• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমরা মানবিক বিশ্ব চাই, মারণাস্ত্রবাজদের বিশ্ব চাই না

  রহমান মৃধা

২৭ মার্চ ২০২০, ০০:৩০
রহমান মৃধা
সুইডেন প্রবাসী রহমান মৃধা

অনেকের গায়ে জ্বালা ধরে যখনই ১৯৭১ সালের কথা নিয়ে কিছু লিখি। কারণ কী জানি না। হতে পারে তাদের জন্মে রাজাকারের রক্তে বইছে তাই তাদের জ্বালা ধরে। আমি জানি তাদের জ্বালা ধরে তাই ইচ্ছে করেই ১৯৭১ সালের কথা লিখি, ভবিষ্যতেও লিখব।

মুক্তিযুদ্ধে গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছিল। যারা গেঞ্জি বা খালি গায়ে, খালি পায়ে, লুঙ্গি কাছা দিয়ে, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তারা দিনের পর দিন হেঁটে, না খেয়ে ভারতে গিয়ে, ক্যাম্পে থেকে, প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

কেউ গেরিলা যুদ্ধ করেছিলেন, কেউ সম্মুখে, চ্যালেঞ্জিং গেরিলা যুদ্ধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে যারা জীবন দিয়েছিলেন তারাই শহীদ, গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকেই না খেয়ে মরেছে। আবার অনেকে এখনো পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন।

অন্যদিকে অনেক কাপুরুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। আবার অনেকে শত্রুবাহিনীর দোসর হয়েছিল। তারা পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে, থানায় ও জেলায় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য হয়েছিল। তারাই মুক্তিকামী মানুষদের ধরে নিয়ে মেরে ফেলতো কিংবা পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দিত।

সেই দোসররাই দেশ স্বাধীন হলে আগে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের জন্য উতলা হয়েছিল, ব্যাকুল হয়েছিল। নিজেকে বাঁচাতে, নিজের অপকর্ম ঢাকতে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিল। শুরু হলো গালভরা গল্প বানানোর প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধের কল্পিত গল্প।

এর চেয়ে ওর গল্প বেশি চমকপ্রদ! সেই গল্পযোদ্ধারা হয়ে গেল "আসল" মুক্তিযোদ্ধা। তাদের কেউ কেউ বড়বড় পজিশনে গেল। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ছড়ি ঘোরালো, অনেককে মেরেও ফেলল। তাদের অনেকে আজ হয়েছে শহুরে-এলিট! তাদের অপকর্মে আমরা লজ্জায় মরি!

এখনো অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সাজার চেষ্টায় আছে। হোক তা অসদুপায়ে, অন্যায়ভাবে। এখন তারা তা করতে চায় মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কৃত অপকর্ম ঢাকতে নয়, বরং মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া সুবিধা লুটতে।

অথচ গ্রামের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ মানুষ, সেনাসদস্য, যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই নিশ্চুপ। মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের জন্য তারা দৌঁড়ায়নি। কারণ তারা সার্টিফিকেটের জন্য যুদ্ধ করেনি, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে তারা লড়েছিল।

রাজাকার, আল বদরদের মতো তাদের প্রাণের ভয় ছিল না। বড় বড় পদে যাবার, সম্পদের মালিক হওয়ার, নিজেদের জাহির করার, তাদের কোনো বাসনা বা উদ্দেশ্য ছিল না। পরে তারা অনেকে রোগে ভুগে না খেয়ে মরেছে, তবু নিজের মান-সম্মানের জন্য কারও কাছে মাথা নত করেনি।

জীবন দিয়ে, ইজ্জত-সম্ভ্রম খুইয়ে, অঙ্গ খুইয়ে, আমাদের এ দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন। সেই দেশ, সেই মানুষকে যারা অবজ্ঞা করে তারা কি মানুষ? যেসব রাজাকার, আল বদর এ দেশের বিরুদ্ধে, এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কু-কর্ম করেছিল, তাদের আমি ঘৃণা করি, তাদের মুখে এখনও থুথু মারি। যতদিন বেঁচে থাকি মেরেই যাবো।

কিন্তু আজ যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, দেশ-মানুষের সেবা করবে বলে ওয়াদা করে দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে, মানুষের সেবক হবে বলে শপথ নিয়ে মানুষকে ধ্বংস করছে, ঘুষ খাচ্ছে, দুর্নীতি করছে, যারা যোগ্য লোকদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য লোকদের চাকরি দিচ্ছে, দায়িত্বে অবহেলা করছে, সুবিচারের নামে অবিচার করছে, নারীর ইজ্জত লুটছে, অর্থের ক্ষমতার দাপটে চলছে, সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকছে, তারা কি রাজাকার, আলবদর, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির থেকে কম অপরাধী?

তাদেরকেও বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড় করানো উচিৎ। কিন্তু তাদের বিচার করবে কে? যারা ক্ষমতায় তারা তো নিজেরাই অসৎ এবং অসুন্দর মনের মানুষ। আল্লাহ আমাদের শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন সে ক্ষেত্রে তিনি জানেন যেকোনো সমস্যার মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত।

তিনি সমস্যা এবং তার সমাধান দিয়েই আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আমাদের কাজ সমস্যার সমাধান করা এবং ধীরে ধীরে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে নিজেদেরকে গড়ে তোলা। এখন নিজেদেরকে গড়ে তোলা মানে এই নয় পারমাণবিক, রাসায়নিক, জীবাণু অস্ত্র, উৎপাদন করে মানুষ মানুষকে ধ্বংস করবে। বরং উৎপাদনকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।

উন্নত দেশগুলোর মারণাস্ত্র ভণ্ডামি আমরা দায়হীন দেশগুলো নীরবে সহ্য করবো না। মারণাস্ত্রবাজ দেশগুলোর অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আমাদের বলতে হবে দানবের নয়, আমরা মানবের পৃথিবী চাই। সেক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধতাই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকারী রাষ্ট্রের দৌরাত্ম্যকে রুখে দিতে পারে।

বিশ্ববাসীর অনেক মানুষ এখন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো আচরণ করছে। তাই আমাদেরকে বলতে হবে, আমরা মানবিক বিশ্ব চাই, মারণাস্ত্রবাজদের বিশ্ব চাই না। সকল জীবের সেরা হিসেবে আমরা আমাদের অস্তিত্বকে পেয়েছি। সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যবহার, আচরণ সব কিছুতেই তেমনটি ফুটে উঠার কথা।

কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের ব্যবহারে অনেক সময় আমরা দানবের চেয়েও খারাপ রূপ ধারণ করছি। যখন সীমা ছাড়িয়ে ফেলি তখন যুগে যুগে মহামারি, কুষ্ঠরোগ, ন্যাচারাল দুর্যোগের মত ভয়ঙ্কর সমস্যায় পরি। অনেক ক্ষয়ক্ষতির পর নতুন করে বেঁচে থাকার সুযোগ পাই। ভালো হতে চেষ্টা করি। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।

করোনার মতো যা ধরা-ছোঁয়া যাবে না এমন ভয়ঙ্কর জীব এসে আমাদের নানাভাবে অতিষ্ঠ করে তুলবে। তখন আমাদের শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে আমরা মানুষ জাতি, আমরা ভয়কে জয় করতে এবং অজানাকে জানতে পারি।

আল্লাহ পাক কেন আমাদের শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছেন অন্যান্য জীবের কাছে? কারণ তিনি জানতেন আমরা পারব সব কিছুর মোকাবেলা করতে। সত্য একটি সহজ এবং কঠিন শব্দ, সত্য কথা যায় না বলা সহজে আবার সত্য কথা বলাও অতি সহজ।

আমি মনে করি সত্য কথা বলা সহজ মিথ্যা কথার চেয়ে, কারণ সত্য কথা বলার জন্য বুদ্ধি খাটানোর দরকার হয় না। সত্য বললে তা মনে রাখার দরকার পড়ে না, ডকুমেন্ট করা লাগে না, মনে ভয় বা আতঙ্কের সৃষ্টি হয় না, সত্যের মাঝে রয়েছে শুধুই সত্য। আমি চেষ্টা করি মন দিয়ে সত্য কথা বলতে যার কারণে নিজেকে গর্বিত মনে করি।

সৃষ্টিকর্তা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তাই তিনি সৃষ্টিকর্তা। বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীরা এই মহান অস্তিত্ব, সময়, স্থান, জীব, মহাকাশসহ সব কিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন তাকে স্রষ্টা নামে সম্বোধন করে।

সৃষ্টিকর্তা একটি অধিক ব্যবহৃত শব্দ যা মূলত আল্লাহ, বিধাতা, ভগবান, ঈশ্বর, ইলাহি, গড, নামে ব্যবহার করা হয়। ভাবা হয় এবং বিশ্বাস করা হয়, তিনি জাগতিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থানকারী কোনো অস্তিত্ব। ব্যবহারিকভাবে ব্যক্তিগত কীর্তি ব্যাখ্যা দিতেও সৃষ্টিকর্তা শব্দটি রূপক অর্থে ব্যক্তিক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপন হতেই অস্তিত্বশীল ও বিদ্যমান। স্বীয় অস্তিত্বে তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব ও বিদ্যমানতা অনস্বীকার্য। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বহীনতা বা অনুপস্থিতি অকল্পনীয় ও অসম্ভব।

সত্যকে সুন্দর করে তুলে ধরার মধ্যেও আনন্দ আছে, তাই সত্য কথাগুলো তুলে ধরলাম দেশের তরুণ প্রজন্মদের মাঝে। এই মনে করে তোমরা অগত্যা এখন কিছু না করতে পারলেও সময় যখন আসবে তখন কিছু করো, তবে তার আগে ঘৃণা করতে ভুলো না যারা এখনও দেশকে, বিশ্বকে এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীবকে ধ্বংস করছে তাদেরকে। ঘৃণা কর দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার এবং অসুন্দরকে।

করোনা ভাইরাসের ভয়ে সব ভুললে চলবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে যারা অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড