• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কাল থেকে বুয়েটে আবার আন্দোলন 

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০১
বুয়েটে আন্দোলন
বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা (ছবি : আল আমিন পাটওয়ারী)

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত রাখলেও মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে আবারও আন্দোলনে নামছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তদারকির নামে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। নির্যাতনের মুখে মারা যান আবরার ফাহাদ। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চলমান আন্দোলনের মুখে বুয়েটের কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ষষ্ঠ দিনেও আন্দোলন চলমান রাখে তারা। তবে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুই দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত রেখে ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে ফের কাল থেকে আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আবরার হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এমন দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন এখনো শেষ হয়নি। আবরার হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।

তারা আরও জানান, মঙ্গলবার থেকে আগের মতোই মিছিল, সমাবেশ ও স্লোগানের মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালন করা হবে। বুয়েট শিক্ষার্থী তিথি জানান, আমাদের দাবি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। তবে দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, হলে হলে অভিযানের কথা বলা হয়েছে। তবে ড. এম এ রশিদ হলে এখনো অভিযান চালানো হয়নি। এছাড়া আমাদের এখনো নিশ্চিত করা হয়নি যাদের বিতাড়িত করা হয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তারা ফিরে এলে প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেবেন।

এসব বিষয়ে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা দাবিগুলো মেনে নিয়েছি। দাবি বাস্তবায়নে আমরা যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমি রাজনীতিবিদ নই, তাই রাজনীতি বন্ধ করা আমার জন্য কঠিন কাজ। তারপরও তাদের দাবি মেনে আমি ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, তিনি আমাকে সহযোগিতার পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছেন। আমরাও আন্তরিক, সরকারও আন্তরিক। আমরা যে আন্তরিক শিক্ষার্থীরা সেটি বুঝতে পেরেছে সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা যতদ্রুত সম্ভব এটি সমাধানের চেষ্টা করব। তাদের সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করব।

তবে একদিনে তো অনেকদিনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বলছি যতবার প্রয়োজন তাদের সঙ্গে বসব। কারণ আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আমি তাদের সহযোগিতা চাই।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায়ে আগেও বিভিন্ন সময় বুয়েট ক্যাম্পাসে আন্দোলন করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেসব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

তারা বলেন, এসব কারণে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়েছে। প্রশাসনের উচিত আগে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করা।

আন্দোলনকারীদের ১০ দফা:

১. খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে শনাক্তকারী খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শনাক্তকৃত সবাইকে আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে।

৩. মামলা চলাকালীন সকল খরচ এবং আবরারের পরিবারের সব ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এ মর্মে অফিসিয়াল নোটিশ ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রমাণ করতে হবে।

৪. দায়ের করা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করার জন্য প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সব প্রক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের আপডেট করতে হবে।

৫. অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিসিয়াল নোটিশ দিতে হবে।

৬. বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটে হলে হলে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করে রাখা হয়েছে। মোস্ট জুনিয়র ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক জোর করে রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে কোনো সময় যে কোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তাই আগামী ৭ দিনের (১৫ অক্টোবর) মধ্যে বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হবার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি এবং পরবর্তীতে ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন, তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ ৯ অক্টোবর দুপুর ২টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।

৮. আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগিংয়ের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সব প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। সে সঙ্গে আহসানউল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল শুক্রবারের (১১ অক্টোবর) বিকাল ৫টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।

৯. পূর্বে ঘটা এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তীতে ঘটা যে কোনো ঘটনা প্রকাশের জন্য একটা কমন প্ল্যাটফর্ম (কোনো সাইট বা ফর্ম) থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে এবং পরবর্তী এক মাসের মধ্যে কার্যক্রম পূর্ণরূপে শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সব হলের প্রত্যেক ফ্লোরের দুপাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

ওডি/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড