• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রোগের নাম হুমায়ূন আহমেদ

  মাহবুব নাহিদ

০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৪৩
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ (ছবি : সংগৃহীত)

দিতে পারো একশো ফানুস এনে?

আজন্ম সলজ্জ সাধ- একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই।

ছোট একটা কবিতা। অনেক অব্যক্ত বেদনার ছায়া হয়ে ফুটে উঠেছে এই লাইনদুটি। লেখক সোমেন চন্দ্রের লেখা একটি ছোটগল্প থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিম্নবিত্ত মানুষদের জীবনকাহিনী নিয়ে লেখা শঙ্খনীল কারাগার তার প্রথম লেখা উপন্যাস। রফিক কায়সারের লেখা কবিতা "শঙ্খনীল কারাগার" নামটি অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করেন হুমায়ুন আহমেদ। নন্দিত নরকে তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস কিন্তু প্রথম লিখেছিলেন এই উপন্যাস। তার বাবাকে তার লেখা পাণ্ডুলিপি দেখাতে পেরেছিলেন বলে নিজেকে গর্বিতা মনে করতেন। এই উপন্যাস নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়, পেয়েছে সেরা চলচ্চিত্র পুরষ্কার।

১৩ নভেম্বর এই নন্দিত কথাসাহিত্যিকের ৭১তম জন্মদিন। ৭১ আমাদের কাছে খুবই প্রিয় একটি সংখ্যা। ৭১ সালেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রাণের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প নামে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন একটি উপন্যাস।

লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনতে হয়েছে আমাদের চূড়ান্ত বিজয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে লেখা বেশ কয়েকটি বইয়ের মধ্যে জোছনা ও জননীর গল্প অন্যতম একটি ভাল বই। বইয়ের নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে এর কঠিন সত্য। আমাদের প্রিয় দেশমাতৃকা অর্থাৎ আমাদের জননীর গল্প। বইয়ের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে জেনেছি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। কাল্পনিক কিছু চরিত্র আর তার সাথে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু প্রবাদপ্রতিম মানুষদের গল্পগাঁথা শুনেছি পুরো বইজুড়ে। প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ যেন বই লেখেননি, আমাদের গল্প বলেছেন।

এই বইয়ে তিনি যেমন তার নিজের জীবনকে জড়িয়েছেন তেমনি কিছু কাল্পনিক চরিত্রের উপাখ্যান দেখিয়েছেন আবার মুক্তিযুদ্ধের তথ্যও দিয়েছেন। যে করণে বইটি হয়ে দাঁড়িয়েছে একের ভিতরে অনেক কিছু।

নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ অভিমুখে একটি ট্রেন চলাচল করে। আমাদের দেশের তরুণ সমাজের অনেকেই হয়তো ট্রেনটি দেখলেই ভাবে যে এই ট্রেনটি তাদের স্বপ্নের ট্রেন। এই ট্রেনটি তাদের স্বপ্নের বাড়ি যায়। যে মানুষটার হাত ধরেই এই জাতি বই পাগল জাতিতে পরিণত হয়েছে। হ্যাঁ, নুহাশ পল্লীতে নীরবে ঘুমিয়ে থাকা এক কালজয়ী কিংবদন্তীর কথা বলছি। নাম তার হুমায়ুন আহমেদ। । তিনি চলে গেছেন এই পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু রেখে গেছেন তার অমর সব সৃষ্টি। ছাত্র ছিলেন রসায়নের কিন্তু সাহিত্যের এক প্রবাদপ্রতিম পুরুষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সাহিত্যের সকল শাখায় তার সুনিপুণ তুলির আছড় বুলিয়েছেন। তার নিপুণ হাতের তৈরি চরিত্রগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের সামনে ধরা দেয় হিমু-রুপা-মিসির আলী কিংবা শুভ্ররা। আমরা নিজেদের অজান্তেই এক এক হয়ে উঠি হিমুর মত এলোমেলো কিংবা মিসির আলীর মত রহস্যময়।

বইমেলা ঘিরে আমাদের অনেক আবেগ জড়িয়ে থাকে আর সেই আবেগের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিলেন যে মানুষটি তার নাম হুমায়ুন আহমেদ। তিনি সাধারণ ঘটনাকে অতি সাধারণভাবেই প্রকাশ করেছেন। আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে ফ্রেমে বন্দী করেছেন। কল্পনাকে এনে দিয়ে হাতের মুঠোয়, বইয়ের পাতায় পাতায়। আমাদের শৈশবের প্রেম কিশোরের ভালবাসা যেনো এই মানুষটিই। গ্রামের সাধারণ জীবনের মাঝেও নানা গল্প লুকিয়ে থাকতে পারে তা ফুটে ওঠে তার স্বপ্নের কালিতে। হাত দিয়েছেন সাহিত্যের প্রতিটি শাখায়। বানিয়েছেন চলচ্চিত্র, সেখানেও হয়েছেন সেরা। তিনি যেনো সেরা হবার জন্যই এসেছিলেন। নিঃসন্দেহে আধুনিক সময়ের শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক তিনি। আমাদের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে লুকায়িত এক প্রেমানুভূতির নাম হুমায়ুন আহমেদ। বই পড়ে যে দেউলিয়া হওয়া যায় তা হয়তো তার বই না পড়লে আমাদের সময়ের ছেলেপুলেরা জানতোই না। হুমায়ুন আহমেদ আমাদের কাছে একটি রোগেরও নাম। নতুন কোনো লেখক ভাল লেখা শুরু করলেই আমরা বলে ফেলি হুমায়ুন আহমেদের মতো লিখছে। এটা আমাদের দোষ নয়, যা আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে আছে আমরা তাই বলি। এতদিন হয়ে গেলো উনি লেখেন না, আর কোনোদিনই তো লিখবেন না। তবুও বইমেলা এলে তাই বই নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যায়। তিনি এখনো বর্তমান, হয়তো সুদূর ভবিষ্যতেও তিনি বর্তমানই থাকবেন। শুধু লিখেই তিনি ক্ষান্ত হননি, তারই লেখা দিয়েই বানিয়েছেন কালজয়ী কিছু চলচ্চিত্র। হুমায়ুন আহমেদ আমাদের সাহিত্য অঙ্গনকে যা দিয়েছেন তা অতুলনীয়। তিনি যা দিয়েছেন তার প্রতিদান হয়তো দেয়া সম্ভব না। তবে তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সবচেয়ে বড় যে পুরস্কার পেয়েছেন তা হলো মনের রাজ্যের রাজার পুরস্কার। আমাদের সকলের মন জয় করে চলে গেছেন তিনি। রেখে গেছেন তার সৃষ্টিকর্ম। তার সৃষ্টিকর্মে দীক্ষিত হবার সুযোগ পাচ্ছে আমাদের স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা। তাদের পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে হুমায়ুন আহমেদের বহু সাহিত্য। তবে এসবের কোনো কিছুই যেনো তার অভাব পূরণ করতে পারবে না। যে মানুষটা এই জাতিকে বইপাগল বানালো তাকে এ জাতি প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্তে খুঁজে বেড়াবে।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড