মাহবুব নাহিদ
বাহ্যিকতা: ক্যাম্পাসে প্রথমে গিয়েই আমরা যে ধরনের অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করি সেটাই সকলের মনে গেঁথে যায়। বিশেষ করে শিক্ষকদের চোখে পড়ে। একজন ছাত্রের যদি প্রথমেই পড়ুয়া ভাব বা জ্ঞান পিপাসু ভাব দেখা যায় শিক্ষকরা তাদেরকে ভালো চোখে দেখে। তাই প্রথমেই নিজেকে খারাপভাবে প্রকাশ না করাই ভালো। অনেকেই নিজেকে জাহির করার চিন্তায় উঠেপড়ে লেগে যায়। নিজেকে সকলের কাছে জানান দেয়ার জন্য নানান কৌশল অবলম্বন করে। কৌশল অবলম্বন করা হোক সেটা ব্যাপার না। কিন্তু সেটা যেন খারাপ দিক দিয়ে না হয়। ছেলেটা দেখতে দারুণ এটাও যেমন সকলকে চেনানোর মন্তব্য আর ছেলেটা চরম এলোমেলো এটাও চেনানোর উপায়। বেছে নিতে হবে নিজেকেই যে আমি কোন পন্থায় যাবো।
রুম-রুমমেট: কার সাথে রুমে উঠবে আর কোন রুমে উঠবে এটা বড় একটা সিদ্ধান্ত। কারণ নিজের রুমের আশেপাশে ভালো লোকজন না থাকলে বা রুমমেট ভালো না হলে চরম বিপদ হয়ে যায়। এমনকি বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। অনেক সময় নিজের রুম নিজে পছন্দ করার সুযোগ থাকে না। তবে যদি সুযোগ থাকে তবে সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে। অবশ্যই রুমমেট অপরিচিত হলে সে মাদকাসক্ত কিনা আর আগের পরীক্ষার রেজাল্ট জেনে নেওয়া ভালো। প্রথমে এই দুইটা জিনিস জেনে নিলে অনেকটা সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর যদি রুম বা রুমমেট নিজের পছন্দ করার সুযোগ না থাকে তাহলে ওঠার পরে জানতে হবে রুমমেটদের অবস্থা। যদি মনোপুত না হয় তবে পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে।
পোষাক: পোষাক মানুষের ব্যক্তিত্বের অন্যতম বড় একটা পরিচয়। অনেকেই ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রঙ লাগিয়ে কিছু পোষাক পড়া উচিত। কিন্তু ফ্যাশন করতে গিয়ে অনেকেই কুরুচিপূর্ণ পোষাক পড়ে সকলের কাছে ভিন্নভাবে নজরে আসে।
বন্ধু: বন্ধু অনেক বড় একটা বিষয়। মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম দ্বারা চরমভাবে প্রভাবিত হয়। বন্ধুর কারণে কেউ হয়ে যেতে পারে মাদকাসক্ত কিংবা কেউ হয়ে যেতে পারে ক্লাসের সেরা ছাত্র। তাই বন্ধু নির্বাচনে হওয়া উচিত সতর্ক। অনেকে আবার ছেলে হলে মেয়ে বন্ধু কিংবা মেয়ে হলে ছেলে বন্ধু বানিয়ে ঘোরাঘুরি আর মজামাস্তিতেই সময় নষ্ট করে ফেলে।
বড়ভাই: ভার্সিটিতে গিয়ে বিভিন্ন কারণেই সিনিয়রদের সহযোগীতার প্রয়োজন পড়ে। অনেক বড় ভাই বা আপুরা বলবে পড়াশোনার কোনো দরকার নাই। পরীক্ষার আগের রাতে পড়েই ভালো রেজাল্ট করা ইত্যাদি। বুঝতে হবে এরা নিশ্চিত অপরাজনীতি কিংবা মাদকের দিকে ঠেলে দিবে। বড় ভাই বা বোন নির্বাচনেও হতে হবে বিশেষ সতর্ক।
ক্লাসরুম: ক্লাসরুমে নিজের প্রবেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই ভাবে ক্লাসে কিছুই হয়না। সামনে বসলে মজা নেই। স্যারের কথায় উত্তর দেয়া ঝামেলা বা স্যারকে প্রশ্ন করা ঝামেলা। এরাই বিপদে পড়ে থাকে। তাই ক্লাসরুমে নিজেকে পজেটিভ হয়ে উপস্থাপন করতে হবে।
অবহেলা: অনেকেই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গায়ে বাতাস লাগিয়ে চলে। পড়লে পড়লাম, ক্লাস করলে করলাম, পরীক্ষা ইচ্ছা হলে দিলাম, পড়ে দিলাম কি না পড়ে দিলাম তার কোনো খোঁজ থাকে না। এসবই ডেকে আনতে পারে বিপদ।
সহশিক্ষা: অনেকেই শুধু দিনরাত পড়াশোনার মাঝে ডুবে থাকে। কিন্তু পড়াশোনার মাঝে বিনোদন এবং বিভিন্ন স্কিলের জন্য প্রয়োজন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকা। তবে সেটা আবার পড়ালেখা বাদ দিয়ে নয়। অনেকেই সহশিক্ষাকেই মূল কার্যক্রম বানিয়ে ফেলে।
খাওয়া-দাওয়া: ভার্সিটিতে নতুন গিয়েই খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম করে অনেকেই বাঁধিয়ে ফেলে বিভিন্ন রোগ৷ তাই প্রথম থেকেই খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
নিজের সিদ্ধান্ত নিজে না নেওয়া: যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা নতুন সেহেতু কোনো একটা সমস্যায় পড়লে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা দ্বিধান্বিত হবো এটাই স্বাভাবিক। অন্যের কাছে পরামর্শ চাইতে হবে, বিশেষ করে বড়দের। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে জীবন টা তো ভাই আমার। যে কেউ একটা পরামর্শ দিলো আর আমি তাতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম তা হবে না। অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজের মনের কাছে জিজ্ঞেস করে। নিজের মন যেটা বলবে সেটা করাই ভালো। তাহলে পরে আফসোসের জায়গা থাকবে না। অন্য কেউ হয়তো ভালো পরামর্শ দিচ্ছে বলে মনে হতে পারে। তাহলে নিজেই একটু তার পরামর্শের feasibility analysis করা যেতে পারে। সমস্যাকে ধরে তার প্রতিকার যোগ করে কি কি ফলাফল আসতে আসতে পারে তা একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে নেয়া উচিত।
রিলেশন:
অনেকেই মনে করে, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি একটা প্রেম না করলে কেমন দেখায়! এটা একদম ফালতু চিন্তা, এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি এখন নিজের ক্যারিয়ার গোছানোই আমার মূল লক্ষ্য হবে, অন্য কিছু নয়। বাকি সব পরে দেখা যাবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড