• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জিপি-রবিতে প্রশাসক নিয়োগ দিচ্ছে সরকার

  অধিকার ডেস্ক

১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:২২
জিপি-রবি
শেষ পর্যন্ত প্রশাসক বসছে জিপি-রবিতে (ছবি : সংগৃহীত)

দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন (জিপি) ও রবি আজিয়াটার কাছ থেকে ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনা দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত প্রশাসক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। জিপি-রবিতে প্রশাসক বসানোর অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাঠানো চিঠির বিষয়ে সম্মতিসূচক সিদ্ধান্ত দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

বিটিআরসি কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ওই চিঠি টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায় আর ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পজিটিভ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) জিপি ও রবিতে প্রশাসক নিয়োগের জন্য বিটিআরসির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দু’পক্ষের কেউ এখন এসে বলতে পারবে না যে, প্রশাসক বসাবেন না। কারণ আমরা আমাদের সব চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনোটিই যদি কাজ না করে এবং সবটিই যদি ব্যর্থ হয় তাহলে এখন প্রশাসক বসানো ছাড়া আর বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।

প্রশাসক হিসেবে কে যাবেন সে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সচিব কিংবা ওই পর্যায়ের বা দায়িত্বশীল কেউ যাবে প্রশাসক হিসেবে। তবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। প্রশাসকের দায়িত্ব হবে শুধু টাকা তোলা। যদি এর মধ্যে তারা টাকা দিয়ে দেয় তাহলে প্রশাসক বসবে না বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, গত জানুয়ারি হতে অপারেটর দুটির সঙ্গে আমার ও বিটিআরসির দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। সেখানে কেউ কোনোভাবে জড়িত হওয়ার আগেই আমরা বলেছি একটা টোকেন অ্যামাউন্ট দিয়ে আপনারা আলোচনায় বসেন। কিন্তু, তারা এ প্রস্তাবে কোনো ধরনের সাড়া দেয়নি।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের উদ্যোগের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়েছিলে, এই টোকেন মানি গ্রামীণফোন দেবে ২০০ কোটি আর রবি দেবে ৫০ কোটি। এটি যদি দেওয়া হয় তাহলে দুই পক্ষে অডিটর ডেকে নেগোশিয়েশনে যাওয়া হবে। এটিও তারা দেয়নি।

প্রশাসক বসানোর বিষয়ে যা বলছে দুই অপারেটর জিপি ও রবি

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, বিতর্কিত নিরীক্ষা আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি। এজন্য এ বিষয়টি নিয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। আমরা মনে করি, বিচারাধীন কোনো বিষয়ের ওপরে এ ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আরোপ আইনানুগ নয়। আর বিচারাধীন বিষয় চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে সে বিষয়ে প্রশাসক নিয়োগের মতো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অবকাশ রাখে। প্রশাসক আরোপের মতো কোনো সিদ্ধান্ত এ দেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি।

অপরদিকে, গ্রামীণফোনের (জিপি) হেড অব রেগুলেটরির অ্যান্ড অ্যাক্টিং হেড অব কমিউনিকেশন হোসেন সাদাত বলেন, বিটিআরসির কাছ থেকে কোনো রকম নির্দেশনা না পাওয়ায় অনুমান নির্ভর কিছু বল ঠিক হবে না। বিটিআরসির ভিত্তিহীন এবং বিবাদমান নিরীক্ষা সংক্রান্ত দাবিটির গঠনমূলক সমাধানের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সদয় নির্দেশনা ও সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। বিষয়টি সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে আমাদের বিবেচনাধীন আছে। আমরা সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে নতুন কিছু নির্দেশনা পেয়েছি যা বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিটিআরসির ভিত্তিহীন বিধিনিষেধ ও লাইসেন্স সংক্রান্ত কারণ-দর্শানোর নোটিশটি এখনো বলবৎ আছে। যার ফলে গ্রামীণফোনের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম ও গ্রাহকসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিটিআরসির পাওনা দাবি যত

বিগত বছরগুলোতে ধরে অডিট করা নিয়ে নানা জটিলতা, আইন-আদালতের পর শেষ পর্যন্ত তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করানো অডিটে বিটিআরসি গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে। একইসঙ্গে রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা দাবি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির। পাওনা দাবি আদায়ে বিটিআরসির ব্যবস্থামূলক যেসব পদক্ষেপ : ২০১৯ সালের এপ্রিলের শুরুতে পাওনা দাবি পরিশোধে অপারেটর দুটিকে চিঠি দেয় বিটিআরসি। এরপর নানা দেন-দরবার, অপারেটর দুটির ব্যাখা, আলোচনার পর কোনো পথ না বের হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। ৪ জুলাই গ্রামীণফোনের জন্য বরাদ্দ ব্যান্ডইউথ ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশ এবং রবির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ব্লক করে দেয় বিটিআরসি। ততদিনে অডিট চূড়ান্তের এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। তবে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার সীমিত করায় সেটি গ্রাহকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে- বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে এনওসি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২২ জুলাই অপারেটর দুটিকে দেয়া হয় এই নির্দেশনা। আর এনওসি বন্ধের ফলে অপারেটর দুটির সব প্যাকেজ অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায়। নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি বন্ধ, নেটওয়ার্ক বিস্তারের অনুমোদনও বন্ধ হয়ে যায় এমনকি ব্যাংক লোন বা কোনো ক্ষেত্রে অন্য কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করাও। তাতে করেও দাবি আদায় না করতে পেরে ৫ সেপ্টেম্বর লাইসেন্স (টুজি-থ্রিজি) কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে এক মাসের সময় দিয়ে দুই অপারেটরকে শোকজ নোটিশ দেয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি।

এরপর সমস্যা আরও বাড়লে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের দিন অর্থমন্ত্রী বিষয়টি সুরাহা করতে উদ্যোগী হন। তিন সপ্তাহের মধ্যে এই পাওনা জটিলতার একটি সুরাহা হয়ে যাবে। দু’পক্ষকেই ছাড় দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলেও জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।

পরে দুই অপারেটর সমস্যা সমাধান করতে আরবিট্রেশন বা সালিশ চায়। তারা বলে আলোচানার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে না বের করে এনওসি বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত গ্রাহকস্বার্থসহ টেলিযোগাযোগ খাতের সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।এই অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে আদালতে চলে যায় তারা। এবার লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেয় দুই অপারেটর। ৩ অক্টোবর বিটিআরসিকে দেয়া ওই নোটিশে তারা বলে, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন তাই এই বিষয়ে বিটিআরসি এমন কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে পারে না আর টেলিযোগাযোগ আইনের ২৬ ধারা বাদ দিয়ে ৪৬ ধারায় চলে গেছে বিটিআরসি।

ওডি/টিএএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড