পুরুষ এডিস মশাকে বন্ধ্যা করার উদ্যোগ

সাভারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পুরুষ এডিস মশাকে বন্ধ্যা করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য নেওয়া উদ্যোগের একটি গবেষণা এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।

এ দিকে পুরুষ এডিস মশাকে বন্ধ্যা করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি কার্যকর করা যাবে কিনা, সেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল ঢাকায় কাজ শুরু করেছে। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন পদ্ধতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

জেনেভা থেকে বুধবার ঢাকায় নেমেই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মোট তিনজন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে পুরুষ এডিস মশা বন্ধ্যা করার পদ্ধতি কয়েকটি দেশে কার্যকর করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সাভারে গিয়ে বাংলাদেশের গবেষকদের সঙ্গে আলোচনাও সেরেছেন।

কিভাবে মশাকে বন্ধ্যা করা হবে জানতে চাইলে সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক নামে এই পদ্ধতিতে পুরুষ মশাকে রেডিয়ান বা রশ্মি দিয়ে বন্ধ্যা করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলে এর সঙ্গে মিলনের পর স্ত্রী এডিস মশা ডিম পাড়লেও তাতে প্রজনন ক্ষমতা থাকে না। ফলে ডেঙ্গুর বাহকের প্রাদুর্ভাব কমে যায়।’

এছাড়া বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেছেন, পদ্ধতিটি বাংলাদেশে ব্যবহার করা সম্ভব কিনা, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা তা যাচাই করে দেখার পর সরকার সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কবিরুল বাশার, যিনি মশা নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মত জনবহুল একটি দেশে এই পদ্ধতি কার্যকর করা কঠিন।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এই পদ্ধতি সফল হবে বলে আমার মনে হয় না। ল্যাবরেটরিতে বন্ধ্যা করা পুরুষ মশা বাংলাদেশের প্রকৃতিতে টিকতে পারবে কিনা তা নিয়ে গবেষণা দরকার। এই পদ্ধতি হয়তো কোনো দ্বীপ অঞ্চলে কার্যকর হয়। আমাদের নগরের মতো এমন একটা নগরে এই পদ্ধতি সফল হওয়া বেশ কঠিন।’

অবশ্য কর্মকর্তারা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে জৈবিক ব্যবস্থাপনা বা বিজ্ঞানসম্মত কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনক অবস্থায় যাওয়ার কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘ মেয়াদের চিন্তা করা হচ্ছে। তার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মশাবাহিত ভাইরাস জনিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার ছুঁয়েছে।

ওডি/এসএস