• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত কেন? 

  মাহবুব নাহিদ

০৫ এপ্রিল ২০২০, ২০:১৯
গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত কেন? 
গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত কেন? 

ভুল কখনো কখনো একবার ক্ষমা করা যায়। কিন্তু একই ভুল বারবার করলে তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ইতালি, ফ্রান্সকে দেখে শিক্ষা নিলাম না। তারা তাদের খেলাগুলো বন্ধ করেনি।পর্যটক আসা বন্ধ করেনি। ফলাফল যে কতটা ভয়ানক হয়েছে তা সবাই জানে। আমরা স্কুল বন্ধ চাইলাম, করে দেওয়া হলো, অফিস বন্ধ চাইলাম তাও করে দেওয়া হলো। কিন্তু আমরা কেন দলবেঁধে বাড়ি যাওয়া শুরু করলাম? সবকিছু তো আর সরকারের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সরকার তো এসে আমার সচেতন থাকার ব্যবস্থা করে দিবে না। শেষ কিছুদিন ধরে কিছুটা হলেও সকল কিছুই মোটামুটি কায়দায় ভালো মনে হচ্ছিলো। সেনাবাহিনী নামার পরে মানুষ রাস্তাঘাটে কম নেমেছে। যদিও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের এসব বোঝানো দুষ্কর। কিন্তু গতকাল ঢাকা শহরে যা হয়ে গেছে তা আসলেই লজ্জাজনক। এতদিনের প্রচেষ্টাকে ধুয়ে মুছে শেষ করে দেওয়ার জন্য একটা কাজই যথেষ্ট।

কেন এই গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত? এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কি বিজিএমইএ জানত না? তাদের সাথে কথা না বলেই কি এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে? যদি তাই নেয়া হয়ে থাকে তবে তারা আছে কি করতে? যদি তারাও জানে যে গার্মেন্টস খোলা হচ্ছে তাহলে জাতি আসলেই নির্বাক। কিছুই বলার থাকে না কারো। এমন হটকারিতায় সকলের মাথায় হাত। এটা আসলেই চরম নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ। এটা আমাদের জন্য বিশাল এক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। এই ভুলের জন্য আমাদের পরে মাথা চাপরাতে হতে পারে।

আজ থেকে পোষাক গার্মেন্টস খোলা। স্বভাবত কারণেই শ্রমিকরা সবাই ঢাকা বা গাজীপুর আসবে। তাদের তো বাঁচতে হবে। চাকরিতে যদি না আসতে পারে তাহলে চাকরি যাবে না এমন কথা যদিও বলা হয়েছে তবে ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় তো পাবেই। এই মুহুর্তে কাজে না আসলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এটা তারা সবাই জানে। তাই তো বাধ্য হয়ে পায়ে হেটে পন্যের গাড়িতে করে তারা ঢাকা কিংনা গাজীপুরে এসেছে। অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বিপদজনক হলেও সত্য সেখানে মানা হয়নি কোনো সামাজিক দুরত্ব, মানা হয়নি কোনো সতর্কতা কিংবা কোনো নিয়ম। হয়ত খুঁজলে ১০ শতাংশ মানুষের কাছে মাস্কও পাওয়া যাবে না। তারা হয়ত মনে করছে তাদের জীবন গেলে কোনো সমস্যা নেই। নিজের জীবন নিয়ে অনেকেই চিন্তা করে না। কিন্তু এখানে তো শুধু একা আক্রান্ত হবে না কেউ। মরলে তো সবাইকে সাথে নিয়ে মরবে। এভাবে অসচেতনতা আত্মহত্যার পাশাপাশি খুনেরও সামিল। এভাবে সকলের জন্য মরণ ঝুঁকি নিয়ে কাল এসেছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা।

এখন কথা হচ্ছ তাদের আসতে হলো কেন? বারবার বলা হচ্ছে এপ্রিল মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে আমরা আমাদের গার্মেন্টস আরেক সপ্তাহ বন্ধ রাখতে পারতাম না? যেখানে দিনমজুরের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে রাঘব বোয়ালদের না হয় কিছু লোকসান হতো। জাতির জন্য এই কলংক বয়ে আনার কি এমন দরকার ছিলো? দেশ ও জাতির মঙ্গলের কথা চিন্তা না করে গার্মেন্টস মালিকরা শুধুই নিজেদের ব্যবসার দিকে তাকালো, এটা তো হতে পারে না। অবশ্যই এই বিষয়টাকে সমন্বয় করার দরকার ছিলো আগে থেকেই।

হিসাব মতে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার ক্যান্সেল হয়েছে যা দশ ভাগও না। ব্যবসায় তো লাভ ক্ষতি থাকবেই, এটা স্বাভাবিক। সবসময়ই যে ব্যবসায় লাভ হবে তা তো নয়। এই দুর্যোগ কেটে গেলে এর চেয়ে বেশি লাভও তো হতে পারে। তবে কেন এভাবে মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গার্মেন্টস খোলা হলো? বায়ারদের কাছ থেকে সুবিধা নিবে, সরকারের থেকে প্রণোদনা নিবেন তবুও মানুষের জীবনের ক্ষতি করবেন এটা তো হতে পারে না। সরকার যেখানে ৫০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সেখানে কিসের এত তাড়াহুড়া? কথা ছিল শুধু যারা পিপিই বানায় তাদের গার্মেন্টস খোলা হবে। কিন্তু এভাবে সব কেন খোলা হলো? সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, গার্মেন্টস শ্রমিকরা সব চলে আসার পর এখন বলা হচ্ছে ১১ তারিখ পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ রাখতে। আর বিজেএমই যদি এই নির্দেশনা দিয়েই থাকে তাহলে গার্মেন্টস মালিকরা তাদের বাহিরে? তাদের এই নির্দেশনা কেন মানবে না? আর এখন যদি মেনেই নেয় তাহলে কী লোকগুলো আবার বাড়িতে চলে যাবে? ঘোষণা কি আগেই দেয়া যেত না? আগে থেকে বিষয়টা নিয়ে হোমওয়ার্ক করা যেত না? এই বিষয়গুলো অবশ্যই আগে থেকে খেয়াল করতে হয়। এসব সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তখনই আমরা সফল হবো। এই জায়গায় ভুল তো সবাই করবে। কিন্তু যারা ভুল করবে না তারাই সফলকাম হবে।

আর হ্যাঁ, ছুটি দিলেই বাড়ি যেতে হবে কেন? নিজেদের জীবনের কোনো মায়া নেই? নিজের কথা বাদ দিলাম, আমিন্যে বাড়িতে যাচ্ছে, সেখানে অন্য সবার জন্য শরীরে করে করোনা বহন করে নিয়ে যাচ্ছি না তো? হয়ত আমরা দেখতে পাচ্ছি না যে আমার শরীরে ভাইরাস আছে, এজন্য নির্বিগ্নে ঘুরে বেড়াতে পারছি। হয়ত আমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক ভালো তাই বলে আমার কিছু হচ্ছে না। কিন্তু আমার শরীরে বহনকারী ভাইরাস আমারই কোনো নিকটাত্মীয় যার শরীরে নানা সমস্যা রয়েছে তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে।

তাই আমাদের সকলেরই সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের আসলে বোঝা উচিত যে এখন আসলে এভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় নয়। এটা বড় একটা দুর্যোগ, এটা আনন্দের ছুটি নয়। এটা আমাদের বুঝতে হবে।

আর গার্মেন্টস মালিকদের বুঝতে হবে যে ব্যবসা জীবনে করার বহু সময় আসবে। এ জাতি তাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে। আজ এই শ্রমিকদের জন্যই তাদের ব্যবসা টিকে আছে। শ্রমিক না থাকলে মালিকের কি আর মূল্য আছে? তাদেরকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আমাদের ব্যবসা না করলেই নয়? আর যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আছে তারা কেন কাজের অবহেলা করবে? সবাই কেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকবে? তিনি একাই কি দেশ চালাচ্ছেন? তাহলে অন্যরা আছেন কি করতে?

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড