• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তরল সোনার মোহ, সহজে ইরাক ছাড়বে না মার্কিন বাহিনী

  সাইদুল আজীম

১৬ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:৩৯
ইরাক
ইরাকে মার্কিন সেনা (ছবি : সংগৃহীত)

ধ্বংসস্তূপে সতেরো বছর ধরে ধুঁকছে ইরাক। তেলের লোভ একটি দেশ শুধু নয়, সমগ্র অঞ্চলটি অস্থিতিশীল করে রেখেছে। ইরাকের মাটিতে মার্কিন আঘাতের ক্ষত দীর্ঘ দিনের। গণতন্ত্র ফেরাতে এসে লড়াই শেষে দেশে ফেরার কথাই যেন ভুলে গেছে মার্কিন বাহিনী।

সম্প্রতি বাগদাদে ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর অনেকেই ইরাকে মার্কিন বিদায় ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। বিশেষ করে যে ঘাঁটি থেকে হামলা চালিয়ে সোলাইমানিকে মারা হয়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সে ঘাঁটি ধ্বংস এবং ট্রাম্প প্রশাসনের শান্তির বার্তা। এ দুইয়ে বিদায়ের সূত্র মেলানোর চেষ্টা চলেছে।

ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের জেনারেলকে হত্যা, দেশের সার্বভৌম নীতির পরিপন্থি উল্লেখ করেন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল-মাহদী। ঘটনার কয়েকদিন পর তার দেশ থেকে সেনা সরিয়ে নিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বার্তা পাঠান তিনি।

এতে তিনি স্পষ্ট করেন, এ অভিযান এক তরফা পদক্ষেপ এবং দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি বিরোধী। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। তবে আদেল মাহদীর বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও কেমন সাড়া দেবেন সেটি বড় বিষয় নয়।

ইরাক নিয়ে মার্কিন পরিকল্পনাই এখানে মোক্ষম। কারণ সেখানে নৈতিকতার চেয়ে শক্তি-লোভের আনাগোনা। দীর্ঘ দুই দশক ধরে দেশটি দখল ও ধ্বংসযজ্ঞের কবলে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়ে যাওয়ার কথা বলে চলছে প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি। বিশেষভাবে তেলের লোভ। এ লোভ সামলানোর নয়। সহজে মৃত্যুপুরী ছেড়ে যাবে মার্কিন বাহিনী? এ সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে ইরানের বুকে আঘাত করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিতে থাকতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র, এমনটা ভাবাও অলীক নয়। মার্কিন প্রতিটি পদক্ষেপেই তুরুপের তাস ইসরায়েলে ঝাঁজ মেটাবে ইরান। তাই ট্রাম্প এখন রক্ষণাত্মক খেলোয়াড়। একদিন অবশ্যই ইরাক ছেড়ে যাবে আমেরিকা। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, তবে কি তাড়াতাড়ি আসছে সে দিন?

এর উত্তর পেতে হলে ফিরে যেতে হবে সতেরো বছর আগে। ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন ইরাক আক্রমণ করেছিল? এর মূল কারণগুলো আমাদের দেখতে হবে। আমেরিকা দাবি করে তারা ইরাকি স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনকে পরাস্ত করে দেশটির মানুষকে মুক্ত করতে এবং জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা নির্মূলে এগিয়ে আসে। ইরাক যুদ্ধের আগে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে ইরাক সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও সমর্থন করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের ন্যায্য দাবিগুলো অস্বীকার করেছে।

তবে আমেরিকার এমন দাবিকে মিথ্যাচার আখ্যা দিয়ে বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন জাতিসংঘের তৎকালীন সেক্রেটারি-জেনারেল কফি আনান। তিনি জানান, ‘আমি ইঙ্গিত দিয়েছি এ যুদ্ধ জাতিসংঘের সনদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না। এটি অবৈধ।’ আনান কেবল বলেছিলেন, আগ্রাসনের আগে ও পরে মিথ্যা বলছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে স্থায়ী দখলের প্রকৃত কারণ তিনি বলেননি।

ইরাকে একটি তেলক্ষেত্র (ছবি : সংগৃহীত)

ইরাক আক্রমণের প্রকৃত কারণ মূলত তেল চুরি। এর প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। আগ্রাসনের দীর্ঘ সময়ে ইরাকে এখনো ৬ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা ও ১২টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রিনস্প্যান তার স্মৃতিচারণে লিখেছিলেন- ‘রাজনৈতিকভাবে এটা স্বীকার করা যায় না। ইরাক যুদ্ধ মূলত তেল নিয়েই হয়।’

সে সময় ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জন আবিজায়েদ, মধ্য প্রাচ্যের গতিশীলতা বিশেষত ইরাকের যুদ্ধ তেলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করেন। বলেন, ‘অবশ্যই, এটি তেল সম্পর্কিত, আমরা সত্যই তা অস্বীকার করতে পারি না। আমরা আরব বিশ্বকে বড় বড় স্টেশনগুলোর সংগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করেছি। তাদের কাছে আমাদের বার্তা হলো- বন্ধুরা, আপনাদের পাম্পগুলো উন্মুক্ত রাখুন, দাম কম হোক, ইসরায়েলিদের সঙ্গে ভালো আচরণ করুন এবং আপনারা যা চান তা করতে পারেন।’

বর্তমানে ইরাকে ৩০০ বিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদ আছে। যা বিশ্বের সমস্ত তেলের প্রায় এক চতুর্থাংশ। সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব শীঘ্রই ইরাক ত্যাগ করবে এই সম্ভাবনা কম।

মিডিল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত মোতাসেম এ দাল্লোল। মিডিল ইস্ট মনিটর পত্রিকার কলামিস্ট

ওডি/এসএ

মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা লেখকের একান্ত মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোন সম্পর্ক নেই।
চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড