মাহবুব নাহিদ
There are worse crimes than burning books. One of them is not reading them
বই পোড়ানোর চেয়েও গুরুতর অপরাধ অনেক আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হল বই না পড়া।.
রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত- যৌবনা- যদি তেমন বই হয়। সৈয়দ মুজতবা আলীর কথাটা আসলেই অনেক তাৎপর্য বহন করে। বইয়ের গুণ যদি সবাই বুঝতে পারতো তাহলে সবাই বইয়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তো। বই হচ্ছে মানুষের জন্য অন্যতম একটি আয়না, জীবন গড়ার একনিষ্ঠ হাতিয়ার। তবে বই হতে হবে বইয়ের মতো অর্থাৎ সঠিক বই পড়তে হবে।
বই নিয়ে এখন কথা হয় না। বই নিয়ে আড্ডা হয় না। বই নিয়ে কথা হয় না এখানে, সেখানে। মানুষ এখন দিনদিন প্রযুক্তির দাস হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রযুক্তির কাছে বন্দী হয়ে যাচ্ছি। প্রযুক্তি আমাদের এক বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে। আমরা চাইলেও সেই বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছি। বুকসেলফ শুধুই একটা সৌখিন ব্যাপার। বাসায় একটা বুকসেলফ আছে, কালেকশনে কিছু বই আছে এটা একটা আভিজাত্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই নিজের ওজনটাকে বাড়ানোর জন্য বই ঘরে রাখে। কিন্তু বই তো শুধু সেলফে জায়গা পাওয়ার বিষয় নয়। অনেকের ঘরে তোবই জায়গা পায় খাটের নিচে বস্তায় কিংবা কার্নিশে। আমাদের মধ্যে যারা ছাত্রছাত্রী তারা এখন শুধুমাত্র পাথ্যবইয়ের মাঝে বন্দী হয়ে গেছে। পাঠ্যবইয়ের বাহিরে তাদেরকে ভাবতে দেওয়া হয় না। বই এমন একটি জিনিস যা আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে আকাশের চূড়ায়। কিন্তু এখন এখন বই পড়ার অভাবে আমরা জ্ঞান বঞ্চিত হচ্ছি।
তবে একটা বিষয় লক্ষনীয়, ইদানীং বইয়ের বিক্রি টাকার অংকে বেড়েছে। যদিও দাম বেড়েছে তাই বিক্রি বেড়েছে। এখন অবশ্য অনেকেই বই কেনে সেলিব্রিটিদের সাথে ছবি তোলার জন্য কিংবা অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য। কারণ এখন বই লিখে কেউ সেলিব্রিটি হয় না, সেলিব্রিটিরা এখন বই লেখে। সেলিব্রিটিদের আসা যাওয়ার ভীরে ভালো লেখকদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যারা অনিয়ম অসংগতির বিরুদ্ধে লেখে তাদের তো কোনো বাড়িঘরই নেই। তাদের কোনো জায়গা নেই। তোষামোদকারী, চাটুকাররা পায় বড় বড় পুরষ্কার। কিন্তু লেখকের কলমে তো তোষামোদ আসার কথা না, লেখকের কলম প্রতিবাদ করা উচিত, লেখকের কণ্ঠে প্রতিবাদ ঝরা উচিত।
এই সকল কিছুর মাঝেই কিছু মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে বই নিয়ে। বইয়ের কথা বলছে কিছু মানুষ, মানুষের হাতে বই তুলে দিচ্ছে। ভালো খারাপের দিকে যেতে চাচ্ছি না। কারণ খারাপ লিখে লেখক টিকবে না। তাই বই নিয়ে আলোচনা হোক, কথার সূচনা হোক।
এখন বই নিয়ে কথা বললে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে মানুষের নানান কথা শোনা যায়। বই নিয়ে নাকি বেশি মাতামাতি করা ঠিক না। বই নিয়ে মাতামাতি করা যাবে না। কিন্তু বাবু খাইছো, বাবার দরবারে পাগলের খেলা এসব গান নিয়ে আলোচনা করা যাবে। দুঃখ এই জাতির যে একজন লেখক ফেসবুকে তার বই নিয়ে কিছু পোস্ট করলে কথা শুনতে হয় মানুষের কাছে। হয়তো তিনি বিক্রি বাড়ানোর জন্য পোস্ট করেছেন। আসলে কি বইয়ের দাম দেওয়া সম্ভব? সামান্য কয়টা টাকা দিয়ে কি কালো অক্ষরগুলোর দাম দেওয়া সম্ভব? আমার মনে হয়, বই সবচেয়ে বড় অমূল্য সম্পদ হলেও বাস্তবে বইয়ের দাম সবচেয়ে কম। হয়তো মূল্য কম বলেও আমরা গুরুত্ব কম দিয়ে থাকি।
প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, বই কিনে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয়না। কিন্তু এখন যেন বই কেনার অর্থটাই আমাদের নেই। আমোদ ফুর্তি করার সময় আছে, অর্থ আছে, অনেক কিছু করার সুযোগ আছে কিন্তু বই কেনার টাকা নেই, বই পড়ার সময় নেই।
সামাজিক ও মানবিক অবক্ষয়ের হার কমাতে হলে সর্বক্ষেত্রে বইয়ের প্রবেশ করাতে হবে। বেশি বেশি বই পড়তে হবে। তাই আসুন আওয়াজ তুলি,
বই পৌঁছে যাক প্রত্যেক ঘরে ঘরে, প্রতিটি মানুষের হাতে হাতে বই নিয়ে কথা হোক মাঠে ঘাটে প্রান্তরে, কথা হোক চায়ের আড্ডায়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড