৃজনশীলতার এক অনন্য উদাহরণ কিন্তু সেই লেখককেই কিনা প্রকাশকের পিছনে দৌঁড়াতে হয়। অনেকের সাথে তো দেখা হওয়াই অমাবস্যায় চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থা। বই নিয়ে চলে বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা। বই বের করার আগে টাকা পরে টাকা, টাকাই যেন সবকিছু। বই ১০ কপি বিক্রি হলে ১ কপির হিসাব দেওয়া এসব আমাদের দেশের নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার।
আগেই বলে রাখি, সবাই যে এমন করে তা কিন্তু না!
একজন প্রকাশক সাধারণত বইয়ের সেন্সর করেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাকা নিয়ে বই ছাপিয়ে ফেলেন। আদৌ সেই বই আসলে বই হবার যোগ্য কিনা তা অনেকেই ভেবে দেখেন না। এক্ষেত্রে দোষ শুধু প্রকাশকের না।
মোহাম্মদ রফিক একটা কথা বলেছিলেন, "সব শালা কবি হবে" এখন বই বের করাও তেমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে। কেউ একটু কিছু করে ফেললেই একটা বই বের করে ফেলেন। বই লিখে আগে মানুষ সেলিব্রিটি হতেন, এখন সেলিব্রিটি বই লেখে। আর সাথে সেলফিবাজ ভক্ত সমর্থকরা তো আছেই। এই কারণে প্রকাশক লোভে পরে যায়, বই ছাপায়!
প্রকাশকরা লেখকদের সঠিক সম্মান করেন না, লেখকরাও প্রকাশকদের না। ব্যতিক্রম খুবই কম। ওই যে গো ধরেছে বই লিখবে, বই একটা লিখে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বই মোটেও বিক্রি হয়নি। এখন দোষ হয়ে যায় প্রকাশকের। বই বিক্রির সংখ্যা বাড়তি হলে তেমন ঝামেলাই হয় না। কিন্তু ঝামেলা আবার লাগে রয়্যালিটি নিয়ে। এটা একটা বিরাট ব্যাপার! এই কথা তো আগেই বলেছি।
আমাদের দেশে কিছু প্রকাশক আছেন যারা নিজেরাও লেখক। তাদের থেকে ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যায় কারণ তারা লেখকদের সম্মান করতে জানেন। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে প্রকাশকরা অনেকেই মৌসূমী প্রকাশক। অন্য একটা কাজ করেন আর পাশাপাশি প্রকাশনা চালান। অনেকের তো বইমেলা ছায়ারা কোনো খোঁজই থাকে না। যারা পুরোদস্তুর প্রকাশক তাদের থেকে কিছুটা হলেও ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব।
লেখকরাও অনেকে বই বিক্রি হলে প্রকাশক ভালো, বিক্রি না হলে সব দ্বায় প্রকাশকের উপরে চাপিয়ে বসে থাকে।
এই দুই শ্রেণীর মধ্যে ভালো সম্পর্ক করতে হলে প্রথমেই বাংলা একাডেমী কর্তৃক বইয়ের সেন্সর দেওয়া শুরু করতে হবে। মানহীন বই না বের করতে পারলে অনেকাংশেই এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। বেশি বেশি সাহিত্যমনা মানুষের প্রকাশনা শিল্পে আসতে হবে। বাংলাদেশে এমন কিছু প্রকাশনা আছে যারা প্রকাশনা শিল্পকে অনন্য জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।
মূল কথা হচ্ছে অনেকেই বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে। এই বিষয়ে বাংলা একাডেমী আশা করি নজর দেওয়া শুরু করবে আর মানহীন বই যাতে বের হতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড