• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুখী দাম্পত্যের জন্য জরুরি মানসিক স্বাধীনতা

  জোবায়ের রুবেল

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:৫৮
সুখী দাম্পত্য
ছবি : প্রতীকী

অন্যের কথায় কি আপনার সুখ-শান্তি নষ্ট হয়? যদি হয়, তবে বেশি ভালোবাসা আর ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকা সত্ত্বেও দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারবেন না। সম্পর্কের মধ্যে কেবল দুঃখই বাড়বে। কারণ, মানসিকভাবে আপনি অন্যদের গোলাম হয়ে আছেন। একজন মানসিক গোলাম কখনো সুখী হতে পারে না।

যদি মনে করেন অন্যরা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কেউ আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে না। লোকেরা আপনার সাথে তাই করেন, যেটা আপনার সাথে করা উচিত বলে তারা মনে করছেন। অন্যদের এই উচিত কাজটি আপনার পছন্দ না হলেই আপনি নিজের মধ্যে দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা তৈরি করছেন। এই দুঃখ কি সে আপনাকে দিয়েছে? নিশ্চয় না।

তবে সে কেন আপনার সুখের পথে বাধা হতে পারছে? আপনার কাছে কি এর সঠিক কোনো ব্যাখ্যা আছে? আপনার বিচারজ্ঞান অনুসারে যদি কেউ খারাপ ব্যবহার করে বা খারাপ কথা বলে, আপনার শতভাগ অধিকার আছে প্রতিবাদ করার। তার জন্য যে কোনো ধরনের শাস্তির বন্দোবস্ত করার। সেটাই আপনি করুন। কিন্তু এই সবের জন্য কেবল আপনার মনে কোনো দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা তৈরি করা যাবে না। আপনার মেজাজ খারাপ হওয়া যাবে না। আপনার সুখ-শান্তি নষ্ট করা যাবে না। কিন্তু এটাই হয়। কারণ আপনি মানসিকভাবে স্বাধীন নন। একবার স্বীকার করুন- আপনি নিজেই সচেতনভাবে আপনার জন্য দুঃখ তৈরি করছেন; এজন্য একমাত্র আপনি নিজেই দায়ী, অন্য কেউ না। তবেই দেখবেন সব ক্ষমতা আপনার হাতে চলে এসেছে। আর যা আপনার হাতে থাকবে, তাই কেবল আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। নিঃসন্দেহে বলতে পারি অন্যের হাতের জিনিস আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

প্রতিনিয়ত আপনি আর্থিকভাবে এবং শারীরিকভাবে স্বাধীন হওয়ার কথা ভাবছেন। অথচ মানসিকভাবে আপনি অন্যদের কৃতদাস। ইমোশনালি নিজেকে স্বাধীন করতে না পারলে আপনার দুঃখ কোনোকালেই যাবে না। হেলদি রিলেশনশিপ পাওয়া সম্ভব নয়। কোনো সম্পর্ক থেকেই সর্বোচ্চ সন্তুষ্টিও অর্জন করতে পারবেন না। তাই সবার আগে নিজেকে এই গোলামির হাত থেকে মুক্ত করুন, তবেই হতে পারবেন প্রকৃত সুখী এবং সম্পর্কগুলো হবে আরও মধুর।

কী করে মানসিকভাবে স্বাধীন হবেন?

সমস্যাটার সমাধান করুন, মানুষটার নয় : মশা কামড়ালে আপনার কষ্ট হয়। এই কষ্টটা আপনার মধ্যে বেশিক্ষণ থাকে না। অথচ আপনার স্বামী/স্ত্রীর দেওয়া ছোট একটি কষ্ট ভুলতে পারেন না। কেন? কারণ আপনি দুঃখ ভোলার চেয়ে সেই মানুষটিকে শুধরে দিতে বেশি আগ্রহী। মানুষটাকে না শুধরে সমস্যাটার একটা সমাধান ভাবুন। কারণ সমস্যাকারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আপনার সমস্যা আর মানসিক যন্ত্রণা দুটোই বাড়বে, কমবে না কোনোকালেই।

ভুল ধরবেন না, আপনি মাহামানব না : প্রতিটি মানুষ আলাদা আলাদা স্বভাবের হয়। এই স্বভাবই তার শিক্ষা ও রুচির বহিঃপ্রকাশ। আপনার পরিবার, বন্ধু বা কলিগদের মধ্যে কারও কোনো স্বভাব পছন্দ না হলে হঠাৎ করেই শুধরে দিতে যাবেন না। এতে সেই ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য নষ্ট হয়। তার স্বভাবকে স্বাভাবিক আচরণ ভেবেই গ্রহণ করুন। আপনার বিচারে তার কোনো একটি আচরণ খারাপ হলেও তার বিচারে সেটা সেরা। দু-একটি খারাপ স্বভাব আমার আপনার সবারই আছে। এটা মন থেকে মানুন।

ক্ষমা নয়, দোয়া করুন : কেউ আমাদের রাগানোর জন্য কিছু করেন না। প্রত্যেকে সেটাই করেন, যেটা তার বিচারে সব থেকে ভালো। আমরা প্রথমে লোকেদের কথায় ভুল খুঁজে বের করি, এরপরে নিজেদের জন্য কষ্ট তৈরি করি। তারপর আবার ক্ষমা করার নাটক করি। সম্পর্কের মধ্যে আমরা কেউ বিচারক নই। তাই ভুল ধরা আর নয়। কেউ ভুল করলে রাগ নয়, তার সংশোধনের জন্য দোয়া করুন। দোয়াই পারে আপনার মন থেকে সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতে।

শতভাগ গ্রহণ করুন : যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি হোক না কেন; তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শিখুন। মানিয়ে নেবার চেষ্টা করবেন না, মনে নিন। অবশ্যই কোনো শর্ত ছাড়াই মনে নিন। তাহলেই আপনি একদিন মানসিকভাবে স্বাধীন হতে পারবেন। যে কোনো সম্পর্ক থেকেই সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন। এই অভ্যাসগুলো এক বছর চর্চা করলেই দেখবেন আপনি মানসিকভবে স্বাধীন হয়ে উঠেছেন।

আগে মনে নিন, পরে পরামর্শ দিন : কউকে ইন্সট্রাকশন দেয়ার থাকলে নিজের মধ্যে বিরক্তি তৈরি না করে বুঝিয়ে বলুন। কেউ বিরক্ত হয়ে কিছু বললে অন্যরা তা গ্রহণ করে না। উল্টো সে অপমান বোধ করে। যখন কোনো মানুষ কারও থেকে অপমানিত বোধ করে, তখন তার ভালো কথাও কারো পছন্দ হয় না। তাই কারও স্বভাবের কোনো সংশোধনের পরামর্শ দিলে আগে সেটা শতভাগ গ্রহণ করুন। তারপর আপনার পরামর্শটি বুঝিয়ে বলুন। যদি শতভাগ গ্রহণ করতে না পারেন, তাহলে ভুল সংশোধন করাতে যাবেন না। কারণ এতে শুধু সমস্যাই বাড়বে, কোনো সমাধান আসবে না। আর সব সময় অন্যের ভুল ধরতে গেলে মানসিকভাবে স্বাধীন হতে পারবেন না। জীবনভর শুধু যন্ত্রণাই পোহাবেন আর বলবেন- সবাই খারাপ, কেউ আমাকে বোঝে না।

ওডি/এসএইচএস

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড