• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিচারের আগেই আন্দোলন কেন

  মাহবুব নাহিদ

২১ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৩০
সড়ক আইন
ছবি : সংগৃহীত

কয়েকদিন আগেই চালু হয়েছে নতুন সড়ক আইন। অনেকের বহু প্রতীক্ষার ফল এই সড়ক আইন। নিরাপদ সড়কের জন্য লড়ে যাওয়া ইলিয়াস কাঞ্চন এগুলো নিয়ে কাজ করেছেন বহুদিন। কিছুদিন আগে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী নিহতের পরে আন্দোলন হয়েছিল সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে।

এখন নতুন সড়ক আইন চালু হওয়া আসলেই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নতুন সড়ক আইনে যেসব বিষয় যুক্ত হবে তা কিছুটা হলে ভীতি বাড়াবে চালকদের। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর শাস্তি বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন মাত্রায়। দুই গাড়ি পাল্লা দিলে বা বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটলে দেয়া হবে তিন বছরের সাজা। থাকবে না জামিনের সুযোগ। ইচ্ছাকৃত ভাবে খুন করা হয়েছে প্রমাণ হলে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য ন্যুনতম অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে। এবার থাকছে চালকদের জন্য পয়েন্টের ব্যবস্থা। ১২ পয়েন্ট হয়ে গেলে বাতিল হয়ে যাবে লাইসেন্স। মদ্যপান অবস্থায় চালানো, হেলমেট না থাকা, শিশু,মহিলা বা প্রতিবন্ধীদের সিটে বসলেও থাকছে শাস্তি।

শাস্তিই পারবে সমাধান এনে দিতে? কারণ আমাদের দেশের সড়কগুলো জেনো একেকটা মৃত্যুপুরী। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তথ্য অনুযায়ী এবারের ঈদ উল আযহায় সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ২৫০টি দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৭৮৮ জন আহত হয়েছে

ঈদ উল আযহার ১৩ দিনে সড়কপথে ১৯৯ দুর্ঘটনা ২৫৩ জন নিহত ৭৬৫ জন আহত, নৌপথে ২১ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ৫১ জন নিখোঁজ ও ২৩ জন আহত, রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়েপূর্বাঞ্চলে ২১ জন ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯ জনসহ মোট ৩০ জন নিহত হয়েছে।

আমাদের রাস্তাঘাটের এই বেহাল দশা দূর করতে চাই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আমাদের পরিকল্পনা তো নাই উল্টা আছে অনিয়মে জর্জরিত ব্যবস্থা। সড়কপথে দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এর কারণ-বেপরোয়া গাড়ি চালানো, সিগন্যাল না মানা, অপ্রয়োজনীয় ওভারটেকিং ইত্যাদি। শুধুমাত্র যানবাহনের দোষেই যে দুর্ঘটনা হয় তা নয়। পথচারীদের যথেষ্ট অবহেলা রয়েছে রাস্তায় চলাফেরায়। জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, ফুটপাত ব্যবহার না করা এর অন্যতম কারণ। দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তার ক্ষতিপূরণ তো দেয়া সম্ভ ব না। কিন্তু চালকের একদম দোষ থাকা সত্ত্বেও বিচার হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। হিসাব করলে দেখা যায় শতকরা দশ ভাগ দুর্ঘটনারই বিচার হয় না। শুধু যানবাহন, চালক বা পথচারীদের উপর দ্বায় দিলেই হবে না। আমাদের সড়কের অবস্থা যে খুব ভাল তাও নয়। সড়কের বেহাল দশাও দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ। অথচ আমাদের দেশে রাস্তা নির্মাণে খরচ হয় ইউরোপীয় দেশের চেয়েও বেশি। এত খরচ হওয়ার পরও যদি রাস্তার এই বেহাল দশ হয় তাহলে আমাদের নিতান্তই দুর্ভাগ্য।

অন্যদিকে ট্রেনের দুর্ঘটনা ঘেঁটে দেখলে জানা যায় অধিকাংশ দুর্ঘটনাই হিয় ক্রসিংয়ে। আমাদের রেলপথে বৈধের চেয়ে অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা বেশি। অবৈধ ক্রসিংয়ে থাকার কথা না তবে বৈধ ক্রসিংয়ের অধিকাংশ জায়গায়ই নেই লাইনম্যান,গেট বা কোনো একটি ব্যবস্থা। এটা তো গেলো রেলওয়ে গভর্নিং বডির ব্যর্থতার কথা। আমাদের দেশের রেললাইন গুলোতে পাতি, নাট বল্টু যে হারে চুরি হয় তা রেকর্ড হবার মতোই। চুরি তো সাধারণ মানুষই করে। নাটবল্টু, পাতির কারণে বগিচ্যুত হবার ঘটনা ঘটে থাকে। এসব রেললাইন পুনর্নির্মাণ বা সংস্কারের নেই কোনো উদ্যোগ। নতুন সড়ক আইন মাত্র কার্যকর হয়েছে। এখনো সবাই ঠিকমতো সবকিছু জানেও না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে আইন যে সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে তা কিন্তু নয়!

কারণ শাস্তি কঠিন হলেই পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট দেখা দেয়। তারা পুরো দেশ জিম্মি করে রাখে। অধিকাংশ মামলার শাস্তিই হয় না। অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি দিলেও আবার ধর্মঘট। পুরো দেশ অচল করে ফেলে এরা।

এবার তো আইন পাশের সাথে সাথেই আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। এই কয়দিন তারা আন্দোলন করেছে। সারাদেশে ধর্মঘট পালন করেছে। এভাবে আগে থেকে না জানিয়ে ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

পরিবহন মালিকদের কাছে শুনলে তারা বলে তারা নাকি কিছুই জানেনা। এদিকে ধর্মঘটের নামে তারা চালিয়েছে এক ধরনের হয়রানি। তারা রাস্তায় নামেনি কিন্তু যারা নেমেছে তাদের করেছে অপদস্থ। অপমান করেছে শিক্ষার্থীদের। কারণ তাদের জন্যই এই আইন। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে তারা কেন ইলিয়াস কাঞ্চনের কুশপুত্তলিদাহ করলো? তার কি দোষ? আইনে তো আর বলেনি যে বিনা অপরাধেই শাস্তি দেয়া হবে! তাহলে আগেই কেন শাস্তি কমানোর জন্য এই আন্দোলন? তাহলে কি তারা নিজেরাই চায় অসংগতি ঘটাবে?

এদের পিছনে অশুভ কোনো শক্তি কাজ করে। এই সমস্যা দূর করতে হলে অশুভ শক্তির মূলোৎপাটন করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা দূর করতে প্রয়োজন মানসিক অবস্থার উন্নতি। শুধু মুখে আওয়াজ তোলার জন্য না। যখন একদম নিচ থেকে উপর পর্যন্ত সবার মধ্যে এই ধারনা সৃষ্টি হবে যে সড়ক নিরাপদ রাখবো সেদিন সড়ক নিরাপদ হবে। নাহয় সড়কে মৃত্যু চলবেই। নতুন আইনে অনেক ভাল দিক রয়েছে, এখন প্রয়োজন সঠিকভাবে কার্যকর হওয়া।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড