রহমান মৃধা
আজও মনে পড়ে যদি ফিরে যাই সেই ছোটবেলায়। সবে দেশ স্বাধীন হলো, আমরা আবার স্কুলে যেতে শুরু করলাম। প্রাইমারিতে পড়ি তবে ঠিক মনে আসছে না কোন ক্লাসে? টু বা থ্রিতে হবে। আমার জীবনে ঘটেছিল তখনকার সময়ের শ্রেষ্ঠ ঘটনা।
সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক একত্রিত হয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে। শুধু কি তাই? না, আমাকে সবার সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে। আমার দিকে সবাই তাকিয়ে, আমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইবে। কয়েকদিন ধরে রিহার্সাল দিয়েছি। গানটি খুব ভালো মুখস্থ হয়েছে। প্রাইমারি স্কুলের সর্বমোট শিক্ষার্থী হবে প্রায় চারশ। আমাদের গ্রামের স্কুলে তখন কোনো মহিলা শিক্ষক ছিল না।
সমস্ত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দ জড়ো হয়েছে। স্কুলে প্রথম জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে, স্বাধীন বাংলাদেশের নহাটা প্রাইমারি স্কুলে লাল সবুজ পতাকা উড়বে, সবাই একসঙ্গে গান গাইব- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। সেদিনের সেই অনুভূতি এখনো হৃদয়ে গাঁথা আছে। একটু ভয় ভয় করছে, এত বড় একটি গান আমি যদি ভুল করি তাহলে কী লজ্জাই না পাব। হঠাৎ ঘণ্টা বেজে উঠল সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পুরো পৃথিবীর ভালোবাসা যেন উপচে পড়েছে ওই চির প্রিয় মুখগুলোতে। শুধু স্কুল নয়, স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে সেই মাঠটি যা ছিল আমাদের ঠিকানা!
স্কুলে তখন ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন না। তবে যতটুকু মনে পড়ছে সফদার স্যার নামে একজন শিক্ষক ছিলেন সেদিন সকালে স্কুল মিলনায়তনের দায়িত্বে। তিনি প্রথম বললেন, আরামে দাঁড়াও, পরে বললেন, সোজা হও। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন শুরু কর। আমি স্বাধীন বাংলায় প্রথম সোনার বাংলার গান গেয়েছিলাম সেদিন- ‘চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে, ও মা আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।’ পুরো গান গেয়েছিলাম, ভুল হয়নি একটুও। স্কুলের সবার ভালোবাসার ছোঁয়ায় স্নাত হয়েছি প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত। কোমল স্নেহ, স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর পরম মমতায় ঘেরা ছিল আমাদের সেই স্কুলের স্নেহনীড়।
জীবনের নির্মল আনন্দ-উল্লাস, বন্ধুবাৎসল্য, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, সম্প্রীতি, প্রতিবেশী প্রেম, আত্মীয়দের স্নেহ-মমতা, গুরুজনদের আশীর্বাদ- সবই এসেছে জীবনের অংশ হয়ে, অথচ সময়ের আবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই অমূল্য সময় ছেলেবেলার সেই সুন্দর জীবন।
হৃদয়ে বাংলাদেশ সেই থেকে গেঁথে আছে মনে-প্রাণে, ধ্যানে-জ্ঞানে। তাই হয়তো আমার প্রথম লেখা বই যার নামকরণ হয়েছে মনের অজান্তে ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ।’ আমি মানবকল্যাণে কোরআন শরীফের নীতিমালার ওপর খেয়াল রেখে জীবন চলার পথে যা প্রয়োজন সব বিষয়ের ওপর লিখেছি। আমি ভালোমন্দের ওপর লিখেছি। লিখেছি ভালোবাসা, সুশিক্ষা, পৃথিবী ভ্রমণ, প্রযুক্তি, খেলাধুলার ওপর। আমার হৃদয় দিয়ে লিখেছি ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ।’ আমার বিশ্বাস বইটি পড়ার পর সোনার বাংলাকে ভালো না বেসে কেউ পারবে না। সোনার বাংলা গড়তে এবং তাকে ভালোবাসতে মন চাইবে।
বইটি আমি উৎসর্গ করেছি আমার দেশের নতুন প্রজন্মদের জন্য। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি খেলাধুলাকে। কারণ খেলাধুলায় আসক্ত হবে তরুণরা, ছাড়বে মদ, গাজা আর ইয়াবা। যা আজ পুরো সমাজকে ধ্বংস করছে।
সুশিক্ষা এবং খেলাধুলা তরুণদের মধ্যে ন্যায়নিষ্ঠা, সততা ফিরিয়ে আনবে। খেলাধুলা শেখাবে কঠিন পরিশ্রম, জেতার প্রবণতা, বেঁচে থাকার অধিকার, মনুষ্যত্ববোধ, সুশিক্ষা এবং দেশপ্রেম। খেলাধুলা আদর্শ নাগরিক হতে সাহায্য করে। আমার নিজের ছেলেমেয়ে খেলাধুলা করে, আমি তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত খুব কাছ থেকে দেখছি। আমি দূরপরবাস থেকে ফুটবলার হান্ট একাডেমি করার উদ্যোগ নিয়েছি আমার বন্ধু সামসুদ্দিন সুমীর সঙ্গে। আমার সাথে এখন অনেকেই এ কাজে যোগ দিয়েছে। এখন দরকার সকলের অংশগ্রহণ।
আমার লন্ডনপ্রবাসী বন্ধু নাজমুল নানাভাবে আমাকে সাহায্য এবং অনুপ্রেরণা দিয়ে চলছে। ভালোবাসা এবং হৃদয় দিয়ে সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।
আমরা ৬৮ হাজার গ্রামে ফুটবল খেলা দেখতে চাই, যাতে করে ভালো দক্ষ খেলোয়াড় খুঁজে পেতে পারি। সারা দেশ থেকে যদি একটি টিম দাঁড় করাতে পারি তবে নিশ্চিত আবারও গাইব সবাই সেই জাতীয় সঙ্গীত একসঙ্গে। বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঠে লাল সবুজ পতাকা উড়বে আর আমরা গাইব- ‘কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো, কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।’ লিখাটি শেষ হতেই মনে পড়ে গেল, রাত পোহালেই ২১শে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি- সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে।
রহমান মৃধা, সুইডেন প্রবাসী
ওডি/নূর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড