• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মধ্যরাতের পর আঁধার আর ঘনীভূত হয় না

  মতামত ডেস্ক

২৫ মার্চ ২০২০, ১৭:৪০
করোনা ভাইরাস
মোঃ গিয়াসউদ্দিন

যতই অন্ধকার নেমে আসুক অন্ধকারের বিপরীত পাশে আলো আসবেই, এই সত্যটি অনুধাবন করার জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান খুঁজতে হয় না। সাধারণ জ্ঞান দিয়েই তা অনুভব করা যায়। কিন্তু এই সাধারণ জ্ঞান দিয়েই সবসময় চলা যায় না। সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব পরিস্থিতির মাঝে মাঝেই বিশেষ পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ গোটা বিশ্বকে বিশেষ পরিবর্তনের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে।

তাই বিশেষ পরিবর্তনটা বোঝার জন্য প্রয়োজন বিশেষ জ্ঞানের। ফলে বিশেষ জ্ঞানকে অবহেলা করে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা যায় না। মানুষকে সচেতন করতে হলে বিশেষ জ্ঞানের ওপর বিশেষভাবে জোর দিতে হয় যাতে দুর্যোগ আসলেও মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

পুঁথি-গ্রন্থ পড়ে মানুষ রসদ সংগ্রহ করেছিল সভ্যতার পরিবর্তন ও বিবর্তনের। সভ্যতা পরিবর্তনের নিয়ম কানুন জেনেছিল, অনুভব করেছিল মানুষ। কিন্তু আজকে সভ্যতা পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণ যেন আমাদের চোখের সামনেই এসে দাঁড়াল।

মানবদেহে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা দেখা দিলে যেমন নানান রকম অশনি সংকেত দেখা দেয়, বিষফোঁড়ার মতো ভেসে ওঠে গোটা দেহে, ঠিক তেমনি পৃথিবী নামক গ্রহ নানান দূষণে যে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে তার হাজারো রকমের অশনি সংকেত ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে।

পৃথিবীর বাঁচার সাথে মানুষের বাঁচার প্রাসঙ্গিকতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পৃথিবীর জলবায়ু, আবহাওয়া, ভূপ্রকৃতি, মাটি, পানি, গাছপালা, পশু, পাখি তথা প্রাণিজগতের বাঁচার সঙ্গে আমাদের জীবন অঙ্গাঙ্গিকভাবে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জড়িত। প্রকৃতিই সর্বশ্রেষ্ঠ ধাত্রী যা আমাদের লালনপালন করে। প্রাণ প্রকৃতি বাদ দিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে না।

মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত মানুষ একটা গণ্ডগোল বাঁধিয়েছে। গণ্ডগোলটা হচ্ছে প্রকৃতি থেকে মানুষ নিজেদের আলাদা করে ফেলেছে। মানুষ যে প্রকৃতিরই অংশ তা তারা ভুলে গেছে। নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ বানিয়ে প্রকৃতিকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে, রীতিমতো অবহেলা করেছে পরিকল্পিতভাবে। প্রাণ প্রকৃতিকে ধ্বংস করেছে, বিশেষ করে বিশ্বের বড় বড় মোড়ল পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো চালিয়েছে ভূপ্রকৃতির ওপর অপরিকল্পিত আগ্রাসন।

অত্যধিক পরিমাণে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে পার পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লী, পারমাণবিক বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র, মরণঘাতী মোবাইল টাওয়ার, অপরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল উজাড় করে শিল্প কলকারখানা নির্মাণ, নদীর মাঝখানে বাঁধ নির্মাণ, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, ট্যানারি, রাসায়নিক কারখানার বর্জ্য পদার্থ পাইপ দিয়ে নদীতে নিষ্কাশন, অধিক মাত্রায় প্লাস্টিকের বোতলজাত পণ্য, পলিথিন সামগ্রীর ব্যবহার, ইট ভাটার ধোঁয়া, কলকারখানা এবং পরিবহনের ধোঁয়া যেভাবে বেড়েছে তাতে প্রকৃতির ওপর প্রতিনিয়ত একরকম নির্যাতন চলছে দুনিয়াব্যাপী।

শিল্প বিপ্লবের ২০০ বছর পরে সমুদ্রের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে, বেড়েছে বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা। স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ফরেস্টের মতে, বিশ্বের ১৭টি দেশের কৃষিজমি ও বনভূমি কমেছে মারাত্মক হারে। ভারসাম্যহীন প্রকৃতি তাই মাঝে মাঝেই বেগতিক হয়ে ওঠে। মানুষের অত্যাচার, অবিচারে প্রকৃতি আজ অতিষ্ঠ। প্রকৃতিকেই মাঝে মাঝে জানান দিতে হচ্ছে সে আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। ফলে প্রকৃতির নিয়মকানুন, প্রকৃতির নিজস্বতা, প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য যখনই মানুষ অবহেলা করবে তখনই মানুষকে তার খেসারত দিতে হবে অবশ্যম্ভাবীরূপে।

করোনা শুধু নয় হাজারো অসম দুর্যোগ সামনে আসবে যা মানুষ দেখতে পাবে। মানুষ এবং প্রাণিকুল বেঁচে থাকে প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মকে কাজে লাগিয়ে, প্রকৃতির নিয়মকে পরিবর্তন করে নয়। একারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৫ সাল থেকে দাবি করে আসছিলো যে, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি তথা উন্নত দেশগুলোতে হানা দিতে পারে ভয়ংকর মহামারি, সংকটে পড়তে পারে মানবসভ্যতা। এই সংকট প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি থেকেও ভয়াবহ। এমনকি প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষ মরেছে, তাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, করোনা এসে পাল্টে দিচ্ছে পৃথিবীর চিরচেনা চিত্রটাকে। লকডাউনের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বায়ুমণ্ডলে কমছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা। নিউ ইয়র্কের বায়ুমণ্ডলে দূষণের মাত্রা কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

এই সেদিনও ফেসবুকের সুবাদে দেখতে পেলাম, দিনাজপুরের রাস্তায় দিব্যি দৌড়াচ্ছে মানুষের চেয়েও বড় বড় উটপাখি। রাজধানী ঢাকার রাস্তার পাশে গাছগুলোতে আজ সবুজের সমারোহ কিছুদিন আগেও যার ওপরে পড়ে থাকত কয়েক হাজার টন ধুলোবালি।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই লকডাউন অব্যাহত থাকলে আগামী একবছরে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমে আসবে প্রায় ৪৫ শতাংশ। আগামী ছয় মাসের মধ্যে হিমালয়ের বরফ গলা বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষ প্রাণ-প্রকৃতির সবুজ সমারোহে ভাসাবে নিজের দেহমন।

প্রকৃতি আজ জানান দিচ্ছে তার নিজের ইমিউনিটি সিস্টেমের কথা। প্রকৃতির ওপর অযাচিত নির্যাতন চালিয়ে মানুষের নিজস্ব সত্তাই যে হুমকির মুখে তা যেন প্রকৃতি আজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। তাই তো বলি, মধ্যরাতের পর আঁধার আর ঘনীভূত হয় না, আলো আসবেই।

লেখক : মোঃ গিয়াসউদ্দিন

ওডি/এনএম

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড