• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শূন্য হাতে প্রবাস ফেরত, ভাগ্যের অকাল মৃত্যু

  সাইদুল আজীম

১৭ জানুয়ারি ২০২০, ২০:১০
বাংলাদেশি শ্রমিক
প্রবাস ফেরত বাংলাদেশি শ্রমিক (ছবি : সংগৃহীত)

কী ভয়াবহ বিষয়! সৌদি আরব থেকে গত ১০ বছরে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন ২ লাখের অধিক কর্মী। চলতি বছরের প্রথম মাসের অর্ধেকেই ফিরেছেন ১ হাজার ৬১০ জন বাংলাদেশি। সংবাদ মাধ্যমের এমন খবর নেহাত দুশ্চিন্তাই নয়, শ্রমবাজারে অশনি সংকেত।

প্রায় প্রতিদিনই ফিরছেন প্রবাসীরা। ভাগ্য বদলের আশায় দেশ ছেড়ে চোখের সামনে ভাগ্যের অকাল মৃত্যু দেখতে হচ্ছে তাদের। এক কাপড়ে দেশে ফেরা মানুষগুলোর রক্তক্ষরণ অন্তরে। যাদের শ্রমে গতি পায় দেশের অর্থনীতির চাকা, তাদের অসহায় চেহারা কী করে দেখবে বাংলাদেশ?

তিন বছর ধরে অবৈধ প্রবাসীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে সৌদি আরব। ব্যাপক ধরপাকড়ে এ সময়ে দেশটি থেকে বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লাখ কর্মীকে অবৈধ প্রমাণ করে ফেরত পাঠানো হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশেরই ৬০ হাজারের অধিক। সংবাদ মাধ্যমে এ তথ্য দিয়েছে খোদ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

ফেরত আসাদের সবাই কি অবৈধ? নাকি অনেকে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির শিকার? বিভিন্ন সময় ফেরত আসা কর্মীদের সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য প্রমাণ করে ফেরতদের সবাই অবৈধ নয়। প্রতারণা ও ধরপাকড়ের জালে আটকে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বৈধ ভিসা ও ইকামার (কাজের বৈধ অনুমতিপত্র) মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও ফেরত পাঠানো হচ্ছে এমন প্রমাণও মিলেছে। এমনটা তো অন্যায়!

প্রবাসে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজারে এমন আকাল তো ঠেকাতে হবে। কাজটা যারা করবেন, প্রবাসীদের পাশে যারা দাঁড়াবেন তারা কি সজাগ আছেন? এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় রিক্রুটিং এজেন্সি, দূতাবাস ও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের পদক্ষেপ যথার্থ নেই বলেই দীর্ঘ দিন ধরে আরবের দেশটিতে অবহেলিত প্রবাসী শ্রমিকরা। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও ধরপাকড়ের শিকার হলে দূতাবাসের সহায়তা পান না প্রবাসীরা, এমন অভিযোগও পুরনো। তবু প্রত্যাশিত এমন দৃশ্য বদলায়নি বলেই শ্রমবাজারে এমন দুর্যোগ।

আরও পড়ুন : তরল সোনার মোহ, সহজে ইরাক ছাড়বে না মার্কিন বাহিনী

নারী শ্রমিকদের অমানবিক নির্যাতন থেকে রক্ষা এবং কর্মীদের অধিকার নিশ্চিতে দেশের দায়িত্বশীল টেবিলের দুর্বলতা প্রতীয়মান হচ্ছে। নাগরিকরা অন্য দেশে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হবে, অন্যায়ের শিকার হবে এতে রাষ্ট্র তো বসে থাকতে পারে না। কোনো দেশ এমনটা সহ্য করবে না, তবে আমরা কেন পিছিয়ে!

গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি, সৌদি থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের গণহারে ফেরার কারণ নিয়ে খবর প্রকাশ করে। এতে তারা ফ্রি ভিসা, নতুন শ্রমনীতি ও অর্থনীতির নতুন বাস্তবতাকে নেপথ্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করে।

বিশ্বে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক (ছবি : সংগৃহীত)

ফ্রি ভিসায় ইকামা রিনিউ (মেয়াদ বৃদ্ধি) করতে লেবার অফিসের ফি প্রতি মাসে ৮শ রিয়াল (১৭ হাজার টাকা)। অন্যদিকে এ ভিসার শ্রমিকরা নির্দিষ্ট কোম্পানির বাইরে কাজ করলে তা সৌদি আইনে এখন অবৈধ। নির্দিষ্ট কোম্পানিতে কাজ করে মাসে গড়ে ৮শ থেকে ১ হাজার রিয়াল পাওয়া যায়। ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে আসা একটা শ্রমিক এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন? নিজে বাঁচবেন, না পরিবার বাঁচাবেন?

আমরা সবাই জানি, সম্প্রতি সৌদি সরকার কিছু পেশায় নন-সৌদিদের কাজ করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ওই সব কাজে কোনো প্রবাসী নিযুক্ত হলে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হন। দিন-দিন দেশটিতে বিদেশি শ্রমবাজার কোণঠাসা হয়ে আসছে। অথচ প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় অংশ, প্রায় ৩৯ লাখের অধিক শ্রমিক অবস্থান করছে সৌদি আরবে। বর্তমানে দেশটির অর্থনীতিতে বিপুল পরিবর্তন ও শ্রমবাজার সংস্কারের প্রভাব স্পষ্ট হয়েছে।

এমন অবস্থায় বাংলাদেশের সামনে বিকল্প শ্রমবাজার, দক্ষ শ্রমশক্তি ও শক্তিশালী কূটনীতি এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ছাড়া আর বিকল্প কিছু নেই।

লেখক : সাইদুল আজীম সংবাদকর্মী

ওডি/এসএ

মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা লেখকের একান্ত মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোন সম্পর্ক নেই।
চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড