রহমান মৃধা
জন্মের পর পরই মা মারা গেছেন। বাবার সঙ্গে বসবাস। দিন দিন বাবা খারাপ আচরণ করতে শুরু করে। বাবা কিছু খারাপ লোকের কারণে মদে আসক্ত হয়। ঘরে ফেরে বা ফেরে না, ফিরলেও তার অশোভনীয় ব্যবহার দিনে দিনে খারাপ রূপ ধারণ করতে থাকে।
ডগলাসের বয়স ১৬ বছর হতেই সে বাড়ি ছেড়ে পাশের গ্রামে বুড়ো নানার কাছে চলে আসে। মা হারা ডগলাস আর মেয়ে হারা নানা একে অপরকে পেয়ে বেশ সুখেই আছে। তাছাড়া নানার অন্য কোনো ছেলেমেয়েও নেই। নানী বহু বছর আগে নিয়তির ডাকে দুনিয়া ছেড়েছে। বিশাল সম্পদের মালিক নানাভাই ডগলাসকে ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নিয়েছে। ডগলাস কলেজে ভর্তি হয়েছে, নানাবাড়ি থেকেই সে কলেজে আসা যাওয়া করে। ১৮ বছরের ডগলাসের নজরে পড়েছে একই কলেজে পড়ুয়া এক তরুণীর দিকে। সিডনি বার্লিন, কোটিপতি বাবার একমাত্র কন্যা যার জীবন গড়ে উঠেছে বিলাসিতার মধ্য দিয়ে।
এমন একটি বাবার মেয়ের সঙ্গে একজন ছন্নছাড়া মাতালের ছেলের ওঠাবসা সিডনির বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
এদিকে দুই তরুণ-তরুণীর প্রেমের কাহিনী জানাজানি হয়ে গেছে পুরো মহল্লায়। সিডনির জন্মদিনে বাবা তার একমাত্র মেয়ের জন্য বিশাল পার্টির আয়োজন করেছে। ডগলাসকে সিডনি দাওয়াত করেছে।
সে এসেছে সিডনির বাড়িতে তার নানা ভাইয়ের পুরনো গাড়িতে চড়ে। সিডনির বাবা তার বিশাল বাড়ি ডগলাসকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন। কোনো এক সময় তাকে বলে দিয়েছেন, তুমি বহুদূরে সরে যাও আমার মেয়ের জীবন থেকে, বিনিময়ে তোমাকে আমি তোমার পড়ালেখার খরচসহ যা দরকার তাই দেব।
আমার একমাত্র মেয়ে তোমার মতো একটি নিচু পরিবারের ছেলের সঙ্গে মিশে তার জীবন নষ্ট করুক তা আমি মেনে নিতে পারব না। ডগলাস সিডনির বাবার শর্ত প্রত্যাখ্যান করে এবং সিডনিকে না বলে পার্টি ছেড়ে নানা ভাইয়ের কাছে ফিরে আসে। সিডনি হঠাৎ ডগলাসের চলে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারে এবং সেও পার্টি ছেড়ে সেদিন সন্ধ্যায় ডগলাসের নানাবাড়ি চলে আসে। ডগলাস অনেক বুঝিয়ে সিডনিকে তার বাবার বাড়ি রেখে আসে। ডগলাস এবং সিডনির মধ্যে কলেজে দেখা হয় তার বাবার অজান্তে। এদিকে ডগলাসের নানাভাই তার সমস্ত সম্পত্তি তার নামে উইল করে দিয়েছে।
একদিন তিনি সিডনির বাবার সঙ্গে দেখা করেন ডগলাস এবং সিডনির প্রণয়ের ব্যাপারে, কিন্তু সিডনির বাবা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। জীবন থেমে নেই, চলছে জীবন তার নিজের গতিতে। ডগলাসের একমাত্র বন্ধু দিরিক এবং তার বান্ধবী সিনিকার গোপন প্রেমের কারণে সিনিকা গর্ভবতী হয়েছে। ঘটনাটি মহল্লায় রটার আগেই ডগলাস বন্ধুর বিবাহবন্ধনের জন্য দিরিক এবং সিনিকাকে নিয়ে গির্জার যাজকের কাছে যায় এবং বিবাহবন্ধন সম্পন্ন করে।
বাড়ি ফিরতে প্রথমেই নজরে পড়ে সিনিকার বাবার ভাড়া করা কিছু লোক এসে নানা ভাইয়ের বাগানবাড়ি ভাঙচুর করে এবং নানা ভাইকে ভীষণভাবে মারপিট করে বাগান বাড়িতে ফেলে যায়। ঘটনা জানার পর ডগলাস নানা ভাইয়ের বন্দুক নিয়ে শত্রুর খোঁজে বেরিয়ে যেতেই ডগলাসের বন্ধু দিরিকও তার সঙ্গে যোগ দেয়। সিনিকা নানা ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে তার জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে হঠাৎ বন্দুকের গুলি ঢুকে যায় সদ্য বিবাহিত দিরিকের বুকে এবং দিরিক তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। কী হতে কী হয়ে গেল! এদিকে নানাভাই হাসপাতালে মারা গেলেন। সদ্য গর্ভবতী সিনিকা স্বামীহারা হয়ে গেল। ডগলাস তার প্রেমিকার বুকে আগুন ধরিয়ে খুনের দায়ে জেলে ঢুকে গেল। সিডনি কোনোভাবেই ডগলাসের এত বড় শাস্তি মেনে নিতে পারছে না।
জন্মের শুরুতে একটি ছেলের ওপর দিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনার বন্যা বয়ে চলেছে যা ভাবতে কষ্ট লাগারই কথা। ডগলাসের সঙ্গে জেলে ঢোকার প্রথম দিনই সিডনির সঙ্গে তার দেখা হয়। ডগলাস সিডনিকে বলেছে তাকে যেন সে ভুলে যায় এবং মনে করে যেন সেও তার বন্ধু দিরিরের মতো মারা গেছে। সেদিনই ছিল সিডনির শেষ দেখা ডগলাসের সঙ্গে। সিডনি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চেষ্টা করেছে ডগলাসের সঙ্গে জেলে দেখা করতে কিন্তু সে বারবারই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সময় মানুষের জীবনের হাজারও বেদনার অবসান ঘটায়। সিডনি তার বাবার অনুরোধে নতুন জীবন শুরু করতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
সিনিকার কোলে বাবাহারা এক পুত্রসন্তান বড় হতে থাকে। সিডনির বিবাহিত জীবনে সব থাকতেও সুকি জীবন হয়নি। এক সন্তানের মা সিডনি, স্বামী শ্বশুর বাড়ির প্রাচুর্যে মদ-গাজায় আসক্ত হয়ে দিনের পর দিন জাহান্নামের অন্ধকারে বসবাস করছে। চার বছর পার হয়েছে তদন্তে সত্য ঘটনার উদঘাটিত হয়েছে। ডগলাসের গুলিতে নয় সিনিকার বাবার গুলিতে সেদিনের বন্দুক যুদ্ধ তার বন্ধু দিরিক ঝরে পড়েছিল মাটিতে। এ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় ডগলাস জেল থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে নানা ভাইয়ের বাড়িতে উঠেছে। স্মৃতি কথা বলে, যেখানে চোখ যায় মনের পাতার হাজারও ঘটে যাওয়া ভালোবাসার ঘটনা নানা ভাইয়ের বাড়ির চারপাশে লতার মতো জড়িয়ে রয়েছে। ডগলাস সেই স্মৃতিভরা লতা পাতার মাঝে বসত করছে একাকী। ডগলাসের জেল মুক্তির খবর জানতে পেরেছে সিডনি। চার বছর পার হয়েছে অথচ হৃদয় পড়ে আছে অতীতের সেই দিনগুলোর দিকে আজও সিডনির অস্থির মন কোনভাবেই তার সেই অতীতের ভালোবাসার ডগলাসকে না দেখে দিন কাটাতে পারছে না। কি করে!
শেষে স্বামীকে বলে উইকেন্ডে সে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে সময় কাটাবে। কিন্তু সে এসেছে নানা ভাইয়ের বাড়িতে দেখা করতে তার ডগলাসের সঙ্গে। অনেক মধুর সময় সিডনিরও রয়েছে নানা ভাইয়ের বাড়িতে যখন সে ডগলাসের সঙ্গে সারাদিন কাটিয়েছে সেখানে। পুরনো বোতলে নতুন শরবত।
সিডনির বিবাহিত জীবনে রয়েছে তার স্বামী এবং সন্তান। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে যদি সেই পুরনো ভালোবাসা হৃদয়ে হাজির হয় কি হবে তখন! বরং স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকা ভালো। এমনটি বিবেচনা করেই সিডনি উইকেন্ডে বন্ধুত্বের মত সময় কাটিয়ে বিদায় নিয়ে চলে আসে বাড়িতে, পুরনো দিনের ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে। বিদায়ে ডগলাস বলেছিল সিডনিকে, ‘যেখানে যেভাবেই থাকো না কেন আমার হৃদয় থাকবে তোমার পাশে কথা দিলাম।’ সিডনি বাড়ি এসে বিষয়টি তার স্বামীকে বলে।
স্বামী মদ-গাজায় আসক্ত। এমন একটি ঘটনা শোনার পরও তার কোনোরকম অনুভূতি হলো না! ভাবতে ভাবতে সিডনির চোখ জলে ভরে গেল। নিয়তির পরিহাস কী হওয়ার স্বপ্ন ছিল আর কী হয়ে গেল! বছর পেরিয়ে গেছে, জীবন চলছে তার গতিতে। সিডনির ছেলে স্কুলে পড়ে, নাম হরাল্ড। হরাল্ড এক্সিডেন্ট করেছে স্কুলে যেতে। প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। হরাল্ড ইমারজেন্সিতে চিকিৎসাধীন। এ খবর জানতে পেরে সিডনি হঠাৎ ফোন করেছে ডগলাসকে। ডগলাস ফোনের কাছে না থাকায় সিডনি ম্যাসেজ রেখেছে তার ছেলে হরাল্ড এক্সিডেন্ট করেছে এ ব্যাপার। ডগলাস দিনের শেষে ফোনের ম্যাসেজ পড়ার পর তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে হাসপাতালের দিকে রওনা দিয়েছে। রেড় লাইটের সিগনালে গাড়ি ব্রেক করেছে অথচ গাড়ির ব্রেক কাজ করেনি। চলন্ত অবস্থায় ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গাড়ি উল্টে যায় এবং তৎক্ষণাৎ ডগলাস মৃত্যুবরণ করে, যা নিবন্ধিত করা হয় একই হাসপাতালে। এদিকে সিডনির ছেলে হরাল্ড মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, তার একটি হার্টের দরকার। শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হার্ট পেয়ে যায় এবং হরাল্ডকে বাঁচিয়ে তোলে।
ডগলাসের মৃত্যুর খবর সিডনি শুনেছে। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়েছে। নিয়তির পরিহাস বোঝা দুষ্কর। মাসখানেক যেতেই হরাল্ড সুস্থ হয়ে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। সাধারণ রুটিন অনুযায়ী হরাল্ডকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেকেছে। মা সিডনি সঙ্গে গিয়েছে। ডাক্তার সব কিছু ঠিক আছে বলে জানালেন হরাল্ড তোমার ভাগ্য সত্যিই ভালো যে সেদিন যদি ডগলাসের আকস্মিক দুর্ঘটনা না হত তাহলে তোমাকে বাঁচানো সম্ভব হত না আমাদের। বেচারা ডগলাস হঠাৎ গাড়ি দুর্ঘটনায় ঐদিনই মারা যায়। ভাগ্যিস সে তার হার্ট জীবিত থাকা অবস্থায় ডোনেশন করে রেখেছিল, নইলে যে কী হতো! হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডগলাসের হার্ট হরাল্ডকে দিয়ে তার জীবন বাঁচিয়েছে। সিডনি জানত না ডগলাসের গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ।
এও জানত না তার ছেলের জীবন বাঁচাতে ডগলাসের অর্গন ব্যবহৃত হয়েছে। ডাক্তারের সব কথা সিডনি শুনছে নিশ্চিন্তে নিরবে আর হয়ত ভাবছে তাহলে কি ডগলাস জানত এমনটি একদিন হবে? আর তাই কি সে আমার বিদায়ে সেদিন বলেছিল, “যেখানেই থাকো, ছাঁয়া হয়ে তবু হৃদয়ের পাশে রইব।” [রাতের ডিনার শেষে “সুইডিশ ফিকার” সঙ্গে সিডনির জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনার শেয়ার ভ্যালু থেকে।]
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড