• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সরল পথে চলতে সুচিন্তা এবং সুশিক্ষার বিকল্প নাই

  রহমান মৃধা

০১ মার্চ ২০২০, ২২:১২
সুইডেন প্রবাসী রহমান মৃধা
সুইডেন প্রবাসী রহমান মৃধা

প্রেম কি সেই আগের মতই আছে নাকি বদলে গেছে? প্রেম আগের মতই আছে তবে তার ধরণ বদলে গেছে। শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের প্রেমে বেশ বিরহ ছিল যা তাদের লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের ছেলেবেলার প্রেম করার ক্ষেত্রে লোকের মুখে মন্দ কথা শোনার ভয় ছিল। কিন্তু এখনকার প্রেমে বিরহ বা ভয় কম তবে পরিবর্তন খুব বেশি।

বর্তমান বিশ্বে চলছে নানা ধরনের প্রেম যেমন ডিজিটাল প্রেম, ভ্রমণে প্রেম, এমবিএ প্রেম ( married but available), স্বার্থ উদ্ধারে প্রেম (পাপিয়ার মত), স্কুল জীবনে প্রেম, কলেজে প্রেম, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার কিছুটা ভিন্ন ধরনের প্রেম। প্রেমে আছে লজ্জা, শরম এবং প্রেমে আছে অপহরণ। যে প্রেমে যত বেশি লজ্জা শরম জড়িত সে প্রেমের দূরত্ব এবং গভীরতা ততো বেশি। আবার যে প্রেমে লজ্জা শরম যত কম সে প্রেমের দূরত্ব এবং গভীরতা ততো কম। তাহলে কি অতীতে লজ্জা শরম বেশি ছিল বর্তমানের তুলনায়?

উত্তরে বলব হ্যাঁ। কারণ নর-নারীর মাঝে খোলামেলা সম্পর্ক যে সমাজে যত বেশি সে সমাজে তাদের ভালোবাসার দূরত্ব এবং গভীরতা ততো কম। যার কারণে পঞ্চাশ বছর আগে যেভাবে পাশ্চাত্যে প্রেমের বন্যা বইতো তা এখন ঢেউয়ের তালে বাংলাদেশে এসে হাজির হয়েছে।

পাশ্চাত্যে প্রেম বা ভালোবাসায় লজ্জা শরমের চেয়ে রোমান্টিক এবং ইরোটিক ঢেউ বেশি, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কি অবস্থা তা আমি জানিনা। তবে প্রযুক্তির যুগে নোংরামির বেশ ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে সে বিষয় আমি নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে আমি প্রেমপ্রীতি, রীতিনীতির ধরণের ওপর কিছু তথ্য দেবো।

তার আগে একটু জেনে নেই সুইডেনে যৌনতার ওপর কিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এখানকার স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে যৌনতার ওপর খোলামেলা আলোচনা করা হয়। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো নতুন কিছু জানা এবং শেখা। যাতে করে টিনএজে শিক্ষার্থীরা এমন কিছু না করে, যা তাদের জীবনের শুরুতে মনের মাঝে ভীতি বা লোকের মুখে নিন্দা শোনার ভয় ঢুকতে পারে।

একটি নির্দিষ্ট সময়ে শরীরের মাঝে হরমোন পরিবর্তনের কারণে ছেলে-মেয়ের মধ্যে ইন্টারেকশন এবং অ্যাট্রাকশন হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভালোবাসার মতবিনিময় বা দৈহিক সম্পর্কও হয় বা হয়ে থাকে। এ মতবিনিময় বা দৈহিক সম্পর্কে যদি সাবধানতা অবলম্বন করার মত দক্ষতা একজন শিক্ষার্থীর গড়ে না ওঠে তখন যৌনতাকে বড় ধরনের ইস্যু হিসেবে পরিবার বা সমাজ দেখে। সেক্ষেত্রে যৌনতাকে বেশির ভাগ দেশেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ সত্বেও সর্বত্রই কিন্তু যৌনতার একই ধরনের চাহিদা রয়েছে সমবয়সী ছেলে-মেয়েদের মাঝে। পরিবার, ধর্ম এবং সমাজের বাঁধা সঙ্গে লোকের মুখে মন্দ কথা শোনার ভয়ে কাজ গুলো একাকী বা গোপনে করা হয়ে থাকে যা আমরা সবাই জানি।

যেহেতু মনের জ্ঞাতসারে এবং সবার অজান্তে আমাদের সমাজে এটা ঘটে বিধায় পাশ্চাত্যের সামাজিক কার্যকলাপের ওপর আমরা নিন্দা করতে পছন্দ করি। বিবেকের কাছে নিজেদের অপরাধী করে যৌবনের শুরুতে নিজে অপরাধী হওয়া সত্বেও পরনিন্দা এবং পরচর্চা করতে আমরা অভ্যস্ত।

জাতি হিসেবে এখানেই আমাদের সঙ্গে সুইডেনের একটি বিশাল তফাত রয়েছে। পাশ্চাত্যে যদি কেউ শিশু ধর্ষণ করে তাকে মানসিক অসুস্থ বলে চিহিৃত করা হয় এবং এ ধরনের অসুস্থদের চিকিৎসার সঙ্গে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়।

বাংলাদেশে ধর্ম বা প্রথার নামে ভণ্ডরা যে ভণ্ডামি করছে, জানিনা তারা তাদের যৌনতাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে! যৌনতার ব্যবহার অন্ধকারে ঘটলেও তার ওপর আলোচনা দিবালোকে হওয়া দরকার এবং তা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশিক্ষণে সংযুক্ত করা আশু প্রয়োজন। তা না হলে জাতির মরাল ভ্যালুর পরিবর্তন হবে না। শিক্ষার পরিকাঠামো বরং দুর্বল থেকে যাবে।

শিক্ষার্থীরা মনুষ্যত্বের আদর্শ থেকে বঞ্চিত হবে। যে জাতি তার শিক্ষার শুরুতে হিপক্রেট বা দুই ধরনের নৈতিকতায় গড়ে ওঠে সে জাতি কখনও দুর্নীতি মুক্ত হতে পারে না।

অতএব শিক্ষা যদি সুচিন্তা এবং সুপরিকাঠামোর মধ্যে না হয় তবে তাকে সুশিক্ষা বলা যায় না। টিনএজে গোপন যৌনতা চর্চার কারণে সুস্থ মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণতা ঘটে না। প্রেমপ্রীতি, রীতিনীতির ওপর সঠিক প্রশিক্ষণ এবং তার সঠিক ব্যবহার মানব জাতির মরাল ভ্যালুকে মজবুত করে বলে আমি বিশ্বাস করি।

সেক্ষেত্রে সত্বর চালু করা দরকার বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শিক্ষকরা খোলামেলা আলোচনার মধ্যে সমাধান খুঁজে বের করবে সমাজের এধরনের হাজারও সমস্যার। কারণ সচেতন জাতি হতে হলে সমাধান খুঁজতে হবে সহজ এবং সরল পথের। দেশের শিক্ষা প্রশিক্ষণকে সুপরিকাঠামোর মধ্যে গড়তে সুচিন্তা এবং সুশিক্ষার বিকল্প নাই।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড