• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দৈনিক অধিকার নবান্ন সংখ্যা-১৯

পেন্সিলের ঢেউ এঁকে ভাসাচ্ছি কাঠগোলাপ

  লুফাইয়্যা শাম্মী

২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৪৭
কবিতা
ঝিঁঝিঁপোকা, নদীর ভেতরে যাবার আমার কোনো রাস্তা নেই (ছবি : সম্পাদিত)

ঝিঁঝিঁপোকা

এক আমার ভেতরে আমি বৃদ্ধ হই, যেমনটা পুরনো ইট বিছানো পথ- যা চলে গেছে মধ্যবয়স্ক বকুল গাছের গোড়া পর্যন্ত। খোয়া খোয়া ইট, চোখ খুলে ছড়িয়ে পড়ছে, চমকে-থমকে দাঁড়ায় জুতো।

ঝিঁঝিঁপোকা- শৈশবের কালো চোখ খুঁজতে গিয়ে বাদামী চোখ নিয়ে ফিরে এসেছি। সে চোখকে সঙ্গ করে একটা একটা ইট কুড়িয়ে বানাচ্ছি দালান। আর শৈশবের মার খাওয়া চোর- যে কিনা বাড়ির পেছনে জলপাই গাছে বাঁধা ছিলো সারা রাত- তার হাতে বাঁশঝাড় খুঁড়ছি।

দ্যাখো- কঞ্চির মতো বাঁকানো তোমার হাসি দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি অথচ আমার শৈশবকে কখনোই হারাতে দেইনি।

দুই এ মর্মর চোখে- গত শীতের পরে ওম আসেনি চুলের গোড়ায়, বন্দিরাত থেকে তারার ছায়ায় ঢেকে গেছে শোক, ক্লান্তির পিঠে রচিত হয়েছে একরাশ তপ্ততা।

ঝিঁঝিঁপোকা, নদীর ভেতরে যাবার আমার কোনো রাস্তা নেই। কাটা হয়ে ছড়িয়ে থাকে কুয়াশা ভোর, নরম ঘাসে তুলতুলে নখ বিধে যায়, দীর্ঘ চষ্ণুতে নেড়ে দেয় সুখ, চুষে খায় দুঃখের ভাজ।

পেন্সিলের ঢেউ এঁকে ভাসাচ্ছি কাঠগোলাপ। নিয়মকরে শুকাচ্ছি পায়ের পাতা। বিরহকাল ট্রেন হয়ে ছুটে মাথার ভেতর। নৈঃশব্দের কোলাহলে ভাঙছে শরীর। রক্ষা করো। তপ্ত করো। ওম ছড়িয়ে দেখাও নদীর পথ৷

তিন বুনো উদ্দামে ভাঙছে পোয়াতি শরীর, নিভু নিভু চোখ হ্যাজাক জ্বালিয়ে দেখাচ্ছে পথসীমা। বৃষ্টিদিবসে ফিরে আসে দিন। ময়নাতদন্তের বৈঠকে হেরে গেছে সেসব। ও ঝিঁঝিঁপোকা, অচেনা আঙুল ছড়িয়ে বুকে তুলো, আদর দিয়ে বুক চিড়ে গেঁথে দাও সেসব অনুযোগ! নিভৃতচারী, শায়িত পালঙ্কে উদ্ধত কণ্ঠ- দাও বিছিয়ে । নগ্ন প্রেমের নোনতা সুখ ঈশ্বর কে শেখাও। জ্বলে উঠুক বুকের আগুন, তেজারতির দু’টি মোমশিখা ধ্বংসের দিকে। চলো, ভবিষ্যৎ কুড়াই পাথারে- হাহাকারে-যৌথ শরীরে।

চার তোমাকে স্থির রেখে উত্তাল আমি। ক্লান্ত-বিবর্ণ ধুলোমাখা হাতে মুছে যাই কাচের দেয়াল। নিটোল মায়ায় ভরে উঠে ফসিল! চাপা গোঙানির শীর্ষে বসে জপছি, প্রার্থনায় ডাকছি, নত হয়ে ভাবছি উন্মুখ ঠোঁটের বাঁধ। ঝিঁঝিঁপোকা, কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ হেলে গেছে। নদীর বাঁক ঘুরে গেছে তোমার সীমানায়। আমরা অনাগত ইতিহাস পালকে উড়িয়েছি, মেঘের সাটিনে ঢেকেছি চোখ, বৃষ্টি ঝরেছে তামাটে গালে, স্পর্শহীন আদরে। মমতায় খুলেছি রোদের তাপ, তবুও ধেয়ে এসেছে দুর্যোগ, সম্ভোগে পাশ ফেরেছে সব আলো। তুমি আর এসোনা, ফিরে যাও তোমার ভেতর।

পাঁচ নামতা আওড়ানোর খানিক অভ্যাসের ভেতর থেকে ভুলি সব গুণিতক সময়। ভুলভাল অংক কষে খাতা ভরি, দিস্তার পর দিস্তা ভরে যায় গোল্লায়। কুসুমিত হিসাব-নিকাশ ঝাঁপসা রঙের মেঘছিটা দিয়ে চোখে লাগায় চলমান-অচলমান প্রাণ। ঝিঁঝিঁপোকা, আকাশ হতে পারতো সবুজের জমিন, লাঙল চাষে উর্বর করতাম বৃক্ষরূপী আকাশকে। কাদাহাতে চষে রোপন করতাম তীব্রঘ্রাণ।

মেহনতি মনটাও বুড়িয়ে গেছে। এপাশ ওপাশ খুঁজে না কাউকে, শুয়ে যায় না কোল ঘেষে। ইদানীং সব অংক ভুল হচ্ছে, গোল্লায় ভরে উঠেছে শরীর, অগুণিত শূন্যপ্রাণ।

আরও পড়ুন : প্রয়োজনে মায়ের গহনায় দিবে হাত

ওডি/এসএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড