রহমান মৃথা
কোভিড-১৯ যেহেতু একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই এলাকার বাইরে বা বিদেশ ফেরত লোকটিকে কিছুদিন একা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে তার থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে এবং কেউ যেন তাকে স্পর্শ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ইত্যাদি।
ছোটবেলা যখন কলেরা বা বসন্ত হয়েছে আমরা ঠিক এমনটি করেছি। অথচ এখন কেন সেভাবে করা বা বলা হচ্ছে না? আমার ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করলে মনে পড়ে, যার কলেরা বা বসন্ত হয়েছে আমরা তার কাপড়চোপড়-জিনিসপত্র, খাবারদাবার যাতে না ছুঁই তা বলা হয়েছে। তাকে একটা আলাদা ঘরে এমনভাবে রেখে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলতে হয়েছে যাতে অন্যরা কেউ আক্রান্ত না হয়।
যাইহোক এভাবে শহর-গ্রামের সব সাধারণ মানুষকে বোঝানোর কাজটা শুধু এখন সরকারের নয়। এ কাজ স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার। আমরা নিজেরাই এখনও উপলব্ধি করতে পারছি না এর ভয়াবহতা কী। বাংলাদেশের গ্রাম এবং পাশের চরাঞ্চলের মানুষ এখনো এই কঠিন বিষয়টা হেলা করে উড়িয়ে দিচ্ছে!
এখন এমন একটা সময় যখন দেশের গণমাধ্যম, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সব অঙ্গনের মানুষকেই দেশের মানুষের সুরক্ষায়-সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। গত একমাস আগে নহাটায় (উপজেলা মহম্মদপুর, জেলা মাগুরা) একটি কোয়ারেন্টিন সেন্টার আমরা পারাবারিক উদ্যোগে প্রস্তুত করি। এই ভেবে যদি গ্রামে কেউ দূরপরবাস বা অন্য শহর থেকে এসে ঢুকে পড়ে এবং তাকে যদি সন্দেহ করা হয় যে তার শরীরে করোনা পজিটিভ, তাহলে ১৪ দিন তাকে আলাদা থাকতে হবে এবং সেভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এটা করা হয়েছে আমাদের ইছামতি বিলের মাঝে নিরিবিলি এক স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানে। মূলত এই বিশাল বিল্ডিং তৈরি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য। পরে সেখানে ইংলিশ রেসিডেন্সিয়াল হাইস্কুল ছিল। প্রতিষ্ঠানটি পড়ে আছে বেশ কিছুদিন। যদিও সেখানে বসবাসের জন্য সমস্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে যেমন থাকা, শোয়াসহ বাথরুম, কিচেন, বিদ্যুৎ, পানি সব কিছুর ব্যবস্থা রয়েছে।
ঘটনাটি প্রাথমিক পর্যায়ে জানানো হয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে যেখানে ইউএনও পজিটিভ মতামতও দিয়েছেন। স্থানীয় একজন সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে একটি সংবাদ প্রচার করার জন্য সেন্টারটি পরিদর্শন করেছেন এবং পরে মাগুরার ডিসিকে জানিয়েছেন।
ডিসির অমত পোষণের কারণে বাকি কাজ স্থগিত করা হয়েছে। কী কারণে এমন দ্বিমত তা আমি জানতে পারিনি। তেমন কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি ডিসি মহোদয়ের নিকট থেকে জানতে না পারার কারণে কয়েকদিন আগে আমি দেশের গণমাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছি। গতকাল এলাকা থেকে ফোন এসেছে। একজনের করোনা হয়েছে সন্দেহে তার আশপাশ বন্ধ করা হয়েছে। এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বুঝতে পারছে না কী হবে এখন। গতকাল কর্তৃপক্ষ এসে বিভিন্ন জায়গা বন্ধ করে গেছে। আমার প্রশ্ন- কেন তাকে আলাদা রাখা হচ্ছে না? যেখানে সুযোগ রয়েছে? কেন সরকার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে না? আর কেনই বা বাঁধার সৃষ্টি করছে?
দেশ ও জাতির স্বার্থে বিষয়টির সঠিক তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আমরা দূরপরবাস থেকে যেখানে সাহায্য করছি কেন প্রশাসন সেখানে সাহায্যের হাত বাড়াতে অনীহা প্রকাশ করছেন? প্রশাসনের কাজই তো সমাজের দায়ভার নেয়া। সেই দায়ভার নেয়ার ভয়ে যদি প্রশাসন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে কী দরকার সে প্রশাসনের?
মাগুরার ডিসি মহোদয় যদি মনে করেন, কেউ যদি মারা যায় তখন তার ঘাড়ে দায়িত্ব পড়বে। দায়িত্ব তো এখনও পড়বে, যেহেতু তিনি ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। কিছু না করলেও দায়িত্ব তার ওপরই পড়বে। দায়িত্ব এড়াতে যদি সত্যিকারে এ বাঁধা বা অনীহা তাহলে নহাটার মানুষ কোথায় যাবে?
দেশের দুর্দিনে আমরা আমাদের নিজের প্রিয়জনদের পাশে দাঁড়াবো অথচ প্রশাসনের একাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবার পেছনে কী কারণ রয়েছে তা জানতে পারি কি?
দেশের মানুষের বিপদে আজীবন কাজ করে আসছি কখনও বাঁধা হয়ে কেউ দাঁড়ায়নি। হঠাৎ সেটাও এসেছে করোনা মহামারির সময়, কিন্তু কেন? কে এর উত্তর দিবে? আর কে এখন এলাকাবাসীর জীবনের দায়ভার নিবে তাদের বিপদে? কোথায় এখন প্রশাসন এবং তাদের সক্রিয় ভূমিকা কী বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড