অধিকার ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করে আলোচিত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা বর্তমান পরিস্থিতিতে তার অবস্থান ব্যক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন।
নিজের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘শারি’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ৩৫ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় প্রিয়া জানিয়েছেন, তার পরিবার হুমকিতে আছেন।
ভিডিও বার্তায় প্রিয়া সাহা জানান, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। বরং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ইমেইল করা হয়। সেই ইমেইল পেয়ে তিনি ১৫ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি আরও জানান, তিনি অনেকবার যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।
প্রিয়া সাহা জানান, ২০০৪ সালের পর থেকে পিরোজপুরে তার গ্রামে অনেক পরিবার নিখোঁজ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে ৪০টি সংখ্যালঘু পরিবার ছিল এখন আছে ১৩ টি পরিবার।
ভিডিও বার্তায় তিনি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন করা হয় তা উল্লেখ করেন।
ভিডিও বার্তায় দেখা যায়, একজন প্রশ্নকারীকে প্রিয়া বলছেন, ‘আমি ভালো নেই। আপনারা দেশে আছেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন পরিস্থিতি কোথায় যাচ্ছে। আমার পরিবার ভীষণ সমস্যায় আছে। গতকাল আমার বাসার তালা ভাঙতে চেষ্টা করা হয়েছে। বাসার সামনে মিছিল করা হয়েছে। হুমকি দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমার পরিবারের ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কথা বলেছি আমি, তারা আমার ছবি ছাপাতে পারত। এর মাধ্যমে পরিবারের সবার জীবনকে বিপন্ন করা হয়েছে। আমার পরিবারের কেউ আমার কাজের সাথে কোনোভাবেই যুক্ত নয়।’
হোয়াইট হাউজে আপনি কেন এমন কথা বলেছিলেন- প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া বলেন, ‘এই কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও ওপর নির্বাচনোত্তর চরম নির্যাতন চলছিল ৯৪ দিন ধরে। আজকের প্রধানমন্ত্রী তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন। সমস্ত জায়গা বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে, তার অনুসরণে আমি বলেছি। যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোনো জায়গায় বলা যায়, এটা আমি তার কাছে শিখেছি।’
প্রিয়া আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের যে পরিসংখ্যান বই রয়েছে। ২০০১ সালের পরিসংখ্যান বইয়ের সংখ্যালঘু যে চাপ্টার রয়েছে সেখানে এ বিষয়গুলো লেখা রয়েছে। প্রতি বছর সরকার যে সেনসাস রিপোর্ট (আদমশুমারি) বের করে সেই রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় জনসংখ্যা (সংখ্যালঘু) ছিল ২৯ দশমিক ৭ ভাগ। আর এখনকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা হচ্ছে ৯ দশমিক ৭ ভাগ। এখন দেশের মোট জনসংখ্যা ১৮০ মিলিয়নের মতো। তো সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা একইভাবে বৃদ্ধি পায়নি। ফলে আমি ক্রমাগতভাবে হারিয়ে গেছে বলে যে সংখ্যা বলেছি সেটা মিলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান বইয়ের ওপর ভিত্তি করেই অধ্যাপক আবুল বারকাত গবেষণা করেছেন। এবং সেই গবেষণায় উনি দেখিয়েছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে। এবং কী পরিমাণে ক্রমাগতভাবে লোক হ্রাস পেয়েছে। আমি ২০১১ সালে স্যারের সাথে সরাসরি কাজ করেছিলাম এ কারণে এ বিষয়ে অবহিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে চাইনি। আমার নিজের গ্রামের কথা বলি। সেখানে ২০০৪ সালে ৪০টি পরিবার ছিল। এখন ১৩টি পরিবার আছে। এই মানুষগুলো কোথায় গেল, কোথায় আছে সেটা রাষ্ট্রের দেখার কথা।’
কেন ট্রাম্পের কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পৃথিবীর মধ্যে সফলতা দেখিয়েছে। আমি চেয়েছি বা যে জন্য বলেছি, বাংলাদেশের সাথে মার্কিন প্রশাসনও একসাথে কাজ করে যাতে কোনভাবেই মৌলবাদের উত্থান না ঘটে। তাই আমি বলেছি। সরকার যে কাজটি আমি সেই কাজটি শক্তিশালী করবার জন্য এই কথাগুলো বলেছি।
সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,সরকার যখন প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন তখন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে না বরং আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে সাথে নিয়ে এই মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
তিনি বলেন, মুসলমান হিন্দুদের শত্রু না, মুসলমান সম্প্রদায়ের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষই অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে একসাথে থাকে কিন্তু কিছু দুষ্টু লোক আছে যারা এই ঘটনা ঘটায়।
ওডি/এমআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড