মাহবুব নাহিদ
পৃথিবীতে এমন সুযোগ খুব কমই আসে যে প্রত্যেক দেশ, প্রত্যেক দল, প্রত্যেক জাতি সবাই কিনা এক কাতারে। দল মত জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার একটাই চাওয়া করোনার বিদায় হতে হবে। এক্ষেত্রে কারো দ্বিমত নেই।
বিশ্ব অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে দিনদিন। পিছিয়ে পড়ছে আমাদের দেশের অর্থনীতিও। ইতিমধ্যেই দেশের সকল কিছুই বন্ধ অবস্থায় আছে। কিছু জরুরী প্রতিষ্ঠান ব্যতীত স্কুল কলেজ,অফিস আদালত সব বন্ধ হয়ে আছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেকে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা অনেক সমস্যায় পড়েছে। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের জন্য পথচলা কঠিন হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন সকলের এগিয়ে আসা।
সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর। এখন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা বেতন দিতে হিমশিম খেয়ে যাবে। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যাবে।
এখন বাড়িভাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে অনেকের জন্য। এই মুহূর্তে বাড়িভাড়া মওকুফ করা সময়ের দাবী হয়ে গেছে আসলে। বিচ্ছিন্ন ভাবে অনেকেই অবশ্য নিজের বাড়ির ভাড়া মওকুফ করেছেন। কিন্তু এটা সকলের করতে পারলে সুবিধা হবে। ঢাকা শহরে এমন দেখা গেছে যে করোনা সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাড়িভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন বাড়িয়াওয়ালা। নামি-দামি ফ্লাটেও বাড়িভাড়া মওকুফ করা হয়েছে। অনেকে বস্তি বাড়ির ভাড়া মওকুফ করেছেন। সেগুলো নিয়ে আবার ফেসবুকে ট্রল হয়েছে পর্যন্ত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে প্রয়োজন আসলে তাদেরই বেশি। যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের এক মাসের বাড়িভাড়া তাদের জন্য বিশাল অংকের টাকা। তাই এই সময় এসব নিয়ে ট্রল না করে মানুষকে উৎসাহিত করা দরকার। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে দেখা গেছে বাড়িভাড়া মওকুফ করার জন্য বলেছেন।
কিন্তু এটা তো আসলে জোর জবস্তির বিষয় নয়। এটা হতে হবে ঐচ্ছিকভাবে। আমাদের নিজেদের বিবেকে এটা আসতে হবে। আমাদের নিজেদের চিন্তায় যদি আসে সেটাই হবে আসল মানবিকতা। ধরা যাক, যার একটা ফ্লাট আছে সে নিশ্চয়ই কম টাকা পয়সার মালিক নয়। একটা ফ্লাট থেকে টাকা আসে তা দিয়ে তার কিইবা হয়! এক মাসের ভাড়া মওকুফ করে দিলে বাড়ির মালিকদের হয়ত একটু কষ্ট হবে। কিন্তু যাদের ভাড়া মওকুফ করে দেওয়া হবে তাদের কাছে ওই এক মাসের ভাড়ার টাকা অনেক বড় কিছু হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক বা দুই মাসের টাকা না দিতে হলে হয়ত তাদের সংসার ভালোভাবে চলবে। কিন্তু এখন যদি জোরপূর্বক ভাড়া দিতে হয় তাহলে অনেকের কষ্ট হয়ে যাবে।
মানুষের আবার সমস্যা আছে। আমাদের এক ধরনের বিশেষ রোগ আছে। এই ভাড়া মওকুফ দেওয়ার ফলে আমাদের সুযোগ নেয়ার রোগও দেখা দিতে অয়ারে। ভাড়া মওকুফ করার ফলে দেখা যাবে অনেকেই এইটাকে সুযোগ হিসেবে নিবে।৷ দুই মাস ভাড়া মওকুফ করলে, অনেকে দেখা যাবে তৃতীয় মাসের সময় গিয়ে নিজের সমস্যা না থাকলেও সুবিধা নেয়ার জন্য ভাড়া মওকুফ করার জন্য আবেদন করবে, এবং এটা হবেই। তবে অনেকের সমস্যাও হবে, তাও স্বাভাবিক।
সকল কিছুর উপরে আসলে মানবিকতা। এখন সময় আমাদের বিপক্ষে, এখন সময় একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর। হয়ত সবাই সবকিছু করে দেখাতে পারব না। কিন্তু যে যার অবস্থান থেকে দাঁড়ালে হয়ত আমরা এর চেয়েও বড় দুর্যোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারব। বাড়িওয়ালাদের উচিত তাদের পক্ষে সম্ভব হলে অবশ্যই দুই-এক মাসের জন্য বাড়িভাড়া মওকুফ করা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড