মাহবুব নাহিদ
এক সময় আমাদের দেশে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হতো। সোনালী আঁশ অবশ্য এখনো বলা হয় কিন্তু পাটের সেই জৌলুশ হারিয়ে গেছে একদমই। এক শ্রেণীর অসাধু মানুষের জন্য হারিয়ে গেছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই ক্ষেত্র। পাটের উপর যেমন কুনজর লেগেছিল ঠিক তেমনইভাবে খারাপ নজর পড়েছে চামড়ার উপরে। চামড়া শিল্পে আমরা ভালোই আগাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ থমকে গেছে এই ক্ষেত্রও। ব্যবসায়িক যেকোনো ক্ষেত্রে লাভ থাকবে লোকসান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। লাভ আর লোকসান একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। ব্যবসা করে শুধু লাভের আশা করা যেমন ঠিক নয় তেমনি ২০০ কিমি গতির গাড়িকে যদি আচমকা ব্রেক করা হয় তবে তা উল্টে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের চামড়া শিল্পের অবস্থা তাই হয়েছে। কোনো ধরণের কোনো বিপদসংকেত ছাড়াই একদম মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে চামড়া শিল্প।
চামড়া শিল্পের পতনের শুরুটা গত বছরই হয়। গত বছর ব্যবসায়ীরা অধিক দামে চামড়া কিনে রাখেন। কিন্তু চামড়ার দাম না পাওয়ায় পরে চামড়া ফেলে দিতে হয়েছে বা নষ্ট হয়েছে। গত বছরের প্রায় ৭০০ কোটি টাকার চামড়া অবিক্রিত রয়েছে। ট্যানারি মালিকদের থেকে টাকাও সব বুঝে পায়নি ব্যবসায়ীরা। তার মানে এবার যে ভরাডুবি হবে তা বোঝাই যাচ্ছিল স্পষ্টভাবে। এই বছর চামড়া নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না কারোই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিভিন্ন যেসব জায়গায় চামড়া দান করা হতো সেসব জায়গাগুলোও এবার চামড়া নেয়ার ব্যাপারে বিমুখ ছিল। নিজেদের ইচ্ছায় কেউ চামড়া নিতে যাবে না এমন অবস্থা। কিন্তু এমন হবার কারণ আসলে কী? চামড়া যেখান থেকে আসে সেখানের দামও বেশি আর যেখানে যায় তার দামও বেশি। মাঝখানে মোটামুটি গরীব টাইপের মানুষগুলো একটা ব্যবসা করে খেতো সেটা বন্ধ হয়ে গেল। এবার গোরুর চামড়ার দাম ছিল সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, আর খাসির চামড়ার দাম ২-১০টাকা যা আসলেই হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। অথচ গোরু বা ছাগলের দাম কিন্তু কমেনি। দাম প্রতি বছর বাড়তেই থাকে। ৫ বছর আগে যে গোরু দাম ছিল ৫০ হাজার টাকা সেই গোরুর দাম এখন কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু ৫ বছর আগে যে চামড়ার দাম ২০০০ ছিল তা হয়ে গেছে ২০০ টাকা। অর্থাৎ ব্যাপারটা কিন্তু একদম অস্বাভাবিক।
অন্যদিকে চামড়ার মূল্য যদি কমতে থাকে তাহলে চামরাজাত পণ্যের মূল্যও তো কমা উচিত। কিন্তু এখানেও হিসাবে গড়মিল। পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাহলে চামড়ায় কেন এই সমস্যা!
মূলত চামড়া শিল্পে আমরা একটা বৈশ্বিক রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছি। আমেরিকা, চীন আর ইউরোপের দেশগুলো হচ্ছে আমাদের ক্রেতা। ক্রেতারা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যার কারণে আমরা দাম পাচ্ছি না। তবে এই বছরের বিপর্যয়ের পিছনে করোনাও অনেকটা দায়ী। করোনার কারণে খুব সহজভাবেই বোঝা যাচ্ছিল যে বাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে, যেমন সন্দেহ করা হয়েছিল তার চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি ঘটেছে আসলে। তবে আমেরিকা যেহেতু চীনের থেকে চামড়া নিচ্ছে না সেহেতু আমেরিকার বাজারটা ধরার কিছুটা হলেও সম্ভাবনা আমাদের আছে। তবে একটা বিষয় হচ্ছে করোনা যতই থাকুক না কেন চামড়া কিনতে তো হবেই। যারা ব্যবসা আছে তারা কিনবে। কিন্তু খুব সূক্ষ্মভাবে দামতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আসলে আন্তর্জাতিক একটা সমস্যা। আমাদের রাস্তায় নামিয়ে ফেলার জন্য এই কাজ করা হয়েছে। আমাদের হাতে করার তেমন কিছুই নেই এখানে। এই একইভাবে পাটকে ধ্বংস করা হয়েছিল। চামড়া শিল্পও বন্ধের দিকে চলে যাবে এমন চলতে থাকলে। আমাদের এজন্য বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। বাহিরের ক্রেতার দিকে তাকিয়ে না থেকে যদি নিজেরাই প্রক্রিয়াজাত করা যায় সেটা হবে সুখকর। নিজেদের ব্যবস্থাপনার কারখানা গড়ে তুলতে হবে, হাতে নেওয়া যেতে পারে বড় কোনো প্রজেক্ট। এভাবে না চিন্তা করলে চামড়া শিল্প একদম হারিয়ে যাবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড