• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জনগণের অধিকার ছিন্ন করা আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ

  রহমান মৃধা

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:৩৫
রহমান মৃধা
রহমান মৃধা

একদিন সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। সেই দিনটি কবে কেউ কি বলতে পারবেন? না, তবে লণ্ডভণ্ড একদিন হবেই। বাংলাদেশ একদিন দুর্নীতি মুক্ত হবেই শুধু কবে সেটাই দেখার অপেক্ষায়।

সরকার প্রশাসনের দিকে খুব ভালোভাবে নজর দিয়েছেন। তাদের সুযোগ সুবিধার যথেষ্ট উন্নতি করেছেন এবং এটা চলমান রয়েছে যা প্রশংসনীয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য প্রায় কোটি টাকা মূল্যের পাজেরো স্পোর্টস কিউ এক্স গাড়ি কিনছে সরকার। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০টি গাড়ি কেনার জন্য নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মচারীদের সরকারি ও দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি দরকার ঠিক আছে, সেটাকি কোটি টাকা দামের পাজেরো গাড়িই হতে হবে? যেখানে দেশে মানুষ ঠিক মত খেতে পায়না সেখানে সরকার এই বরাদ্দ প্রদান করে আসছে সেই ২০০৬ -২০০৭ অর্থবছর থেকে। দেশের পরিকাঠামোকে মজবুত করতে সমস্ত ঊর্ধ্বতন কর্মচারীদের এসব সুযোগ সুবিধা দেয়ার অর্থ তারা অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার এবং দুর্নীতি থেকে মুক্ত হবে।

দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। জনগণকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেবে। হচ্ছে কি তেমনটি? ‘দেশে মৌমাছির চাষ বাড়িয়ে মধু উৎপাদন বাড়াতে ইউরোপ গিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে চান কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩০ কর্মকর্তা। আরও ১০০ কর্মকর্তা ইউরোপ যেতে চান শিক্ষা সফরে। সফরকালে শুধু মধু চাষ দেখাই নয়, তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জ্ঞান অর্জন করবেন তারা। জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা করে এই ১৩০ কর্মকর্তার ইউরোপ ভ্রমণে ব্যয় হবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা’- দেশ রূপান্তর। কাজ বা চাষ করবে কৃষকরা ট্রেনিংয় যাবে মন্ত্রনালয় বাহ্ কি চমৎকার।

অন্যদিকে প্রশাসনের বাইরে যারা কর্মরত যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক এদের জন্য কী ব্যবস্থা করা হয়েছে? এদেরও যদি সমপরিমাণ সুযোগ সুবিধা না দেয়া হয় তবে দেশের রুগী যাবে কসাইখানায়, বালিশ বা গাছ রোপণে খরচ হবে কোটি কোটি টাকা। আর শিক্ষা হবে কুশিক্ষা যেখানে চলবে শুধু নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং দুর্নীতি।

এমতাবস্থায় অভাগা দেশের জনগণের কি হবে, আর কি হবে বাংলাদেশের? একই আশা, ভালবাসা, কান্না হাসির একই ভাষা, তারপরও কেন এত বড় ব্যবধান? সরকার মনে করে দেশের জনগণ তাদের ভালোমন্দ বুজতে শেখেনি তাই তারা নিজ দায়িত্বে দেশ পরিচালনা করছে। আর এ কারণে জনগণকে ভোট দেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ভালো। তাহলে ভালো মন্দের দায়ভারটি নিয়ে সঠিকভাবে তা পালন করে দেখাতে হবে। যেদেশে সরকার তার মৌলিক অধিকার যেমন অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং বাসস্থানের সুষ্ঠু নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ, সেখানে কিভাবে পাজেরো গাড়ির পেছনে কোটি টাকা ব্যয় করে? এমনটি প্রশ্ন করা কি নেহায়েত অপরাধ? তা যদি না হয় তবে আমরা একটি সুস্থ গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা দেখতে চাই।

এখনও চিকিৎসা পেতে জীবন বাজি রাখতে হয়, পঙ্গু হাসপাতালের করিডোরে পচে মরতে হয় বা বিনা চিকিৎসা এবং পুষ্টির অভাবে অকালে মরতে হয়। সেই মরা দেহের ওপর কোটি টাকার পাজেরো গাড়ি চালিয়ে জাহান্নামের টিকিট কেনা কি ঠিক? এসব চিন্তা চেতনা শুধু আমার নয়, এমনটি ভাবনা বাংলার কোটি কোটি মানুষের। আমি এতটুকু বলি ‘ভুল কর, তবে জেনে শুনে পাপ কর না! কারণ এ পাপের পরিণাম জাহান্নামের আগুন, যদি পরকালে বিশ্বাস কর। সমাজে এমন কিছু লোক থাকে যারা এসব অনুশোচনা করে না। ন্যায়নীতির পরোয়া করে না। তারা অন্যকে উৎপীড়ন করে, অন্যের অধিকারে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণে সামাজিক শৃঙ্খলাকে নস্যাৎ করে, সামাজিক স্বার্থবিরোধী অন্যায় ও অবৈধ কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হয়।

এরা সমাজের চোখে অন্যায়কারী ও আইনের চোখে অপরাধী বলে বিবেচিত। এদের অপরাধ অবশ্যই দণ্ডনীয়। কিন্তু বিবেকবান মানুষ হিসেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেতনার অধিকারী হলেও অনেক মানুষ নানা কারণে দিনের পর দিন অন্যায়কে সহ্য করে চলছে। তা কি প্রকারান্তরে অন্যায়কে ইন্ধন দেয়া বা অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়ার নামান্তর নয়? আসলে বস্তুজগতের স্থূল বিচারে সে নিরাপরাধের ছাড়পত্র পেলেও নিখিল বিশ্বমানবতার দরবারে তার অপরাধের রেহাই নেই। কারও অপরাধ ক্ষমা করার মধ্যে যে উদারতা আছে তা মনুষ্যত্বেরই পরিচয়। কিন্তু ক্ষমার মাত্রা থাকা চাই।

অন্যায়কারী যদি ক্ষমা পেয়ে বার বার অন্যায় করতে থাকে তবে সে ক্ষমার যোগ্য নয়। এতে তার অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। এই ধরনের অন্যায়কারীর অন্যায় ক্ষমা করা কোনো মহৎ ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। বরং সেও অন্যায়কারীর মত সমান অপরাধী হয়। আমি বিশ্বাস করি মহান স্রষ্টাকে, আমি বিশ্বাস করি মানুষকে। আমি বাংলাদেশে জন্মেছি তাই দেখেছি দারিদ্রতাকে। বেঁচে থাকার আরেক নাম জীবন নয়, তার নাম বিবেক। দেহের বাইরে বিবেক রেখে যদি চলাচল করা হয় তবে সে দেহকে বলে গোস্ট (ghost)। গোস্ট কি তাহলে বিবেকহীন মানুষের প্রতিচ্ছবি!

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড