• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লকডাউন সমাধান নয়

  রহমান মৃথা

১৬ মে ২০২০, ২৩:২১
রহমান মৃধা
সুইডেন প্রবাসী রহমান মৃধা

টোকিওতে যখন গিয়েছি তখন দেখেছি সবাই তাজা মাছ খেতে পছন্দ করে। ছোট বড় যে মাছই হোক না কেন তাজা হতে হবে। দোকানে, রেস্টুরেন্টে ঢুকলেই দেখা যাবে জ্যান্ত মাছ ট্যাংকির পানির মধ্যে ছুটাছুটি করছে। লক্ষ্যনীয় যে সবগুলো মাছের মধ্যে একটি মাছ ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে, কিন্তু কেন তা তখন ভেবে দেখিনি।

আমেরিকার কার্লিফোনিয়াতে আমার বোন জলির বাড়িতে গেলে তার প্রথম কাজ আমাকে নিয়ে লংবীচ বা লসএঞ্জেলের আশেপাশে এশিয়ান সুপার মার্কেটে যাওয়া। সেখানে রয়েছে বাংলাদেশের মত পরিবেশে সব ধরণের কেনাকাটার ব্যবস্থা। তেমনটি রয়েছে লন্ডনের লাইম হাউজের পাশে সিলেটিদের বাংলাবাজারে।

এখন আমেরিকার মত দেশে মিঠা পানির তাজা মাছ কিনতে পারা এবং খেতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। প্রথমে কিন্তু আমেরিকাতে মিঠা পানির মাছ পাওয়া যেত না, তাই এসব দোকানের মালিকরা মাছের বিপুল চাহিদা পূরণ করার জন্য বড় ধরনের ফ্রিজে মাছ রাখায় ব্যবস্থা করে যাতে করে মাছগুলো না পচে। কিন্তু ফ্রিজে রাখা মাছ না পঁচলেও, তার স্বাদটি তাজা মাছের মতো আর থাকে না। মাছ খেতে গিয়েই তা বুঝতে পারা যায়। আমেরিকায় বসবাসরত জাপানিজরা ফ্রিজের মাছ খেতে নারাজ, ফলে সুপার মার্কেট গুলো বেশ চিন্তায় পড়ে গেল এবং নতুন সমাধান বের করে।

সুপার মার্কেট গুলো তাদের মাছ ফ্রিজের পরিবর্তে বড় বড় পানির ট্যাংক রাখতে শুরু করে। সমুদ্র, লেক বা নদীতে মাছ ধরার সাথে সাথেই সেগুলোকে ট্যাংকের পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়, ফলে মাছগুলো জীবিত থাকে। কিন্তু পানির ট্যাংকে রাখা মাছও বেশি দিন সজীব থাকে না। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দিনের পর দিন আবদ্ধ থাকার ফলে মাছগুলো টায়ার্ড ও নির্জীব হয়ে যায়! তাদের সজীবতা হারায়।

যারা মাছ পছন্দ করে তারা খাবার টেবিলে এই মাছগুলোর সাথে তাজা মাছের পার্থক্য বুঝতে পারে। তাই এই মাছগুলোকেও আমেরিকায় বসবাসরত বিদেশিরা অপছন্দ করতে শুরু করে। সুপার মার্কেট গুলো আবার সমস্যায় পড়ে গেল। শেষে তারা নতুন কল্পনায় সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে। তখন তারা মাছের ট্যাংকের মধ্যে ছোট একটি হাঙ্গর রেখে দেয়। হাঙ্গর ট্যাংকের ভেতরে থাকা মাছগুলোর জীবনকে চ্যালেন্জের মুখে ফেলে দেয়। তাই তারা জীবন বাঁচানোর তাগিদে ট্যাংকের বদ্ধ পানিতে ছুটে বেড়ায়, সতর্ক থাকে, এতে করে তারা আর আগের মতো নির্জীব হয়ে পড়ে না, সতেজ থাকে। আর এইভাবে সুপার মার্কেট গুলো তখন থেকে সতেজ মাছ বাজারে বিক্রি করছে। ঘটনাটি এক সুপার মার্কেটের ম্যানেজার বলেছিল। রহস্যটি জানার পর আমি ছোট বেলার অভিজ্ঞতার সাথে হুবহু মিল পেয়েছি। আমার বাবা প্রচুর কৈ, মাগুর, শিং মাছ কিনে বড় ব্যারেলের পানিতে ছেড়ে দিতেন। এসব মাছ এক সঙ্গে রাখতেন তাতে করে সবাই সবাইকে বিরক্তের মধ্যে রাখতো ফলে মাছের স্বাঁদ কিন্তু ভালোই থাকত এবং মাছ কখনও মরেনি।

আমি জলির ওখানে গেলে সেই তাজা মাছ গুলোই কিনি। খেতে খারাপ না, তাজা, তারপর অনেকদিন ট্যাংকিতে থাকে, যার কারণে ফার্মের মাছে যে গন্ধ তা টের পাওয়া যায় না।

তাহলে দেখা যাচ্ছে মানুষ জাতি যুগে যুগে সমস্যার সম্মুক্ষিণ হয়েছে এবং তার সমাধানও করেছে। জীবনে নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে আর আমরা এক্টিভলি কাজ করে তার সমাধান খুজে বের করব। ভয়কে জয় করব এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাব। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি সামান্য একটি ভাইরাস এসে আমাদের “ওয়েক আপ কল” দিলো। এখন আমাদের কাজ এর সমাধান খুজে বের করা। তা না করে যদি সারা বিশ্ব লকডাউনে মাসের পর মাস ঘরে থাকে তাহলে কি সম্ভব হবে সমস্যার সমাধান করা? কোভিড-১৯ আমাদেরকে তাগিদ দিচ্ছে টু ডু বেটার। বর্তমান বিশ্বে একটি জাতি শুধু কোভিড-১৯ এর মোকাবিলা করছে সঠিক ভাবে সেটা হোল ভাইকিং জাতি। এ জাতি বিশ্ব যুদ্ধ করেনি তবে কোভিড-১৯ এর যুদ্ধে নেমেছে। আমিও সেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছি জয় আমাদের হবেই ইনশাআল্লাহ। আমাদের পারফরমেন্স আরও ভালো করতে হবে। করোনার ভয়ে আতঙ্কিত হলে চলবে না বরং ক্রিয়েটিভ হতে হবে। মনে রাখতে হবে -Necessity is the mother of invention.

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড