অধিকার ডেস্ক
পবিত্র ঈদুল আজহা সোমবার (১২ আগস্ট)। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা, যথাযথ ধর্মীয় মর্যদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুয়ায়ী পশু কুরবানি করবেন।
এ দিকে রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণস্থ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সোমবার সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য প্রধান জামাতে নারীদের জন্যও ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন রবিবার (১১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতি কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে মহিলাদের অংশ নেওয়ার জন্য আলাদা প্রবেশপথ ও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের গাড়ি রাখা ও ঈদগাহকে নামাজ আদায়ের উপযোগী করার জন্য প্যান্ডেল নির্মাণ, অজুর পানি নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি বা বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ লিখিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া পবিত্র ঈদুল আজহা দিবাগত রাত্রিতে নির্দিষ্ট সরকারি ভবনসমূহ ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে। সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবে।
এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সকল হাসপাতাল বা কারাগার বা সরকারি শিশু সদন বা বৃদ্ধ নিবাস বা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সংগতিশীল ডকুমেন্টারি ফিল্ম বা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সকল শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে ঢাকা জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। কুরবানিকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুতবায় এ বিষয়ে মুসলিসদের সচেতন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কুরবানি করে থাকে।
আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কুরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কুরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় সোমবার দিনের শুরুতেই ঈদগাহ বা মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কুরবানির তাৎপর্য।
এদিকে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহর থেকে অগণিত মানুষ নাড়ির টানে গেছেন গ্রামের বাড়িতে।
ঈদ উপলক্ষে রোববার থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিনের সরকারি ছুটি। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ৫৮২টি স্থানে ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতসহ ঈদুল আজহার ৩১২টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ২৭০ টি জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে।
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ শফিউল্লাহ আজ শনিবার সকালে জানান, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবার ৯০ হাজার থেকে এক লাখ মুসল্লির জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার নারী মুসল্লির জন্য আলাদাভাবে পর্দা দিয়ে নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় পবিত্র ঈদুল আযহার দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে সকাল ৮ টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় এবং উত্তর নীলক্ষেত ও গিয়াসউদ্দিন আহমেদ আবাসিক এলাকার বায়তুস সালাম জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এবার ঈদ জামাত শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। জামাতে ইমামতি করবেন প্যানেল ইমাম শহরের মারকায মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফিজুর রহমান খান। ইতোমধ্যে সেখানেও ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের পর কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঘুচে যাবে সব ভেদাভেদ। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেওয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন। এরপর বাড়ি ফিরে আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে ঈদেও প্রধান কর্তব্য সম্পন্ন হবে।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কুরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কুরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুঃস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কুরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কুরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কুরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাসস।
ওডি/এমআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড