ফারজানা ববী
প্রাক-প্রাথমিক হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু হওয়ার পূর্বে একজন শিক্ষার্থী ছয় বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতো। বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই তারা অনেক সময় মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতো। কারণ খুব দ্রুত তারা নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারত না।
অনেক সময় শিক্ষকের কথা বুঝতে পারত না। বাবা মাকে ছেড়ে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে থাকাটাও তাদের জন্য কষ্টকর। ছয় বছর বয়সী শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বয়স হলেও দৈহিক ও মানসিকভাবে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে না। ভর্তি হয়েই যখন বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে তখন অনেক শিক্ষার্থীদের মধ্যেই বিদ্যালয় ভীতি দেখা দেয়।
অন্যদিকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু হয়ে যায়। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হলো প্রাথমিক শিক্ষার পূর্ববর্তী এক বছরমেয়াদি শিক্ষা। যেখানে শিশুর স্বতঃফূর্ত অভিষেক ঘটানোর জন্য আনন্দদায়ক ও শিশুবান্ধব পরিবেশের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিশু সক্রিয় অংশ গ্রহণে সুযোগ সৃষ্টি করা ও তার আজীবন শিখনের ভিত্তি রচনা করা, বিদ্যালয় প্রীতি সৃষ্টি করা এবং বিদ্যালয় ভীতি দূর করে প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গনে তাদের আনন্দ ও আগ্রহের সহিত অভিষেক ঘটানো।
বর্তমান সময়ে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে নির্দিষ্ট প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষটি সুন্দর, শিশুবান্ধব ও আকর্ষণীয় করে সজ্জিতকরণ করা। কক্ষটির মধ্যে রয়েছে ৪টি কর্নার যথা- ১। কল্পনার কর্নার ২। ব্লক ও নাড়া চাড়ার কর্নার ৩। বই ও আঁকার কর্নার ৪। বালি ও পানির কর্নার। কর্নারগুলোতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট উপকরণ।
প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ক্লাশ রুটিনটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা আনন্দ সহকারে, কখনো নেচে গেয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে কোনো কিছু শেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ২০ মিনিট নির্দেশনার খেলা এবং ২০ মিনিট ইচ্ছেমত খেলার সুযোগ পেয়ে থাকে।
ইচ্ছেমত খেলায় তারা তাদের পছন্দমত কর্নারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্নারের উপকরণ দিয়ে ইচ্ছেমত খেলা করতে পারে। আর পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে যখন সে খেলার সুযোগ পেয়ে থাকে আর খেলা ও আনন্দের ছলে কোনো কিছু শিখে তখন সেই শিখনটি দীর্ঘস্থায়ী হয় আর সে শিখতেও আগ্রহী হয়।
বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতে এবং এসে মজার মজার কাজগুলো করতে তাদের মাঝে আগ্রহ দেখা দেয়। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা নিজেই বিদ্যালয়ে আসার জন্য তার বাবা মাকে তাগিদ দিয়ে থাকে। খেলা, মজা ও আনন্দের মাঝে শেখা বর্ণ, ছড়া, গান, গল্প, অভিনয়, চারু ও কারু, প্রাক-গাণিতিক ধারণা, সংখ্যা, যোগ বিয়োগের ধারণা, পরিবেশ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সমাপনী কাজগুলো তারা আয়ত্ত করে ফেলে।
ফলে পরবর্তীতে যখন তারা ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হয় তখন সে পাঠদানের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আর যখন সে বর্ণ, সংখ্যা চিনতে পারে বলতে পারে ও লিখতে পারে তখন তার কাছে ১ম শ্রেণির পড়াটা অনেক সহজ মনে হয়। আর এভাবে শ্রেণি ভিত্তিক যোগ্যতাগুলো ১ম শ্রেণি থেকেই আয়ত্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠে। আর পরবর্তীতে এভাবে বিষয়ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা ও প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো অর্জিত হয়ে যায়। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সাথে মেঝেতে বসে বিভিন্ন কাজ পরিচালনার মাধমে ক্লাস নেয় এবং তাদের কাছে টেনে নেয় আদর করে নাচ গান করে তখন একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষক ও বিদ্যালয় ভীতি সবই দূর হয়ে যায়।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে নিম্নরূপ সুপারিশগুলো করা যেতে পারে :
• প্রতিটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ২.৫ ঘণ্টার জন্য ২ জন করে শিক্ষক দেয়া। • ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতেই কম্পিউটারের সাথে শিশুদের সম্পৃক্ত করা। • মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে সপ্তাহে ১/২ দিন শিশুদের শিশুতোষ মজার মজার শিক্ষণীয় ভিডিও দেখানো রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা। • শিক্ষার্থীদের জীবনের ১ম দিনেই বিদ্যালয়ে আগমন উপলক্ষে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। • প্রতি মাসে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করে ৪ মাস পর পর যে সার্বিক মূল্যায়ন করা হয় তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা ও তাদের প্রশংসিত করা। • বাংলা ও গণিতের পাশাপাশি ইংরেজি বর্ণমালা সম্পর্কে ধারণা দেয়ার ব্যবস্থা করা বা ক্লাশ রুটিনে তা উল্লেখ করা। • মৌখিকভাবে ধর্মীয় ধারণা দেয়া।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড