• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাগেরহাটে কনস্টেবলকে মারধরের অভিযোগে বসতবাড়ি ভাংচুর

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

০৯ জুলাই ২০১৮, ২০:৫৬
ছবি : নিজস্ব

বাগরহাটে পুলিশ কনস্টেবলকে মারধরের অভিযোগে ৩ বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে পুলিশ সদস্যরা। জেলার রামপাল উপজেলার গিলাতলা বাজার সংলগ্ন ইলিয়াস আহমেদের বাড়িতে এ তান্ডব চালায় বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। ঘটনার পর থেকে বসত বাড়ি পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় আতঙ্কে আছে নারী ও শিশুরা। তবে ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয় অস্বীকার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ৫জনের নাম উল্লেখ করে রামপাল থানায় মামলা করেছে পুলিশ।

সোমবার (৯ জুলাই) দুপুরে ভাংচুর ও লুটপাট হওয়া বাড়ির মালিক ইলিয়াস আহমেদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৫) বলেন, বুধবার ( ৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে আমি ঘরের পাশের বাথরুমে যাই।এরমধ্যে ক্যাপ পড়া একটি লোক (পুলিশ কনস্টেবল মোঃ ইউসুফ শিকদার (৪৫)) এসে আমার বাথরুমের দরজা ঠেলতে থাকে। ভেতর থেকে আমি তাকে বলি মহিলা মানুষ বাথরুমে, এভাবে দরজা আটকাইয়েন না। বাথরুমের দরজার সামনে সে এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিল যে, আমি কাজ শেষে বের হওয়ার সময় তার শরীর ঘেঁষে আমাকে ঘরে যেতে হয়েছে। পরে সে আমার বাড়ি থেকে বের হয়।

বের হওয়ার সময় আমার স্বামী কাউন্টার ব্যবসায়ী ইলিয়াস আহমেদ ইউসুপের কাছে পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় না দিয়ে ইউসুপ আমার স্বামীকে বলে তোকে কেন পরিচয় দিব? তুই কে? এভাবে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আমার স্বামীর চুল ধরে ইউসুপ মারধর করে। পরে আমার দুই ছেলে শেখ মামুন (৩৫) ও শেখ রাসেল (৩০) ঐ পুলিশ সদস্যকে চর থাপ্পড় মারে। এসময় বাজারের কয়েকজন দোকানদারও ঐ পুলিশ সদস্যকে মারধর করে। পুলিশ সদস্য আমাদেরকে মাদক ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ক্রস ফায়ার দেয়ার কথা বলে বাজার থেকে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পরে বাজারে অনেক পুলিশ অবস্থান নেয়। ঐ সময় বাজারের দোকানদার রাকিব শেখ (২৮) কে মারধর করে পুলিশ সদস্যরা । ফাতেমা আরও বলেন, ঐদিন রাত ১২টার দিকে ৭-৮ জন পুলিশ সদস্য আমাদের বাড়িতে আসে। পুলিশের মারমুখী উপস্থিতি টের পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে আমার দুই ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ আমাদের বাড়ি ভাংচুর করে। এসময় বাড়ির আলমিরাতে থাকা নগদ ২ লক্ষ ১২ হাজার টাকা, ২টি ৩২ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন ও ১টি বাজাজ (ডিসকভারি-১২৫) মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। আমাকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। পরেরদিন বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) দুপুরে আদালতে হাজির করলে আদালত আমাকে জামিন দিয়ে দেয়। বাড়িতে আসার পর আমরা আতঙ্কে আছি। শনিবার রাতেও পুলিশ এসে আমাদের বাড়ি ভাংচুর করে এবং একটি পানির পম্পটি নিয়ে যায়।

ইলিয়াস আহমেদ (৬০) জানান, আমার গায়ে হাত দেয়ায় আমার ছেলেরা ঐ পুলিশ কনস্টেবলকে চরথাপ্পড় দিয়েছে। এরপর থেকে প্রতিদিন বাড়িতে এসে তাণ্ডব চালাচ্ছে পুলিশ। বাড়িতে থাকা আমার দুই ছেলের স্ত্রী ও তাদের সন্তানদেরকেও মারপিট করেছে পুলিশ। এ অত্যাচার আমরা আর সইতে পারছি না।

ইলিয়াস আহমেদের ছেলে শেখ মামুনের স্ত্রী তুলি বেগম (৩৫) বলেন, ঘটনার দিন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আমার স্বামী ও দেবর বাড়ি থেকে চলে গেছে। এখনও ফেরেনি।পুলিশ আমাদেরকে গালিগালাজ করছে, মারধর করেছে। ভয়ে আমার ছেলে স্কুলে যেতে পারছে না। শনিবার রাতেও পুলিশ আসছিল। যাওয়ার সময় আমাদের ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছে। আমরা এ অত্যাচার থেকে বাঁচতে চাই।

ইলিয়াস আহমেদের প্রতিবেশী শেখ শুকুর আলী বলেন, যেভাবে লোকটার ঘরের মালামাল ভাংচুর করা হয়েছে তা বর্ণনাতীত। আইনের রক্ষক পুলিশের এ ধরণের ভূমিকা গ্রহণযোগ্য না।

বাড়ির পাশের ভাড়াটিয়া ইউনানি চিকিৎসক নাইমা আক্তার বলেন, পুলিশ কনস্টেবল পরিচয় দিলে ঘটনা এ পর্যন্ত গড়াতো না। বাজারের পাশে অনেক লোকজন এ বাড়িতে বাথরুমে আসে। সাদা পোশাকে থাকায় তাকে চিনতে পারেনি ফাতেমা বেগম। তবে ঐদিনের পরে এ বাড়িতে যা ঘটছে তা কল্পনা করা যায় না। রামপাল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান জানান, ফাতেমার ছেলে মামুন ও রাসেল মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। পুলিশ কনস্টেবলকে মারপিটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলা থেকে বাঁচতে তারা নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়ি ও মালামাল ভাংচুর করে পুলিশের ঘারে দোষ চাপাচ্ছে।

বাগেরহাট পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, রামপালে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে আমরা তা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত শেষ হলেই সবকিছু স্পষ্ট করে বলা যাবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড