• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রতিভা থাকলেই হবে না, তার বিকাশ ঘটাতে হবে

  রহমান মৃথা

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:১৬
অধিকার

আগরবাতি, ধূপ এসবের মধ্যে যে সুগন্ধ রয়েছে তা যখন জ্বালানো হয় তখন টের পাওয়া যায়। মানুষের মাঝেও আগরবাতি বা ধূপের মতো প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। এর বিকাশ ঘরে বসে থাকলে ঘটবে না। একে সঠিকভাবে পেতে হলে নিজেকে চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। হাজার সমস্যা আসবে জীবনে, বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। একে মোকাবেলা করার মতো শক্তি এবং জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

আমি এসব অনুপ্রেরণামূলক কথা পছন্দ করি। তবে শুধু কথা পছন্দ করলেই হবে না সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কারণ সবকিছু তুলনা করা যত সহজ বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটানো ততটা সহজ নয়। যেমন স্কুল পালালেই নজরুল হওয়া যায় না বা ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া ছেড়ে দিলেই রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না ইত্যাদি।

তবে আমি প্রতিভার পাশাপাশি ভাগ্যের ওপরও বিশ্বাসী। কারণ আমি যা শিখেছি বা দেখেছি আমার জীবনে, সেই সব ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা তুলে ধরতে চাই, এতে বুঝতে সহজ হবে।

ছোটবেলায় গান গাইতে পছন্দ করেছি, স্কুলে নাটকে অভিনয় করেছি এবং রীতিমতো অভিনেতা হবার স্বপ্নও দেখেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুটির কোনোটাই হতে পারিনি। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে জিডি পাইলট হবার জন্য যা যা করণীয় সব করেছি। বাবাও চেয়েছেন সেটাই যেন হয়। তবে মা রীতিমতো জায়নামাজে বসে পরম করুণাময়ের কাছে চেয়েছেন আমি যেন জিডি পাইলট না হতে পারি। পরে আইএসএসবি শেষ করে বাড়িতে আসতে না আসতেই খবর এলো আমি সুইডেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। সবকিছু ফেলে ঝড়ের গতিতে এসে হাজির হলাম সুইডেনে।

এখানে আসার পর প্রথম দিকে অনেক কিছুতেই জটিলতা ছিল। যেমন নিজের সব কাজ নিজেকেই করতে হত। কাপড় পরিষ্কার থেকে শুরু করে রান্না করা, সুইডিশ ভাষা শেখা, নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাড় করা ইত্যাদি। প্রথম দিকে বাংলাদেশের তুলনায় শতগুণ বেশি কষ্ট করতে হয়েছে।

দেশের ভালো সুযোগ সুবিধাগুলো ছেড়ে হঠাৎ বিদেশে আসাটা ছিল নদীর মতো দিশাহারা এক জীবন। পরে সময়ের সাথে সাথে সব কিছু অ্যাডজাস্ট করতে শুরু করি। জীবনের নতুন উদ্দেশ্যগুলো একের পর এক পূরণ হতে থাকে। যেমন লেখাপড়ার পাশাপাশি বিশ্বভ্রমণ করার সুযোগ, নানা দেশের বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে উঠাবসা ইত্যাদি।

কথায় বলে জিরো থেকে হিরো, বাস্তবে যার জীবনে এটা ঘটেনি তাকে বোঝানো যাবে না। শুধু এতটুকু বলবো সেই সময়টি ছিল ওয়ান্ডারফুল। ছাত্রজীবন শেষ হতেই চাকরি জীবন শুরু হলো। হোয়াট অ্যান এক্সাইটমেন্ট! গ্নোরিয়াস ক্যারিয়ার অপরচুনিটি সাথে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যা আমাকে একজন ইন্ডাস্ট্রি প্রভাইডার হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

মাল্টিকালচার, গ্লোবালাইজেশন, এগ্রি টু ডিজএগ্রি কনসেপ্টে বিশ্বাসী হওয়া, লার্নিং বাই ডুইং, লার্নিং ফ্রম লার্নার এবং শেয়ার ভ্যালুর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমার লাইফ স্টাইল। স্বাভাবিকভাবেই সব সময় চেষ্টা করেছি শতভাগ ডেডিকেটেড এবং মোটিভেটেড হয়ে কাজ করতে।

আমার বিয়ে-শাদির ব্যাপারটাও ছিল আকস্মিক। কোনো প্লান প্রোগ্রাম ছাড়াই হঠাৎ হবু বধূর সঙ্গে পরিচয়। পরবর্তীতে বাবা এবং মা বাংলাদেশ থেকে সুইডেনে আসলেন আমার বিয়ে বন্ধ করতে। অথচ এখানে এসে তাকে পছন্দ করে ইসলাম ধর্মানুযায়ী বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। সাত সমুদ্র তেরো নদী পারে আমি ভালো বাসিলাম তারে। কোথায় বাংলাদেশ আর কোথায় সুইডেন।

পরবর্তীতে আমাদের কোলে এলো প্রথম সন্তান জনাথন। সে বয়সভিত্তিক ফুটবল এবং টেনিস খেলতে শুরু করলো। সুইডেনে জুনিয়র টেনিস এবং ফুটবলার হিসাবে নাম করতে শুরু করল। হঠাৎ তার আগ্রহের পুরোটাই টেনিসের উপর চলে গেল। কয়েক বছর পর কন্যা সন্তানের জন্ম হলো। সেও তার ভাইয়ের মতো টেনিস খেলার পথ বেছে নিল।

দুজনই শতভাগ সময় দিয়ে ইউরোপে বয়সভিত্তিক টেনিসের পরিচিতি লাভ করতে শুরু করলো। তাদের আগ্রহ এবং প্রতিদিনের অনুশীলনের ওপর সর্বাঙ্গীণ সাহায্য করে আসছি আমি এবং আমার স্ত্রী। তবে হ্যাঁ আমি ভেবেছি তারা যদি বাংলাদেশের হয়ে খেলে তাহলে দারুণ হবে।

হঠাৎ তারা দুজনই বলে দিল, বাবা আমরা বাংলাদেশের হয়েও টেনিস খেলতে চাই, তুমি ব্যবস্থা কর। আমি তাদের পাসপোর্ট করা থেকে শুরু করে যা যা করণীয় করতে শুরু করেছি। প্রতিদিনই নতুন ঘটনা ঘটে চলছে একের পর এক। জীবনে এ পর্যন্ত যা ঘটেছে তাতে মনে হচ্ছে যা হবার তাই হবে। সে ক্ষেত্রে চলার গতিকে থামানো যাবে না, এটা চলতে থাকবে। তবে স্রষ্টা এবং ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। সর্বোপরি সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, বিশ্বাস এবং আস্থা দিতে পারে জীবন চলার সঠিক রাস্তা।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড