মাহবুব নাহিদ
করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবী এখন স্থবির হয়ে গেছে। সারাবিশ্ব এখন তথাকথিত লকডাউনের মধ্য আছে। করোনা ভাইরাস দিনদিন ভয়াল রূপ ধারণ করছে আমাদের বাংলাদেশেও। জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে নতুন করে যোগ দিচ্ছেন অনেকেই। কার্যত এখন সব পেশার মানুষই ঘরে থাকছেন। কিন্তু কিছু পেশার মানুষ আছে যারা কখনোই ছুটি পায় না বা যাদের কখনোই কাজ শেষ হয় না। বর্তমানে এই করোনা যুদ্ধে একদম সামনে থেকে লড়াই করছে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের লোকেরা। কিন্তু এরা ছাড়াও সাংবাদিকেরা কিন্তু কাজ করে যাচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই বিষয়ে কয়জন কথা বলছেন? সংবাদ না হলে আমাদের পেটের ভাত হজম হয় না। সংবাদ না হলে আমাদের সকালের শুরুটা ভালো হয় না। কিন্তু আমরা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কতটা ভাবছি? ইতিমধ্যেই ডাক্তারদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে। কয়েকজন ডাক্তার মারাও গিয়েছেন। সাংবাদিকদের মধ্যেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। সেগুলো নিয়েও কথা বলতে হবে। সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সকল খাতেই প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রণোদনা সংবাদ মাধ্যমেও যাতে করে আসে সেই বিষয়টি দেখতে হবে। আমাদের সাংবাদিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা আসলে কতটা নিরাপদ থাকছে? তারা যাদের সাথে মিশছে, যেসব এলাকায় যাচ্ছে, সেসব জায়গায় সংক্রমণ থাকতে পারে। এর মাধ্যমে তাদেরও করোনা আক্রান্ত হবার ভয় থাকে। যদি সম্ভব হয় সাংবাদিক যারা অন্তত মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে তাদেরকে পিপিই সরবরাহ করা যেতে পারে কিনা এটা ভেবে দেখা উচিত। মানুষের জন্যই তো নিয়ম। মানুষ না বাঁচলে নিয়ম দিয়ে কী হবে? আমাদের তো সংবাদ ছাড়া চলবে না। তাহলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
অফিস আদালত সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এর প্রভাব প্রভাব সংবাদ মাধ্যমেও পড়েছে। সকল মিডিয়াই তাদের কলেবর সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছে। অনেক পত্রিকা শুধু অনলাইনে খবর প্রকাশ করছে, অনেকেই তাদের পাতা কমিয়ে এনেছে, কেউ কেউ বিভিন্ন ফিচার পাতাগুলো বাদ দিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে অনেকেই এখন কাজের বাহিরে চলে গেছে। যদি কাজ না থাকে আর এই অবস্থা যদি চলমান থাকে তাহলে এরা অনেকেই চাকরিহারা হতে পারে। সকল প্রতিষ্ঠান কিন্তু কর্মীদের এভাবে বেতন দিতে পারবে না। পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ হিয়ে গেছে, বিভিন্ন উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তারা সংবাদ কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারবে না অনেকেই। এক্ষেত্রে সংবাদ কর্মীরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আসতে হবে। সাংবাদিকদের যে সকল সংগঠন রয়েছে তারা এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। সরকারের কাছে সাহায্য চাইতে হবে। অবশ্য শুধু সংবাদ কর্মীরাই যে বিপদে আছে তা কিন্তু নয়। সংবাদ মাধ্যমের মালিকেরাও ঝামেলায় পড়েছে। অনেকেই বাসায় হকার আসা বন্ধ করার জন্য পত্রিকা নেয়া বন্ধ করেছে। ব্যবসা বানিজ্যের অবস্থা ভালো না হওয়ায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না কেউ। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সাহায্য প্রয়োজন পুরো সংবাদ মাধ্যমেরই।
বর্তমান সময়ে কাজ করায় শুধু যে করোনার ঝুঁকি তা অবশ্য নয়। সাংবাদিকেরা এখন নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ত্রাণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটছে। দেশে মানুষের আসল চিত্রটা তুলে ধরাই সাংবাদিকদের কাজ। কিন্তু সত্য সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে যদি নিজেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাহলে তো অনেক বড় সমস্যা। অবশ্য এই সমস্যা সাংবাদিকদের সবসময়ই থাকে। কিছুদিন আগে কুড়িগ্রামের ডিসির ঘটনাই দেখা যাক। একজন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করার কারণে তাকে কী নির্যাতনটা করা হলো! এগুলো নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। সাংবাদিকদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না।
আর ৫৭ ধারা নামের এক ঝামেলা তো রয়েই যায়। সাংবাদিকেরা কাজ করে কোথায় শান্তিতে থাকতে পারে না। যেদিকে যায় সেদিকেই তাদের বিপদ। তাদের অবস্থা হচ্ছে জলে কুমির ডাঙায় বাঘ।
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। তবে সব জায়গায়ই কিছু খারাপ থাকবেই। ভালো খারাপ মিলিয়েই আমাদের এই পৃথিবী। সবাই একদম ভালো হয়ে যাবে না। তাহলে পৃথিবীতে কোনো সমস্যাই থাকতো না। তাই সাংবাদিকদের মধ্যেও খারাপ মানুষ রয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের খুশি করার জন্য, আমাদেরকে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সর্বদা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, রোদ-ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই করোনা যুদ্ধে আমাদের সাংবাদিকেরাও অগ্রগামী যোদ্ধা। তাদের নিরাপত্তা, আর্থিক নিশ্চয়তা সহ সকল বিষয় নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।
(এ বিভাগে লেখা সকল মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড