• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আশার ওপর ভরসা রাখতে হবে

  রহমান ‍মৃধা

২৯ জুলাই ২০২০, ১৬:৪২
অধিকার
রহমান মৃধা

Never stop believing in love and hope because miracles happen everyday– জীবন চলার পথে আশার ওপর ভরসা রাখতে হবে। কারণ প্রতিক্ষণই অলৌকিক ঘটনা ঘটছে। এখন এই আশাটুকু কী? শুধু কি ভরসা রাখলেই আশা পূরণ হবে? আশা করা, সেই অনুযায়ী কাজ করা এবং তার ওপর ভরসা রাখা হতে পারে জীবনের আশা পূরণের চাবিকাঠি।

জীবনে অনেকেই আশা করে যেমন লটারিতে এক কোটি ডলার জিততে চায়। জীবন ভরে আশা করলাম কিন্তু কখনও লটারির টিকিটটা কেনা হয়নি। অলৌকিকভাবে সম্ভব কি কোটি ডলার জেতা? আমি জানি না, কিছু না করলে কিছু ঘটে বা ঘটতে পারে কিনা!

হঠাৎ ছোট্ট একটি পাশের দেশ সম্পর্ক কিছু তথ্য জানলাম। দেশটির একদিক জুড়ে রয়েছে চায়না আরেকদিকে ভারত। মাঝখানে ছোট্ট এই দেশটির নাম ভুটান। বিশাল কিছু ঘটেছে বলে শুনিনি আবার কেউ যে না খেয়ে মরেছে বা হোমলেস তাও শুনিনি।

চিকিৎসার জন্য ভুটানের কেউ যেমন সিঙ্গাপুর, ভারত, থাইল্যান্ড, ইউরোপ বা আমেরিকায় ছুটোছুটি করে না। তারা তাদের সাধ্যমত যে চিকিৎসা পায় এবং দেয় তা সম্পূর্ণ রূপে ফ্রি। তাদের লক্ষ্য সবাই সুস্থ থাকা।

সেই ২০১০ সাল থেকে ভুটানে যেকোনো রকম তামাক ও ড্রাগ জাতীয় দ্রব্যের উৎপাদন, বণ্টন, বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ভুটান হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম ধূমপানমুক্ত দেশ। ভুটানের কথা "দেশের মূল সম্পদ নতুন প্রজন্ম এবং তাদেরকে সুস্থ রাখা।

ডাক্তার, হাসপাতাল, ক্লিনিকে ছুটোছুটি করার আগে রোগ প্রতিরোধের কার্যকরী উপায় বের করতে হবে। রোগের সাম্রাজ্যে বাস করে শুধু ল্যাব, ক্লিনিক, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করলে কিছুই হবে না। তারা বিশ্বাস করে দুর্নীতি এবং অসুস্থ জাতি সামনে আগাতে পারে না।

আরও পড়ুন : বৃদ্ধাশ্রমে স্বামী-স্ত্রীর মৃতদেহ, সেই ঘটনার সাক্ষী আমি

ভুটান ইকোলজি সিস্টেমে বিশ্বাসী। আমরা মুখে নিজেদেরকে টাইগার বলে বলে কে কার চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক তার প্রতিযোগিতা করছি। অন্যদিকে ঘুষ এবং দুর্নীতি করে দেশটির বারোটা বাজাচ্ছি। ভুটান আমাদের কত কাছে, কত সুন্দর তাদের চিন্তা চেতনা অথচ তা বাদ দিয়ে আমরা ভবঘুরে হয়ে মরছি।

শুধু যে ভুটান বিশুদ্ধ বাতাসের কলোনি তাই নয়, এখানে কেউই নিজের খাবারে নিজে বিষ মিশানোর চিন্তা করে না। কারণ তাদের চিন্তায় সবার আগে স্বাস্থ্য। যে কোনো ধরনের কেমিক্যাল প্রডাক্টের আমদানি এবং ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

ভুটানের আরেকটি অবাক করা সুন্দর দিক হলো তাদের "দ্য মিনিস্ট্রি অব হ্যাপিনেস" যা ২০০৮ সালে গঠিত হয়। উদ্দেশ্য কেউ যেন মানসিক অবসাদ, ডিপ্রেশন-হতাশায় আক্রান্ত না হয়। এগুলো যত বাড়বে, অশান্তি এবং নৈরাজ্য তত বাড়বে।

ভুটান নিজেদের জাপান, কানাডা, মালয়েশিয়া অথবা সিঙ্গাপুর বানাতে চায় না। ভুটান নিজেদেরকে ভুটান হিসাবেই দেখতে চায়। ভুটান আগামীতে পৃথিবীর সব দেশকে লোন দেবে বলে চিৎকার করে না। তবে নিজেরা যেন ঋণমুক্ত থাকতে পারে সেটার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

তারা কাজ করে বেশি, চাপাবাজি, বাটপারি, ধান্দাবাজি, দুর্নীতি করে কম। আমি সুইডেনে বসবাস করি তারপরও দেশটির সম্পর্কে জানতে পেরে খুব ভালো লাগছে। বেঁচে থাকার আশা যেমন বাড়ছে তেমন মনে হচ্ছে যদি বাংলাদেশ এমন করে অলৌকিকভাবে সুন্দর একটি বসবাসের দেশ হতো!

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমরা কম বেশি অনেক আকুতি করি বিশেষ করে অসুস্থ হলে। জীবনের শেষ সময়ে অনেকে বলে "আমার সব সম্পদ দিয়ে দিবো। শুধুমাত্র আমার কষ্টটা একটু কমিয়ে দাও! আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না।"

আমি কয়েকটি মানুষের বিপদের সময় তাদের পাশে থেকেছি। যেমন আমার সহধর্মিণী মারিয়ার বাবা-মা এবং বেংকত ভিংকিভস্তর সঙ্গেই থেকেছি। মারিয়ার বাবাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে গেল তখন মারিয়ার মা একা বাসায়। তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না।

হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে কাশি বেড়ে গেল মারিয়ার মার। মারিয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেদিন রাতে চলে গেল তার মায়ের কাছে। ভাবা হয়নি তখন কী হবে যদি আমরা সবাই করোনায় আক্রান্ত হই। আইসিইউতে ঘটনাক্রমে মারিয়ার বোনের মেয়ে রাধিকা শেষের দুইদিন তার নানীর পাশের রুমটিতে থেকেছে।

অথচ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে সেভাবে দেখি নাই। বাকি যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের খোঁজ নিতে তেমন কেউ আসেনি। আমরা প্রায় প্রতিদিনই চেষ্টা করেছি কখন কীভাবে কি করব তাদের জন্য। একবড় কঠিন সময়ে মারিয়া শুধু বলেছে “তোমরা বিশ্বাস হারাবে না এবং চেষ্টার ত্রুটি করবে না।” মারিয়ার বাবা-মার মুখে একবারও শুনিনি বলতে যে তারা মরতে চায় না। এই বিশ্বাসে শেষ পর্যন্ত একজন হেরেছে আরেকজন ফিরেছে।

এতসব ঘটে যাবার পরে হয়ত সবাই বলবে কার জন্য, কিসের জন্য এত প্রতিযোগিতা ও পরিশ্রম? আসুন মানবিক হই, বাস্তববাদী হই, দুর্নীতি ছেড়ে ভালো হই। সত্যিকার অর্থে যারা খারাপ তারা ভালো হয় বলে মনে হয় না। তারপরও সব সময় আশার ওপর ভরসা রাখতে হবে কারণ প্রতিক্ষণই অলৌকিক ঘটনা ঘটছে।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]
মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি মালার কোন সর্ম্পক নেই।
চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড