• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সবাই এখন এক কাতারে

  মাহবুব নাহিদ

২৭ মার্চ ২০২০, ১৯:০৮
ম্যাপ
সবাই এখন এক কাতারে

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সবাই সবার মতো। একেক জনের একেক মত। কারো সাথে কারো মিলে না। যে যার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ গরীব মানুষের কথা ভাবে না, কেউ অন্য কারো কথা ভাবে না। সবাই নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায় কিন্তু অন্যের ক্ষতি করে।সবাই পরিবেশের ক্ষতিতে নিয়োজিত। প্রযুক্তিতে বিশ্ব অনেক এগিয়েছে। পৃথিবীতে অনেক নতুন নতুন আবিষ্কার আসছে। কিন্তু সেই প্রযুক্তিকে আমরা ভালোর জন্য কতটুকু ব্যয় করেছি? আমরা ব্যস্ত ছিলাম নিউক্লিয়ার অস্ত্র, ক্ষেপনাস্ত্র বানাতে, আমরা ব্যস্ত ছিলাম যুদ্ধকৌশল আবিষ্কার করতে। সবাই ব্যস্ত ছিলো অন্যের গোপন তথ্য কীভাবে নিজের দখলে আনা যায় সেই তাড়নায়। আমাদের প্রযুক্তি ব্যস্ত ছিলো হ্যাকিংয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দেশ জাতিগত নিধনে ব্যস্ত ছিলো।

আমরা সবচেয়ে বেশি উপার্জন করিয়েছি নায়ক নায়িকাদের, উপার্জন করিয়েছি খেলোয়াড়দের। আমরা বিনোদন নিয়ে বেশি মাতামাতাতিতে ছিলাম। আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি, দিয়েছি যুদ্ধে!

আজ করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে। সকলের বক্তব্য এখন এক। সকলের মুখে এখনই একই কথা। সকলের এখন একটাই উদ্দেশ্য। কেউ এখন আর যুদ্ধের দামামা বাজায় না। এখন আর ক্লাব কিংবা নাইট পার্টিতে আহ্বান জানায় না। সবাই এখন ঘরে থাকতে বলে। যারা সৃষ্টিকর্তা আছে কিংবা নাই এই নিয়ে সবসময় গবেষণা করে তাদের কাছেই এখন শোনা যায় সৃষ্টিকর্তার গুণগান। সবাই সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই একটা সমাধানের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখন আর উইঘুরে চীনের নির্যাতন চলে না। কাশ্মীরে ভারতের নির্যাতন বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। দেশই এখন লকডাউন, একসময় শুধু তারা লকডাউন ছিলো। এখন বিশ্বের সবাই লকডাউন বুঝে গেছে, বুঝে গেছে বন্দীশিবিরের কষ্ট। আমেরিকা আর চীন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে।এখন তারা তা করছেই না। কাউকে দেশ বা পরবেশের ক্ষতি করতে দেখা যাচ্ছে বা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন অভিবাসীদের নিয়ে ব্যস্ত না, তিনি নতুন করে কাউকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা ভাবছে না, তিনি এখন নিয়ম করে ইশ্বরের নাম নিচ্ছে। সবাই যথেষ্ট বিনয়ী হয়ে গেছে। কেউ অহংকার দেখাচ্ছে না।

বিশ্বে প্রতি একশো বছরে একটি করে মহামারী হয়েছে। ১৭২০,১৮২০,১৯২০ আর এখন ২০২০। তাহলে তো বিজ্ঞানীদের এই ব্যাপারে আগেই সতর্ক থাকার কথা ছিলো। আমাদের গবেষণা ক্ষমতাকে বাড়ানো উচিত ছিলো। আমরা এতকিছু জয় করতে পারি ভাইরাসকে জয় করতে কেন পারি না? আমাদের কি সেই চেষ্টা আছে আদৌ? করোনা নতুন এসেছে তাই ভ্যাকসিন তো আগেই আবিষ্কার করা সম্ভব হবে না। কিন্তু আমাদের বর্তমানে যে কাজ চলছে তাতে নাকি অনেক সময় লাগবে। আমরা কেন এমন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করলাম না যার দ্বারা আরো দ্রুত কাজ করা সম্ভব হয়। কিন্তু এগুলো কিছুই আমরা করি না। আমরা খেলা নিয়ে ব্যস্ত, আমরা বড় বড় হেভিওয়েট সিনেমা বানাতে ব্যস্ত।

আসলে করোনা ভাইরাস কেন আসলো? কীভাবে আসলো? এটা নিয়ে কিন্তু অনেক ধরণের জল্পনা কল্পনার তৈরি হচ্ছে। আর এটা তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমাদের জানা মতে চীনের উহান থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। অনেকেই দাবী করছেন চীন নিজেই এই ভাইরাস বানিয়েছেন। এমন কিছু বইয়ের রেফারেন্স দিচ্ছেন অনেকে। এখন নাকি চীন ঔষধ বানিয়ে আবার আবার বিশাল ব্যবসার খাত তৈরি করবে। অনেকেদের আবার দাবী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ভাইরাস বানিয়েছে আর ছড়িয়ে দিয়েছে চীনে? এমনটা করে তাদের লাভ কি? বিশ্লেষকদের মতে, চীনকে ব্যবসায়িকভাবে হেনস্তা করার জন্য তাদের এই পন্থা। আর উভয়েই দেখা যাচ্ছে একে অপরকে দ্বায়ী করছে। এদিকে অনেক বিশ্লেষকদের দাবী এই ভাইরাস কোনো মানবসৃষ্ট ভাইরাস নয়।

সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, করোনার ঔষধ বা ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসার নোংরা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। কারণ আমরা বিপদ থেকে শিক্ষা নেই না। কারা আগে আনতে তারা হবে লাভবান। যদিও ঔষধ বা প্রতিষেধক এখন দোষের কিছু নয়। এখন যারা এই কাজ করতে পারবে তারা পুরো বিশ্বের আশীর্বাদ কুড়াবে।

কিন্তু সেই সুদিন কবে আসবে? কি হবে বিশ্বের পরিস্থিতি? কতগুলো লাশের উপর দিয়ে হেটে যাবে এই মরনঘাতী করোনা ভাইরাস?

আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে চীনের প্রতিরোধের ব্যাপারটা। তারা এমন কি করে ফেললো যে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে তারা। কোনো যাদু মন্ত্রের দেখা পেলো নাকি? নাকি গোপনে ঔষধ আবিষ্কার করে ফেলেছে? হতে তো পারে অনেক কিছুই, কিন্তু আসলে ঘটনা কি?

রহস্য হয়তো উদ্ধার হবেই, কারণ তারা কোন সাহসে এখন সিনেমা হল পর্যন্ত খুলে দিতে চাচ্ছে? তারা এতটা নিশ্চিত কীভাবে হয়? এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো যদি কিন্তু আছে। কিছু বিষয় আছে আসলেই সর্বদা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে। হয়তো তেমন কিছুই রয়েছে।

আর ইতালি, স্পেন আর ফ্রান্স কেন এত বিপদে পরে গেলো? ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা চীনকেও ছাড়িয়েছে। স্পেন আর ফ্রান্সও যেন সেই দিকেই আগাচ্ছে। অনেকের কাছেই প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে যে কেন এই তিন দেশের এমন অবস্থা। এটা আসলে খুব কঠিন কোনো বিষয় নয়। এই হিসাবটা খুবই সহজ, একটু মাথা খাটাইলে এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এই তিন দেশই হচ্ছে বিশ্বের মধ্যে ভ্রমণের জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা। সারা বছর এসব জায়গায় মানুষ ঘুরতে যায়। প্যারিস হচ্ছে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য স্বর্গপুরী। রোম হচ্ছে অবাধ চলাফেরার জন্য একটা দারুণ জায়গা। পাশাপাশি ইংল্যান্ডেও একই অবস্থা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ গিয়ে সেখানে জড়ো হয়। তারা এক হয়ে আমোদ ফুর্তি করে। এই দেশগুলোর কেউই এসব বন্ধ করেনি, অর্থাৎ গায়ে লাগায়নি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাইরাসের বাহকরা এসে ছড়িয়ে পড়েছে এসব দেশে। প্রথম যখন প্রাদুর্ভাব দেখা যায় তখনও তারা সচেতন হননি। সচেতন হলে এমনটা হয়তো হতো না।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে আমরাও ঠিক সেই ইতালির পথে আগালাম। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসলো আর আমরা তাদের বিনা পরীক্ষায় দেশে ঢুকতে দিলাম। অবশ্য আমাদের তো পরীক্ষা করার কিছু ছিলোই না। যাদেরকে উচিত ছিলো কোয়ারেন্টিনে রাখা, আমরা তা করলাম না। তাদের দিলাম ছেড়ে, তাদেরকে আমরা সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকতে বললাম। আসলে এমন এক কাজ করতে বললাম কিন্তু সেই কাজ সম্পর্কে তারা কেউ জানেই না। ঢাল নেই তলোয়ার নেই তারা হবেন নিধিরাম সর্দার। তারা মোটামুটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লেন আর সকলের সাথে মোলাকাত করতে লাগলেন। এমনকি অনেকে বিয়ে নামক পবিত্র কাজও সেরে ফেললেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকা একজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। এই হলো আমাদের অবস্থা। তাহলে গবেষকদের কথা অনুযায়ী আসলেই কি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মারাত্মক আকার ধারন করতে যাচ্ছে আমাদের দেশে? আর হ্যাঁ, গবেষকদের কথা সত্যি প্রমাণ করার দায়িত্ব আবার নিয়ে নিয়েছে আমাদের জনগণই। ছুটির খবর পেয়েই সবাই দল বেঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাড়ি যাওয়া শুরু করলেন। যাবেন না কেন? অফিস বন্ধ, গাড়ি চলে! এর চেয়ে দুর্দান্ত সুযোগ তো আর কিছু হতে পারে না। এমন দুরন্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার কীভাবে করতে হয় তা আমরা জানি।

আসলে সমাধান কোথায়? সমাধান আসলেই সৃষ্টিকর্তার কাছে। আর হ্যাঁ, তাঁর কাছে চেয়ে নিজে আবার যেমন খুশি তেমন সাজো অবস্থায় বসে থাকলে চলবে না। আমাদের নিজেদেরও কিছু করতে হবে। অন্তত নিজের ঘরে থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় উপায়।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড