রহমান মৃধা
শব্দ দূষণ (noise pollution) একটি জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিতে পারে, তাকি আমরা জানি? অনেকেই জানেনা শব্দ দূষণ কত ক্ষতিকর। যারা শব্দ দূষণের সঙ্গে জন্ম থেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তারা তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে যা তারা জানেনা।
কিন্তু যারা দেশের বাইরে থেকে এসে হঠাৎ শব্দ দূষণের কবলে পড়ছে তারা তৎক্ষণাৎ এর ভয়াবহতা অনুভব করতে পারছে। আজ এই শব্দ দূষণের ওপর বাস্তব অভিজ্ঞতার কিছু তথ্য তুলে ধরব।
সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনা, যা ঘটেছে সুইডেনের বায়োমেডিক্যেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে। BUET (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) এবং KTH-এর ( সুইডেনের রয়েল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি) মধ্যে LPEP-এর (Linnaeus-Palme exchange programme is an Swedish exchange programme) চুক্তি অনুযায়ী দুইজন KTH-এর শিক্ষার্থী দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে যায়। সুইডিশ শিক্ষার্থী শুরু থেকেই শব্দের কারণে রাতে ঠিক মত ঘুমোতে না পারায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে, ফলে তারা যথা সময়ের আগেই বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের যথাসময়ের আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা জানিয়েছে যে ‘সঠিকভাবে না ঘুমানোর কারণে শ্রেণীকক্ষে অমনোযোগী হওয়া, শতভাগ কনসেন্ট্রেশন না দেয়া, রাগান্বিত ভাব এবং ইরিটেশনের কারণে মানসিক অশান্তি দেখা দেয়। তাই বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। একই ঘটনা ঘটেছিল কয়েক বছর আগে সুইডেনের আরেকজন প্রফেসর যখন দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকাতে ছিলেন।
তিনি সুইডেনে আসার পরও ঘুমের ঘোরে শুনতেন গাড়ির হর্নের শব্দ। সুইডেনে বিশেষ জরুরি কারণ ( accident) ছাড়া গাড়িতে হর্ন কখনও কেউ দেয়না। তার কয়েকমাস সময় লেগেছিল মানসিকভাবে স্বস্তি ফিরে পেতে। অন্যদিকে একই শর্তে দুইজন মেয়ে BUET থেকে Linnaeus-Palme exchange programme-এ মে মাসে সুইডেনে এসে নির্ধারিত সময়ে তারা তাদের কোর্স শেষ করে বাংলাদেশে যথা সময়ে ফিরে গিয়েছে কোন সমস্যা ছাড়া।
যতটুকু জেনেছি বা দেখেছি তা হলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর শব্দ দূষণ বা পারিপার্শ্বিকতার কারণে বিদেশে এডজাস্ট করতে সমস্যা হচ্ছে না। তাদের সমস্যা দেখা যাচ্ছে শিক্ষা প্রশিক্ষণের ধরণের ওপর। কারণ দেশের মুখস্থ শিক্ষার কারণে এখানে লার্নিং বাই ডুইং কনসেপ্টের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করা কঠিন হয়ে পড়ছে অনেকের ক্ষেত্রে।
যাইহোক শব্দ দূষণের কারণে সুইডিশ শিক্ষার্থীর মানসিক অসুস্থতার কথা জানার পর আমার বিবেক বেশ নাড়া দিয়েছে। শব্দ দূষণের কারণে কি তাহলে বাংলাদেশের মানুষের চরিত্রের এমনটি বহিঃপ্রকাশ?
অফিসে অমনোযোগী। ক্লাসে অমনোযোগী। বাস ড্রাইভার, ট্রেন চালক এবং লঞ্চ চালকের অমনোযোগীর কারণে কি এত দুর্ঘটনা? চিকিৎসকের ভুল ডায়োগনোসিসের কারণে রুগীর অকাল মৃত্যু।
রাতে ঘুমোতেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে নাক ডাকার প্রতিযোগিতা। বিচারক তার অমনোযোগিতার কারণে দিচ্ছে রায়ে ভুল সিদ্ধান্ত। শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ঘুমাচ্ছেন। প্রশাসন তার নিজের গতিতে চলছে। বিবেক তার ভারসাম্য হারিয়েছে বিধায় দুর্নীতি এখন সারা দেশে “নীতিতে” পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের ভারসাম্য হারানোর পেছনে কি তাহলে শব্দ দূষণই দায়ী? কি করণীয় থাকতে পারে শব্দ দূষণ থেকে রেহাই পেতে? আদৌ সম্ভব কি বাংলাদেশের পরিবেশের পরিবর্তন করা? নাকি জাতি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত।
অকারণে রিকশার ক্রিং ক্রিং শব্দ, গাড়ির হর্ন বাজানো, যেখানে সেখানে মাইক লাগানো, সারাদিন মিছিলের চিৎকার এসব দূর করা আশু প্রয়োজন। ঘর দুয়ার তৈরিতে শব্দ নিরোধক উপাদান ব্যবহার করা দরকার বিশেষ করে আবাসিক এলাকায়।
বহুদিন আগের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ে গেল যা না উল্লেখ করলেই নয়। আমার এক সুইডিশ বান্ধবীর প্রথম সন্তান, বয়স দুই বছর হয়েছে স্বত্বেও সে বান্ধবীর বুকের দুধ পান করা বন্ধ করছে না। আমাকে বিষয়টি জানালে বান্ধবীকে বললাম বুকের স্তনবৃন্তে একটু মরিচের গুড়া দিতে তাহলে ঝালের কারণে হয়ত সে দুধ পান করা ছেড়ে দিবে। বান্ধবী আমার কথা মত তাই করেছিল কিন্তু তেমন কাজ হয়নি বরং ঘটনা ঘটেছিল উল্টো। বান্ধবীর সন্তান মরিচের গুড়া না দিলে দুধ পান করতে পছন্দ করছে না বলে জানিয়েছিল। বান্ধবী বেশ বিপদে পড়েছিল আমার কথা শুনে। পরে বলেছিলাম মরিচের গুড়া দেয়ার দরকার নেই দেখবে রুচির পরিবর্তনের কারণে দুধ পান করা ছেড়ে দেবে। কয়েকদিন যেতে যেতে জানিয়েছিল তার সন্তান দুধ পান করা ছেড়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের হয়ত ঘুম নাও হতে পারে যদি শব্দ দূষণ না থাকে প্রথম দিকে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং শব্দ দূষণের প্রতিরোধ করতে পারলে জাতি স্বস্তি এবং শান্তি ফিরে পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড