• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কী হবে এলিট হয়ে যদি মনুষ্যত্ববোধই না থাকে

  রহমান মৃধা

১৬ জুলাই ২০২০, ১৭:২৯
অধিকার

বিশ্বজোড়া পাঠশালা আমাদের যেখানে আমরা সবাই শিক্ষার্থী। তাইতো প্রতিদিন আমরা নানাভাবে শিখছি নতুন কিছু। প্রকৃতির বাইরে আমরা পরস্পর পরস্পরের থেকেও শিখি দৈনন্দিন জীবনের অনেককিছু। আমরা কারও ভালো কিছু দেখলে অনুপ্রেরণা পাই আবার জেলাসও হই। কেন যেন ভালো জিনিসের চেয়ে মন্দ জিনিস যা বারবার বলা হয় না করতে, না ধরতে, অথচ সেটার দিকেই আমরা আকৃষ্ট হই বেশি।

বর্তমানে দেশে কিছুসংখ্যক শিক্ষিত নামের দানব তার নিজ নিজ এলাকায় ভয়ংকর রূপ ধারণ করে সাধারণ মানুষের মাঝে কুশিক্ষার বিষ ছড়াচ্ছে। তারা নিজেদেরকে এলিট, জ্ঞানী, ক্ষমতাবান, শিক্ষিত মানুষের রূপ ধারণ করে সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এরা হঠাৎ নিজেদেরকে বড় ধরণের কিছু মনে করছে।

এদের চরণ গ্রামের মাটিতে তেমন পড়ে না। কারণ এলিট গ্রুপে উঠার কারণে সমাজের দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতেও তাদের লজ্জা লাগে। এদের প্রেস্টিজে ব্যাঘাত ঘটে তাই এরা নিজেদের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হতে উঠে পড়ে লেগেছে। অনেকে আবার প্রচার মাধ্যমে বিভিন্ন টকশোতে হাজির হয়ে সমাজের মানুষের কাছে নিজেদেরকে বড় কিছু মনে করছে। অথচ এতটা বছর পার হয়ে গেল তাদের নাম এর আগে অনেকে শুনিনি কখনও। হায়রে মানুষ জাতি শুধু নিজেকে নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে গেলি! কখনও ভাবলিনা গ্রামের মানুষের কথা, যাদের সঙ্গে ছোটবেলার দিনগুলো কেটেছে।

এদের পুঁথিগত বিদ্যা এবং দেমাগের দাপটে সমাজে এরা একটি বাউন্ডারি তৈরি করেছে। আমি ধিক্কার জানাই এদের । কারণ এরা পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের চারিপাশ ঘিরে কুশিক্ষার বেড়া দিয়ে নিজেদের নাম লিখেছে এলিটের খাতায়। এরা জীবনের সীমানাকে ভাগ করেছে। ইদানীং গ্রামের আনাচে কানাচে এরা ব্যাঙয়ের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে। এরা পরগাছার চেয়েও অধম যা এখন আগাছা হয়ে নিজেদেরকে উচ্চ মাপের শিক্ষিত দাবি করে গ্রামের মানুষের থেকে বাহাদুরি আদায় করার এক নতুন বাহানা তৈরি করেছে। এদের ধারণা সবাই এখন প্রতিনিয়ত তাদের ফুল দিয়ে পূজা করবে। কারণ এরা এখন মস্ত বড় অফিসার বা টিভির পর্দায় গিয়ে নিজেদেরকে বাহাদুর মনে করছে। আমার প্রশ্ন এসব এলিট দিয়ে আমাদের কী হবে? এরা তো আগাগোড়াই নিজেদের জীবনে সর্ব উচ্চ আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ করতেই সচেষ্ট থাকে। প্রয়োজনে অন্য কোনো ক্ষমতাধরের পদলেহন করতে হলেও তা করে থাকে। এরা নিজেরাই পরগাছা হয়ে বড় হয়। এরা এদের নিজেদের পরিবারকে নিয়ে এদের বিশ্বকে গড়ে। আমাদের জীবনের পরিবর্তন তো আমাদেরকেই করতে হবে, তবে কেন আমরা এসব পরগাছা মার্কা গুণধরদের নামে কীর্তন গাইব? এদের কি কোনো যোগ্যতা, সাহস বা মানসিকতা আছে অন্যদের পাশে দাঁড়ানোর? কুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যারা নিজেদেরকে এলিটের খাতায় নাম লিখাতে উঠে পড়ে লাগে, ছিড়ে ফেলতে হবে সে খাতা আর ভেঙ্গে ফেলতে হবে সে কলম।

অশিক্ষিত মূর্খ হয়ে বেঁচে থাকবো তবুও কুশিক্ষা গ্রহণ করে অমানুষ হতে চাই না, এটাই আমার মিনতি সবার কাছে। আমরা দরিদ্র মেহেনতি মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই তবু কুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনকে ভুলে যেতে চাই না। শিক্ষা যদি সুশিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় তবে ঘৃণা করতে হবে সেই শিক্ষাকে, ঘৃণা করতে হবে সেই শিক্ষার ধারক ও বাহক তথাকথিত এলিটদের। আর ঘৃণা করতে হবে এদের পদবিকে। আমরা নতুন শিক্ষার আলো পেতে চাই যে আলো করবে আমাদের ভালো।

গড়বে সৃজনশীল সমাজ আর দূর করবে কুশিক্ষার মুখোশধারী এলিটদের। খোলা নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে কখনও মেঘ, কখনও লক্ষকোটি তারাসহ গ্রহ-নক্ষত্র থেকে শুরু করে চাঁদ-সূর্য দেখি। মনে হয় কত জায়গা এখনও অপরিপূর্ণ রয়েছে। তখন ভাবি আমাদের জীবনও কী তাহলে আকাশের মত অপূর্ণতায় ভরা? আমাদের পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার আগে কতটা তার শূন্যতা পূরণ করতে পারব! খোলা আকাশ কি তাহলে আমাদের উদার হতে সাহায্য করছে? বায়ু তার গতির মাধ্যমে শক্তি তৈরি করে এবং আমরা সেটা অনুভব করি। আর এই শক্তি কি তাহলে কর্মী হবার মন্ত্র দেয় আমাদের জীবনে?

প্রকৃতি আমাদের নানাভাবে শিক্ষা দেয়। যেমন হিমালয় পাহাড় মনে করিয়ে দেয় যেন তার মতো বড় হই, খোলা মাঠ তার মতো খোলা হতে, সূর্য মন্ত্রণা দেয় যেন তার মত করে আপন তেজে জ্বলতে শিখি। চাঁদ শেখায় হাসতে এবং ভালোবাসার কথা বলতে। নদীর কাছ থেকে কীভাবে আপন বেগে চলতে হয় তা যেমন শিখতে পাই, ঠিক মাটির কাছে থেকে শিখি সহিষ্ণুতা। ঝরণা বয়ে চলার পথে যে শুর জাগায় তা আমাদের প্রাণ মুগ্ধ করে। এতো সব সুন্দর শিক্ষণীয় বিষয় থাকতে কেন আমরা কুশিক্ষায় শিক্ষিত এলিটদের পথচারী হব? এসো হে বন্ধু, এসো প্রকৃতির কাছে। আর দূরে থাকি তাদের কাছ থেকে, যারা বাবা-মার পরিচয় ভুলতে চলেছে। যারা শুধু নিজের স্বার্থে ব্যস্ত তাদের পিছে সময় না দিয়ে এসো মা, মাটি এবং মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট)
চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড