মাহবুব নাহিদ
খুব সহজেই আমরা এই শব্দটা ব্যবহার করে ফেলি৷ একজন ডাক্তারকে কসাই বলতে আমাদের বিন্দুমাত্র বাঁধে না। আমরা অতি জাজমেন্টাল একটা জাতি হয়ে উঠেছি। আমরা নিজেদের নিজেরা ঠিক রাখতে না পারলেও পরের ভালো মন্দ নিয়ে কথা বলতে খুব ভালো পারি। পরচর্চা আমাদের দারুণ একটা স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজে কিছুই করতে পারি না কিন্তু পারি বুলি আওরাতে।
ডাক্তার নামক পেশার মানুষদের আমরা খুব সহজেই বাজে কথা বলতে পারি, বলিও সচরাচর। কিন্তু এগুলো বলার আগে আমরা এর ভিতর বাহির কিছুই ভাবি না। ডাক্তারদের নিয়ে আমাদের নানান অভিযোগ আছে। তাদের বিরুদ্ধে নানান কথাও আছে। ডাক্তাররা বেশি টাকা রাখে, বিনা কারণে অপারেশন করে, মৃত রোগীকে আইসিইউতে রেখে টাকা নেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। হয়তো এমন কিছু ডাক্তার আছে যারা এগুলো সত্যিই করে, কিন্তু তাই বলে কি আমরা পুরো পেশাটাকে জাজ করতে পারি? কতিপয় মানুষের জন্য কেন সবাই কথা শুনবে?
বাংলাদেশের এমন কোন পেশা আছে যারা বলতে পারবে সেখানে কোনো দুর্নীতি নেই, যেখানে ঘুষ নেই, যেখানে অসদুপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ নেই! কোন পেশার মানুষ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যে তাদের পেশার মানুষ একশত ভাগ খাটি? কেউ পারবে না। এটা সম্ভব না। যারা ডাক্তারদের খারাপ বলছে তারা তাদের নিজেদের পেশায় কতটুকু সৎ? আসলে খারাপ তো অনেকেই হতে চায়, কিছু জায়গায় সুযোগ বেশি বলে তারা বেশি খেতে পারে। সুযোগ পেলে আমরা কেউই ছাড় দিব না। নিজের ভাগ ঠিকই বুঝে নিব।
তাহলে কি ডাক্তারদের মধ্যে খারাপ নেই? অবশ্যই আছে, খারাপ ভালো মিলিয়েই মানুষ। এটা তাদের পেশার দোষ না। যে খারাপ সে অন্য পেশায় গেলেও খারাপই করতো। যে ভালো সে সব জায়গায়ই ভালো।
আমরা কি কখনো ভেবেছি যে এই ডাক্তারদের কাছেই আমাদের অন্তিম সময়ে ছুটে যেতে হয়। তাদের কাছে গিয়েই আমাদের দুঃখের কথা বলতে হয়। আমরা সবাই যখন ছুটিতে বাড়ি চলে যাই তখিন ডাক্তাররা হাসপাতালে বসে থাকে কখন আমার মতো কেউ একজন অসুস্থ হয়ে যাবে, তাকে সেবা করার জন্য। সবার হয়তো থাকতে হয় না ঠিক, কিন্তু কাউকে তো থাকতেই হয়। এই পেশার তো ছুটি হয় না।
সারাবিশ্ব এখন করোনা নিয়ে আতংকিত। এখন পর্যন্ত কোনো মেডিক্যাল চিকিৎসা তৈরি হয়ে পারেনি। তবুও পৃথিবী জুড়ে ডাক্তাররা লড়ে যাচ্ছে নির্ভীকভাবে। অবশ্যই আমাদের এই যুদ্ধে অগ্রসৈনিক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবার অন্যান্য কর্মীরা। চীনে আমরা দেখেছি কীভাবে লড়াই করেছে ডাক্তার বা নার্সেরা। ইতালিতে তো কত ডাক্তার নার্স মারা গেছে। আমাদের দেশেও এখন পর্যন্ত যতটুকু যা হয়েছে ডাক্তাররা চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় অনেক অভিযোগ আছে। ডাক্তার রোগীর কাছে যায়নি বা অন্য অনেক কথা। এগুলো সমস্যা থাকবেই, এসব সমস্যাকে নিয়েই আমাদের আগাতে হবে। একটা জিনিস সত্যি যেখানে রোগটা ছোঁয়াচে তাহলে কীভাবে একজন ডাক্তার তার নিরাপত্তা সামগ্রী ঠিকভাবে না থাকলে রোগীর কাছে যাবে? আমি কি বাঘের খাচায় কখনো খালি হাতে যেতে রাজি হব?
ডাক্তাররা ইতিমধ্যেই এই যুদ্ধে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন। দুইজন ডাক্তার আমাদের থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে বিদায় পর্যন্ত নিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে পঞ্চাশোর্ধ ডাক্তার। তাই এখন আমাদের পিছনে ফিরে তাকানোর সময় না। এখন তাদেরকে দোষ দেয়ার সময় না। তাদেরকে মনোবল ভেঙে দেয়ার সময় এখন না। এখন আমাদের যুদ্ধের অগ্রসৈনিকদের সাহস যোগাতে হবে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের আছে ভালোবাসা। আমাদের আছে স্বাধীনতা যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনার শক্তি। তাই আমরা ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াই, তাদের সাহায্য করি, তাদের উৎসাহ যোগাই। আমরা তো ঘরে থাকছি, নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছি, তাদেরও তো পরিবার আছে। তাদেরও জীবন আছে, জীবনটা হাতে নিয়ে লড়াই করছে তারা। আসুন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ দুর্যোগ মোকাবেলা করি, কাঁদা ছিটিয়ে নয়।
( এ বিভাগে প্রকাশিত মন্তব্য একান্তয় লেখকের নিজস্ব)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড