মাহবুব নাহিদ
মেসি কয়টি ব্যালন ডি অর জিতেছে তা এখন আর এক হাত দিয়ে দেখানো যাবে না। কারণ এক হাতে পাঁচটি আঙুল আর মেসির ব্যালন ডি অরের সংখ্যা ছয়। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ছয়বার এই পুরষ্কার জিতলেন মেজি। একই ছয়বার ইউরোপীয় গোল্ডেন বুটও জিতে নিলেন তিনি। মেসি মানেই যেন ইতিহাস, মেসি মানেই যেন রেকর্ডের অপর নাম।
ছোটবেলা থেকে বহু সংশয় ছিল তার জীবন নিয়েই। এক সময় লম্বা হবারই সুযোগ ছিলও না তার। হরমোন নিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় ভুগেছেন তিনি। খোদ বার্সেলোনাও নিশ্চিত ছিল না কি লাভ হবে মেসিকে দলে বাগিয়ে। হয়তো সেদিন টিস্যু পেপারে কন্টাক্ট সাইন করলে বার্সেলোনা হারাত তাদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে, আর করে ফেলত ইতিহাসের সেরা ভুল।
মেসিকে তো অনেকেই ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্লাব বলে থাকেন। শুধু মাত্র জাতীয় দলের ট্রফি না পাওয়ার অপ্রাপ্তি তাকে এই খ্যাতি থেকে সরিয়ে রাখে, এজন্যই কেউ কেউ বাদ সাধে। যদিও অলিম্পিক আর যুব বিশ্বকাপ জিতেছে মেসি। তবে বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে ঘুরে আসা, কোপা ফাইনালে পরপর দুইবার ব্যর্থ হওয়া মেসিকে বড্ড ভোগায়। মেসি মাঝেমাঝে হতাশ হয়েও পড়ে।
মেসি অবসরের ঘোষণাও দিয়েছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শিশুদের মতো। মেসি বারবার হেরেছেন কিন্তু হার মানেননি। তাইতো ৩২ বছর বয়সেও দৌড়ে চলছেন যেন ১৯ বছর বয়সের যুবকের মতোই।
এ বছর মেসি ৫৪ টি গোল করেছেন, করিয়েছেনও অনেক। সেরা প্লে-মেকারের পুরষ্কারও পেয়েছেন মেসি। তিনিই একমাত্র প্লেয়ার যে কিনা একই সাথে সেরা গোলদাতা ও সেরা প্লেমেকার নির্বাচিত হন। তবুও মেসিদের হেটারে পরিপূর্ণ এ বিশ্ব। একটা মানুষ টানা দশ বছরেরও বেশি সময় সেরা তিনের মধ্যে থাকে। সে কি করলে আর সকলের কাছে ভালো খেলোয়াড় হিসেবে আখ্যা পাবেন? শুধুমাত্র জাতীয় দলের ট্রফির জন্য? ট্রফি তো আর কেউ একা জিততে পারে না।
আরও পড়ুন : রোগের নাম হুমায়ূন আহমেদ
একটা দল যখন একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে তখন তারা ট্রফি জেতে। আর্জেন্টিনা কখনো মেসির জন্য সেই আর্জেন্টিনা হয়েই উঠতে পারেনি। মেসি কিন্তু জাতীয় দলেও তার জায়গায় সেরাটা দিয়েছেন। জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা কিন্তু মেসিই। আর্জেন্টিনার হয়ে লড়েছেন, লড়ছেন। জাতীয় দলের হয়ে একটি ট্রফি পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে মেসি। সে নিজেই তার সব অর্জন ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত শুধু জাতীয় দলের একটি ট্রফির জন্য। একটা শান্তশিষ্ট, নম্র ভদ্র দারুণ একজন মানসিকতার মানুষ। এত বিনয় তার মাঝে যা সচরাচর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সে যতগুলো গোল তার সতীর্থদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন তা অনেকের পুরো ক্যারিয়ারেও নেই।
মেসি বারবার হারেন আর বারবার উঠে দাঁড়ান। তিনি আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে চান, সুস্থ থাকতে চান। মেসি জানেন যে মেসিকে পারতেই হবে। নতুন করে আর্জেন্টিনা দলও অনেকটা গুছিয়ে উঠেছে স্কালোনির কোচিং-এ। মেসিও শেষ দেখবেন বলে হয়ত ঠিক করে নিয়েছেন। শেষ তো তাকে দেখতেই হবে। ৩২ এ এসে ব্যালন ডি অর পেয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে মেসিরা বুড়ো হয়না। আসলে আমাদের চোখের শান্তি যে আমরা মেসি-রোনালদোর মতো একটা দ্বৈরথ দেখতে পেয়েছি। টানা এতগুলো বছর তারা রাজত্ব করেছে। গতবার মদ্রিচের ব্যালন ডি অর বাদ দিলে গত এক যুগ ধরেই মেসি রোনালদোর দাপট। অনেকেই এসে ভবিষ্যৎ মেসি, ভবিষ্যৎ রোনালদো খেতাব পায় কিন্তু কেউই নতুন মেসি, নতুন রোনালদো হয়ে উঠতে পারে না। কারণ মেসি রোনালদোরা সহসা জন্মায় না।
অবশ্যই ষষ্ঠ ব্যালন ডি অর মেসির মেসির অর্জনের খাতায় নতুন মুকুট যোগ করে দিয়েছে। মেসি ভক্তরা এখন আনন্দে ভাসছে, উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে। কিছুটা আশাহত রোনালদো ভক্তরাও। তবে এগুলো নিয়েই জীবন চলবে। মেসির এই নতুন পদক হয়ত তাকে আরও বেশি ফুঁসিয়ে তুলবে জাতীয় দলের হয়ে ট্রফি জেতার জন্য। আগামী বছর নিজের দেশে কোপা আমেরিকায় ভক্তরা তাকিয়ে থাকবে মেসির দিকে। তা যদি নাও হয় তবে সবাই তাকাবে কাতার বিশ্বকাপের দিকে। কারণ মেসিরা যেমন আশা জাগানিয়া তেমনি ভক্তরা আশা পূরণ দেখতে মরিয়া।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড