ডা. রাজীব দে সরকার
আমার মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করল। অগ্রজ হিসেবে এমন একটি খবর কোনোভাবেই মন থেকে মেনে নিতে পারছি না। যদি এটি আত্মহত্যাই হয়ে থাকে, তবে এর কারণ নিরূপণ না করলে পাপ হবে।
আমাদের মেডিকেল কলেজগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা ও ঘটনা বিগত বছরগুলোতে অনেক অনেক বেড়েছে। বিষণ্ণতার কারণে একটা ছাত্র আত্মহত্যা করবে এটা মেনে নিলে শিক্ষক হিসেবে রাতে ঘুম হওয়ার কথা না। যে মানুষটার দেশের সর্বোচ্চ মেধা শ্রেণি/পেশাজীবী শ্রেণির সদস্য হবার কথা ছিল, সে নিজেই নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে, এটা একটা অসুস্থ সমাজ কিংবা একটা অসুস্থ সিস্টেমের এভিডেন্স বহন করে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমান গুরুত্বপূর্ণ, এটা আমরা বুঝি, কিন্তু মানি না। যদি মানতাম, তবে এমবিবিএস কোর্সের প্রতিটি পেশাগত পরীক্ষার আগে আমরা কাউন্সেলিং ক্লাব করে শিক্ষার্থীদের যত্ন নিতাম।
এক একটা প্রফেশনাল পরীক্ষা আমার কাছে এখনো দুর্যোগের মতো মনে হয়। যতখানি না শারীরিক, তার চেয়ে ঢের গুণ বেশি মানসিক। যখন আমি পরীক্ষা দিতাম, তখনো এটা মনে হতো। আজ যখন পরীক্ষা কন্ডাক্ট করি, এখনো দুর্যোগই মনে হয়।
দুর্যোগ আসার আগে দুর্যোগের প্রস্তুতি থাকতে হয়। গড়ে তুলতে হয় স্পেশাল টাস্কফোর্স। আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হয়। দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিতে হয়।
এ সকল কিছুর ব্যবস্থা করবে কে?
যদি সরকার কিংবা মন্ত্রণালয়ের দিকে মুখ তুলে চেয়ে থাকি, তবে আরও কিছু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। ফেইসবুকে আরও কিছু আবেগী পোস্টিং, আবেগী শেয়ার বা আবেগী মূর্খতার মাঝেই আটকে যাব আমরা।
মেডিকেল কলেজের সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে, আসুন মাঠে নামি। আমার কোনো শিক্ষার্থী নিজেকেই নিজে শেষ করে দিচ্ছে, তার গল্পটা পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলছে, এটা এই সাফল্যের বাংলাদেশে, উন্নয়নের বাংলাদেশে মেনে নেওয়া যায় কি? অন্তত বিষণ্ণতা আমার চেনা একটা মুখকে আজ রাতে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যাবে শুধু পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে, সেই রাতে ভোর যেন বাংলাদেশ না দেখে।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড