শফিক মুন্সী, সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
করোনার প্রভাব জাতীয় দূর্যোগ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে মানুষের জীবনে৷ সংক্রমণ রুখতে সরকারি ভাবে সকলকে ঘরবন্দি থাকবার নির্দেশ এসেছে। এমন বাস্তবতায় সমাজের স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনে শুরু হয়েছে দুর্ভোগ।
তবে এই সংকটে হাত গুটিয়ে বসে নেই দেশের শিক্ষার্থী সমাজ৷ বিভিন্ন স্থানে সামাজিক দূরত্ব মেনেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তারা। দুর্ভোগে পরা মানুষদের জন্য জরুরী খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে আশপাশ জীবাণুমুক্ত করা ও সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করা হচ্ছে ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিক উদ্যোগে৷
বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া নিবাসী দুই বোন লিজা আক্তার পাপিয়া ও সাদিয়া রহমান লিমা। একজন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ও অন্যজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন। একটি উন্নয়ন সংস্থার গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা করে কিছু টাকা পেয়েছিলেন পাপিয়া। তা দিয়েই করোনা সংকট শুরু হলে ২০টি দুঃস্থ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন তারা ৷ পরবর্তীতে এলাকার পরিচিত অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত বাড়িতে বাড়িতে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করে চলেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ডাকসু সদস্য তিলোত্তমা শিকদার। দেশব্যাপী দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ হবার আগে নিজ শহর বরিশালে এসেছিলেন। দুর্যোগকালীন মুহুর্তে ঢাকায় ফিরতে না পারলেও পাশে দাঁড়িয়েছেন মানুষের। রোযার শুরু থেকে নিজ হাতে ইফতার বানিয়ে পেটের দায়ে বাইরে থাকা মানুষদের বিতরণ শুরু করেছেন৷ হিন্দু তরুণীর এমন মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করছে স্থানীয় গণমাধ্যম গুলো।
বরিশালের মেহেন্দীগন্জ উপজেলার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন "১৪'র ক্যানভাস"। ২০১৪ সালে সেখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাশ করা বন্ধুরা মিলে দাঁড় করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি৷ সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলিশা মুনতাজ।
তিনি জানালেন, লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত ২২ টি পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ২ কেজি ছোলা, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি চিড়া, ১ লিটার তেল ও আধা কেজি খেজুর। নিজেদের হাত খরচের টাকায় পুরো রমজান জুড়ে নিয়মিত এই সাহায্য কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ নিবাসী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বাহাউদ্দীন আবির৷ তিনি জানালেন, করোনা সংকট শুরু হলে এলাকার তরুণ সমাজকে নিয়ে গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন। সেই সংগঠনের মাধ্যমে প্রথমে এলাকাবাসীকে সচেতন করার কার্যক্রম শুরু করেন তারা।
এরপর সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে দানকৃত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এক হাজার দুঃস্থ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়৷ নিজেরা তৈরি করে বিতরণ করেছে জীবাণু নাশক স্প্রে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ এছাড়া সরকারি ত্রাণ তৎপরতায় স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকাও পালন করছে তারা।
এসব ঘটনার বাইরেও দেশব্যাপী বিভিন্ন ভাবে সংকটকালীন এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের নানা কার্যক্রমের খবর আসছে৷ ইতিহাস বলে মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের সমস্ত সংকটেই এমন দেশপ্রেমিক তরুণেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে৷ সৃষ্টি করেছে মানবতার অসাধারণ সব গল্প।এমন ভূমিকার কারণেই করোনায় মৃত্যুর মিছিল এখনো কেঁড়ে নিতে পারে নি আমাদের জীবনের জয়গান।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড