মোঃ সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা একই সূত্রে গাঁথা তিনটি শব্দ। এই তিনটি শব্দ অবিচ্ছেদ্য এমন এক স্বত্তা যা বাঙালি জাতির অস্তিত্ব। বঙ্গবন্ধু জন্ম না নিলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি হতো না। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রাম ছিল বাঙালির মুক্তি আর গৌরবময় পরিচয় প্রতিষ্ঠা।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের ২৪ বছরের ইতিহাসে ১২ বছরই তাঁর পাকিস্তানের জেলে কেটেছে তবুও তিনি বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে কোন আপোষ করেননি। ২৫শে মার্চ কালো রাতে মৃত্যু হতে পারে জেনেও পালিয়ে গিয়ে বাঙালি জাতিকে ছোট করেননি। বাঙালি জাতির আত্মসম্মান তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। এছাড়া বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তিই ছিল তাঁর মূল রাজনৈতিক দর্শন। গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন তেমনি শোষণহীন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যও তিনি সংগ্রাম করেছেন। এমনকি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই তিনি জীবন দিয়েছেন। এক কথায় বলা যায় বাঙালির সার্বিক মুক্তিই তাঁর রাজনৈতিক দর্শন। আর স্বাধীন রাষ্ট্র ছাড়া এই মুক্তি কোন অবস্থাতেই সম্ভব ছিল না বলেই তিনি হাজার বছরের পরাধীন একটি জাতিকে ধীরে ধীরে সংগঠিত করে, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এবং বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও নিজের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচল থেকে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পথচলার সূচনার বিষয়ে আলোচনা করতে হলে বলা যেতে পারে যে, মূলত ইংরেজ শাসন আমলেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মুক্তি। তিনি আশা করেছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোতে হয়ত তা সম্ভব হবে। তাই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর পরই যখন ভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানিদের সাথে বাঙালিদের বিরোধের সূত্রপাত হয় এবং তখনই তিনি বুঝতে পারেন পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোতে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলীমলীগ প্রতিষ্ঠা করেন বাঙালি মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। যা ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগ নামে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয় ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেয়।
বাল্যকাল থেকেই তিনি যে রাজনৈতিক দীক্ষায় দীক্ষিত হয়েছিলেন, সেটি সব সময় ছিল মানুষের পক্ষে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন মানব মুক্তি আর শোষণহীন সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার। তার চিন্তা জগতের অপরিহার্য ছিল, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানি শোষণ থেকে মুক্তি। বঙ্গবন্ধুর এই মুক্তির আন্দোলনের শুরু হয় ১৯৪৭ সালের পর থেকেই যদিও চূড়ান্ত রূপটি আসে আরও পরে। সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর থেকেই এক নতুন অধ্যায়ের পথে যাত্রা শুরু করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। কেননা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও বাঙালি তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লাভ করতে পারেনি।পাকিস্তানি শাসকদের বিরামহীন বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয় বাংলার কোটি কোটি জনতা।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে বঙ্গবন্ধুর নাম। ৭৫–এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বহু আগেই পৌঁছে যেতো উন্নত বিশ্বের কাতারে। কিন্তু দেশি–বিদেশি চক্রান্ত বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নকে রক্তাক্ত করে দিয়েছে।তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম একটি ইতিহাস। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় এর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে হয়-
"যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।"
আজও তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে অসাধারণ হয়ে রয়েছেন এবং থাকবেন চিরদিন।
লেখক : মোঃ সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার, সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড