মাহবুব নাহিদ
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ওই বাষ্প শকট চলে
বাবুসাব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
পৃথিবী জুড়েই দলিতদের বিপদের কোনো অন্ত নাই। সবার নজর উপরের দিকে। সবাই উপরে উঠতে চায় সবাই। কিন্তু এই উপরে উঠতে গিয়ে নীচতলার মানুষদের পিঠে পাড়া দিয়ে উঠতে চায়।
রবীঠাকুর বলেছিলেন,
এ জগতে চায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুঁড়ি ভুঁড়ি।
রাজার হস্ত করি সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
জগতে ধনীরা দিনদিন ধনী হচ্ছে আর গরীবেরা গরীব হয়েই যাচ্ছে। আমাদের হাজারটা কাজের খরচ বাঁধা থাকে কিন্তু রিলশাওয়ালাকে দুই টাকা বেশি দিতে গায়ে লাগে। ঘরের কাজের লোকদের দুই দশ টাকা বকশিস দিতে আমাদের কষ্ট হয়। তারা যেই প্লেটে ভাত খায় সেই প্লেট আমরা ছুঁয়েও দেখিনা। আমাদের মানসিক অবক্ষয় দিনদিন আরো ঘনীভূত হচ্ছে। সুযোগ পেলেই খড়গ চালানো হয়। সুযোগ পেলেই বেতন কেটে নেওয়া হয়। একটু এদিক ওদিক হলে গায়ে হাত তুলতে কারো বাঁধে না।
আজ মে দিবস বা বিশ্ব শ্রমিক দিবস। এই দিনটিও অন্যান্য দিবস পালনের মতোই শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। এই এক দিনেই সবাই মনে করে যে শ্রমিক বলে একটা কথা আছে। বছরের বাকি দিনগুলো এগুলো কেউ মাথায়ই আনে না। মাথায় না আনাই স্বাভাবিক, কারণ এসব মাথায় আনলে নিজেদের লস। নিজের ক্ষতি করে তো কেউ অন্যের লাভ করবে না। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করবে। তাদের দিকে আমরা একটু ভালোভাবে তাকাই না। তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা দেখি না।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পুরো বিশ্ব অচল হয়ে পড়েছে। পুরো পৃথিবী এখন লকডাউন। এখানেও বিপদ সেই নিচুতলার মানুষদের। তাদের উপরই গিয়ে পড়ে সব ঝামেলা। অনেকেই কাজ হারাচ্ছে। অফিস, আদালত কারখান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকের কাজই চলে গেছে। অনেকেই ঠিকমতো পাচ্ছে না বেতন।
আমাদের দেশের পরিস্থিতি যদি দেখি, এখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে এক ধরণের ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। একবার তাদের বন্ধ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার সরকার চায় গার্মেন্টস বন্ধ করে দেওয়া হোক কিন্তু গার্মেন্টস খুলে গেল। যেখানে মানুষের জীবন বিপন্ন সেখানে তারা পড়ে আছে ব্যবসা নিয়ে। কিছুদিন কারখানা বন্ধ থাকলে কী এমন ক্ষতিটা হতো সবার! তাদের টাকায় তো কম পড়তো না! মানুষের জীবন না বাঁচলে ব্যবসা দিয়ে কী হবে? সরকার তো তাদের প্রণোদনা দিচ্ছেই। তাহলে তারা কেন শ্রমিকদের নিয়ে মজা করবে? শ্রমিকদের তো প্রণোদনা দিচ্ছে না! মালিকরা যদি দেশের এই অন্তিমকালে মানুষের জন্য না ভাবে তাহলে কীভাবে চলে? এই সময় বরং শ্রমিকদের টাকা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিবে। এই সময় তারা মানুষের পাশে দাঁড়াবে। তা না করে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে। অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে শ্রমিকরা বেতনের জন্য রাস্তায় নেমেছে। এক মাস হয়েছে মাত্র, এর মধ্যেই বেতন কেন দিতে পারছে না? এগুলো কি দিতে পারছে না নাকি দিচ্ছে না? এই সুযোগে আরো কিছু টাকা পকেটে জমা হলো আরকি। সব জায়গায়ই নিচুতলার মানুষের বিপদ। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়, সেই ত্রাণ পাওয়া যায় চেয়ারম্যান, মেম্বারদের বাড়িতে। এখন যারা দিন আনে দিন খায় তারা কাজ করতে পারছে না, খেতে পারছে না। এই ত্রাণ তো তাদের অধিকার, তাদের দাবী। গরীবের হক নষ্ট করে সম্পদের পাহাড় চিন্তায় মগ্ন সবাই।
মে দিবসের প্রতিপাদ্য সবাই ভুলে গেছে। ৮ ঘন্টা কর্মদিবস কোথায় চালু আছে। বহু জায়গায়ই নিজেদের ইচ্ছামতো শ্রমিকদের খাটানো হয়। কিন্তু বেশি কাজ করার জন্য অধিক টাকাও পর্যন্ত দেওয়া হয়। খুব কম জায়গায়ই ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস আছে। বেশীরভাগ জায়গায় অবশ্য লিখিতভাবে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস আছে। কিন্তু কাগজে লেখা থাকলেও বাস্তবতা অনেক দূরে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের অধিকারের কথা, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের হকের কথা খুব বোঝা যাচ্ছে। অনেকেই সুযোগ বুঝে এদের পেটে লাথি মারছে যা সুযোগ পেলেই করে। কিন্তু মে দিবসের তাৎপর্য এটা ছিল না। মে দিবসের আসলের অর্থ আমাদের বুঝতে হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড