মাহবুব নাহিদ
এই গোলাপি বলের একটা টেস্ট ম্যাচ নিয়ে কতো আয়োজন। এত উন্মাদনা, এত উৎসব আর সেখানে কিনা একটা ম্যাড়মেড়ে খেলা উপহার দিল বাংলাদেশ! দুই টেস্টই তিন দিনে খেলা শেষ! অনেক বিশ্লেষণ আছে এই খেলার তবে প্রথম টি টুয়েন্টি যা হয়েছে তা হতাশার। আমাদের এই অবস্থা আসলেই আশঙ্কাজনক।
বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলা শুরু করেছে বহুদিন হয়ে গেল। এত বছর খেলাধুলা করার পরেও আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গেলে হিমশিম খেতে হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল একসময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অনেক ভালো কিছুই করবে। ভালো তারা করছিলও। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে পুরোপুরি খুশি হওয়া যাচ্ছে না। উন্নতির একটা পর্যায়ে গিয়ে আচমকা নিম্নগামী হওয়া আসলেই ভয়ানক।
বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স নিয়েই বলা যাক, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে। অনেক বেশি আশা থাকলেও শেষ করতে হয়েছে অষ্টম পজিশনে থেকে। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাই ছিল র্যাকিংয়ে আমাদের চেয়ে উপরে। তাও এবার তাদের দলের অবস্থা খুব বেশি একটা ভালো ছিল না। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতা ভালোভাবেই চোখে পড়েছে।
এরপরে বাংলাদেশের খেলা গেল শ্রীলঙ্কার সাথে, শ্রীলঙ্কার সাথে অবস্থা আরও খারাপ। আর সর্বশেষ আফগানিস্তানের সাথেও হারতে হয়েছে বাজেভাবে। যদিও একটি টি টুয়েন্টি ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে। আর সর্বশেষ ভারত সিরিজ! তবে তাদের সাথে টেস্টে হারাটা আসলেই লজ্জার। সবাই বলে “আমাদের অনেক ট্যালেন্ট আছে, আমরা উন্নতি করছি” কিন্তু আমাদের সেই উন্নতি করা শেষ হবে কবে?
বাংলাদেশ টেস্ট খেলুড়ে আয়ারল্যান্ড বাদে অন্য সব দলের সাথেই নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরেছে। এই লজ্জার রেকর্ড শুধুই আমাদের আছে। আমরা ক্রিকেট নিয়ে এতো উদ্বিগ্ন, এত চিন্তিত তবুও কেনও হতাশার ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে? আসলে সমস্যাটা কোথায়?
আমাদের ক্রিকেট বোদ্ধাদের দাবি নতুন ভালো খেলোয়াড় আসছে না। আর যারাও বা আসছে তারা দলে এসে ভালো করতে পারছে না। আর সবার অনেক বড় দাবি ফিটনেসে আমাদের ঘাটতি। এই দুইটা সমস্যাকে অস্বীকার করার সুযোগ নাই।
যখন কোনো কাজে নিজেরা পথ খুঁজে পায় না তখন অন্তত কাউকে অনুকরণ করা তো যেতেই পারে। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, ফ্যাশন, সিনেমায় যদি অনুসরণ করা যেতে পারে তবে খেলায় কেন করা যাবে না? আমরা ঠিক আমাদের পাশের দেশ ভারতকে দেখলে বুঝতে পারব আমাদের ঘাটতি কোথায়। তাদের ক্রিকেটে এত উন্নতির কারণ তাদের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট এবং ঘরোয়া ক্রিকেট। বয়সভিত্তিক খেলার পাশাপাশি রঞ্জি ট্রফির মাধ্যমে তারা খেলোয়াড় তৈরির দারুণ একটা প্লাটফর্ম পায়। আর সর্বশেষ আইপিএলে এসে একটা খেলোয়াড় একদম পরিপূর্ণতা পায়।
আমাদের দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। আগে আমাদের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ বা জাতীয় লীগ অনেক জমজমাট হতো। জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরাও সেখানে খেলত। এখন এসব খেলা একদম বাজে অবস্থায় চলে গেছে। প্রিমিয়ার লীগে একসময় ৩০-৪০ হাজার দর্শক হতো। এখন তো মানুষ জানেও যে কবে কখন কোথায় খেলা হয়!
আমাদের আরেকটা বড় সমস্যা ফিটনেস নিয়ে। ইয়ো ইয়প টেস্টে ভারতে ১৬.২, পাকিস্তানে ১৭.২ এমনকি আফগানিস্তানে ১৭.৪ পেলে উত্তীর্ণ হয়। সেখানে আমাদের দেশে মাত্র ১২ পেলেই উত্তীর্ণ হয়। অর্থাৎ আমাদের খেলোয়াড়েরা ফিটনেসের বিশাল ঘাটতি নিয়ে খেলা শুরু করছে। ফিটনেসের সমস্যা পরিলক্ষিত হয় ফিল্ডিংয়ে আর রানিং বিটুইন উইকেটে।
স্পিনের উপর নির্ভরশীলতা আমাদের আরেকটা সমস্যা। আমাদের দেশে বিশ্বমানের পেস বোলার তৈরি করার কোনো প্রক্রিয়াই নেই। আমাদের দেশে যখন খেলা হয় তখন আমরা স্পিন উইকেট বানিয়ে পেস বোলার ছাড়াই খেলতে নেমে যাই। এই ঘটনা একদম শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতোই। আর এজন্যই স্পোর্টিং বা বাউন্সি উইকেটে গিয়ে আমরা পেস বোলিং দিয়ে তেমন কিছুই করতে পারি না।
একদিনের ফরমেটে আমাদের মোটামুটি অবস্থান থাকলেও টেস্ট ও টি টুয়েন্টি খেলায় আমাদের অবস্থা যাচ্ছেতাই। মূলত টেস্ট খেলাই হচ্ছে ক্রিকেট খেলার মূল ভিত। ভিত দুর্বল রেখে অন্য জিনিস নিয়ে যতই মাতামাতি করি তাতে কোনো লাভই হবে না। আগে টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করতে হবে। আমাদের টেস্ট একদম খেলাই হয় না। আরও বেশি থেকে বেশি টেস্ট খেলতে হবে।
বয়স ভিত্তিক খেলার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুল বা কলেজ পর্যায়ে খেলাধুলার উন্নয়ন করতে হবে। ন্যাশনাল ক্যাম্পের মাধ্যমে কিছু খেলোয়াড় সবসময়ই পাইপলাইনে রাখতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের মানোন্নয়ন করতে হবে। তিন ফরমেটের খেলার জন্য যথাসম্ভব আলাদা দল করার চেষ্টা করতে হবে। অন্তত সব ফরমেটের জন্যই কিছু স্পেশাল খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে।
সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, উন্নতি কখনোই রাতারাতি হবে না এটা সত্যি। উন্নতি করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি একটা পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে। সাকিব-তামিম-মুশফিক-রিয়াদের পরে দলের হাল কারা ধরবে তা এখনই ভাবতে হবে।
ওডি/ আরএডি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড