মাহবুব নাহিদ
আমাদের দেশে বিদেশ যাওয়াটা খুব বড় একটা যোগ্যতা বলে মনে করা হয়। বিয়ের বাজারে বিদেশে থাকা পাত্র-পাত্রীদের অনেক মূল্য। ছেলে বা মেয়ে দেশে থাকলে কি করে, কোথায় যায় কত ধরনের বিবরণ শুনতে চায় সবাই। অথচ ছেলে বা মেয়ে বিদেশে থাকে এটা শুনলে আর কোনো কিছুরই দরকার পড়ে। এ এক দারুণ যোগ্যতা। এই যোগ্যতা সবার থাকে না, তাই যাদের যোগ্যতা আছে তারা সমাজের সেরা মানুষের কাতারে পড়ে। কিন্তু তারা বিদেশ গিয়ে কী করছে, কীভাবে জীবনযাপন করছে তা নিয়ে কিন্তু কারও মাথাব্যথা নেই।
সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে দিনের পর দিন নারীরা ফেরত আসছে। তারা ইচ্ছা করে আসছে না, তাদের আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে ৫০হাজার নারীর শ্রমিক ফেরত এসেছে, ২০১৮ সালের সংখ্যাটাও এমন, ১৯ সালের সংখ্যা হোক যেমন তেমন এবার তো লাশও আসতে শুরু করেছে। সুমি আকতার নামের এক নারীর ভিডিও সারাদেশ তথা সারাবিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছে। এই বর্বর অত্যাচারের দৃশ্য দেখলে শিউরে উঠবে সবাই। কিন্তু সৌদি আরবের কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করা যায় না। পবিত্র এক ভূমি এই সৌদি আরব। কিন্তু সম্প্রতি সৌদি বাদশা ও তার সন্তানের আচরণে সন্তুষ্ট নয় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ। তারা জায়গা দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের ওপর।
ইয়েমেনে সৌদির বর্বর আচরণ নাড়িয়ে বিশ্ব বিবেককে। তারা এখন চালু করেছে সিনেমা হল কিংবা হালাল বারও। আগাতে গিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব।
বর্তমানে বাংলাদেশের নারীদের ওপর যে পৈশাচিক আচরণ তারা করছে তা নিন্দনীয়। তারা আমাদের দেশের নারীদের গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ব্যবহার করতে চাচ্ছে যৌনকর্মী এমনকি দাসী হিসেবে।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে দাসপ্রথার এক চরম দৃষ্টান্ত দেখতে হচ্ছে আমাদের। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকেই ফিরে আসে শ্রমিকরা কিন্তু তার ৭০/৮০ভাগই সৌদি থেকে।
এখন কথা হচ্ছে এত নির্যাতনের পরেও নারীরা কেন যায়? কীসে এত লাভ? নারীদের মুখেরই কথা "এই দেশে তো স্বামীরাও আমাদের ওপর নির্যাতন করে।" এখানে থেকে নির্যাতিত হওয়ার চেয়ে দূরে থেকে নির্যাতিত হওয়াকে সমর্থন করেন অনেকে। আর অনেকেই অর্থের অভাবে এই পথ বেছে নিয়েছেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। কারিগরি প্রশিক্ষণসহ গৃহস্থালির কাজ করার জন্য আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নেয় নারীরা। যাওয়ার জন্য এত এত আয়োজন। তবে যাওয়ার আগেই অনেকে প্রতারিত হয় দালাল কর্তৃক। অনেক সময় দালালরা টাকা নিয়ে কাজ করে না। আর কাজ করলেও ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ পর্যন্ত দিতে হয় দালালদের ।
সৌদিতে গিয়ে অনেকেই পায় না স্থায়ী কোনো কাজ। অনেকেই পায় খুবই কম মানের বেতন। আর সাথে থাকে এই অমানুষিক নির্যাতন। নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বহুদূরে। এখন এর বিরুদ্ধে আমাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে রুখে দাঁড়াতেই হবে। ২০১৫ সালে করা চুক্তিমাফিক অনেক শ্রমিক নিয়ে সৌদি আরব। কিন্তু চুক্তিতে বিভিন্ন ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে ফেলেছে সৌদি আরব। আর সুযোগের সৎ ব্যবহার করছে তারা। চুক্তির কারণেও নাকি আমরা পিছিয়ে আছি বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।
প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে আমার দেশের মেয়েরা। সুমি আকতারের বাঁচার আকুতিই বলে দিচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতির কথা। আমাদের দেশের শ্রমিকেরা সৌদিতে কেমন আছে তা ওই একটা ভিডিও নিয়েই বুঝে ফেলা যায়। সুমির কান্না যেন পুরো বাংলাদেশের কান্না। এই কান্না থামাতে আমাদের তৎপর হতে হবে। রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে, কূটনৈতিকভাবে হোক আর যেভাবেই হোক না কেন আমাদের এই সমস্যা সমাধানের রাস্তা বাতলাতে হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড