• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সান্ধ্যকালীন কোর্স স্বায়ত্তশাসনের অপব্যবহার

  আলতাফ হোসেন রাসেল

১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৫১
ইবি
ছবি : প্রতীকী (ইনসেটে লেখক সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন রাসেল)

ইউজিসির সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের সিদ্ধান্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন নীতিমালার বিরোধিতার আলোকে দেখা উচিত হবে না। সান্ধ্যকালীন কোর্সের বাতিলের সিদ্ধান্তটিকে স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ মনে করাও উচিত হবে না। সান্ধ্যকালীন কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনকে কোনোভাবেই সমৃদ্ধ করে না বরং অপমান করে।

অন্যভাবে বলা যায়, সান্ধ্যকালীন কোর্স স্বায়ত্তশাসনের অপব্যবহার। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে অপব্যবহার হয়ে কোনো ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। স্বায়ত্তশাসন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক ও আদর্শিক বৈশিষ্ট্য। সেখানে, আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সাধারণ-নিয়মিত ছাত্রদের বঞ্চিত করে সান্ধ্যকালীন কোর্স একটি অনৈতিক ব্যবসা। যা বাংলাদেশের চাকরি বাজারকেও মারাত্মকভাবে অস্থির করে তুলেছিল।

নিয়মিত কোর্সের বাইরে কিছু শর্ট কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই পারে। তাই বলে নিয়মিত ছাত্র ও গবেষণাকে উপেক্ষা করে নয়। অতিরিক্ত কোর্সগুলোকেও বরং নিয়মিত ছাত্র ও গবেষণাকে সমৃদ্ধ করতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো একদমই তা নয়। একমাত্র নোংরা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এগুলো ডিজাইন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদ মূলত এই কার্যক্রম শুরু করে, আয় বৈষম্যের তত্ত্বে, অন্যদেরকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করেছে। হ্যাঁ, মানছি যে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আর্থিকভাবে খুব ভালো মূল্যায়ন করা হয় না। সরকারি কর্মকর্তারা বরং অনেক সুবিধা ভোগ করের। কিন্তু তাই বলে জাতির বিবেক শিক্ষক হিসেবে আমরা এইরকম অনৈতিক পথ ধরতে পারি না।

আমরা বরং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমাদের সুযোগ সুবিধা আদায় করার জন্য আন্দোলন করতে পারি। সেখানে আমরা নিশ্চিত ছাত্রদের সহযোগিতা পাব। কেউ বলতে পারে সরকার আমাদের গুরুত্ব দেয় না। পাকিস্তান সরকার আমাদেরকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজাকারদের গুরুত্ব দিয়েছিল বলে আমরা দলে দলে রাজাকার হয়ে যায়নি। গেলে আজ দেশটা স্বাধীন হতো না। আমি মনে করি আমরা ঠিক থাকলে সরকার আমাদেরকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য। যেমন আমাদের আন্দোলনের কারণেই সরকার এখনো অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ব্রিটিশ সরকারের বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামোর প্রতিবাদ আমাদের বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বোস কিন্তু বেতন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েই করেছিলেন। এই অজুহাতে তিনি কিন্তু কোনো কর্পোরেশনের কাছে বিক্রি হয়নি বা অন্যকোনো অনৈতিক পন্থা অনুসরণ করেনি। তাই তিনি সফল হয়েছিলেন। এরিয়ারসহ প্রাপ্য বেতনও ফেরত পেয়েছিলেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য কখনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সের যুক্তি হতে পারে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যকে আমরা যে সান্ধ্যকালীন কোর্সের যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাই, এতে আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দোকানগুলো প্রতিষ্ঠায় কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই দায়ি। তাই আসুন, দোষারোপ না করে সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের সিদ্ধান্তটিকে বাস্তবায়নে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ইউজিসিকে সহযোগিতা করি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স না থাকলে ছাত্ররা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে এটা একটা খোঁড়া যুক্তি। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবে না তারা অন্য কোথায় গেলো, সেটা ভাবা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তো আর আকাশ থেকে পড়েনি। আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই ঐ প্রাইভেট দোকানগুলোকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছি। এর কিছুটা দায় আমাদেরকে তো নিতেই হবে। এতো আউল-ফাউল ডিগ্রির প্রয়োজনীয়তা কিন্তু আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই প্রথম তৈরি করেছে। আমরা তৈরি করেছি বলে এটি সবসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবৈধ সন্তান জন্ম দিলে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তো থেকেই যায়। এটি তো ঠিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যত ম্যাচিউর হবে সেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খেপ মারার সুযোগ কমবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা অধিক মুনাফার লোভে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অধিকতর আকর্ষণীয় শিক্ষক নিয়োগ দেবে। যেমন অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট দেশের পিএইচডিকে শুধু গ্রহণ করে। এতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষরা পিছিয়ে পড়বেই। এর জন্য মায়াকান্না করে কোনো লাভ নেই। আমরা বরং নিয়মিত ছাত্রদেরকে গুরুত্ব দেই। নিজেদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনি। আউল-ফাউল ঐ ডিগ্রিগুলোর ভাগ্য গুণগত শিক্ষার চাহিদা-জোগানের সংশ্লেষণেই নির্ধারিত হবে। এই তো কয়েকদিন আগেই, আমদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন অনুষদে আবেদন পড়তো বিজ্ঞান অনুষদের চেয়ে অনেক বেশি। গত কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞানে আবার শিক্ষার্থীদের আবেদন অনেক অনেক বেশি পড়ছে। আমাদের চাওয়ায় কিন্তু এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ হয় না।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, পরিসংখ্যান বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড