স্টাফ রিপোর্টার
কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে।
পাকুন্দিয়া উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের মাধ্যমে চলমান কাজে প্রায় চার কোটি টাকা অনৈতিক উপায়ে অগ্রিম বিল প্রদান করেছেন সাবেক এই উপজেলা প্রকৌশলী বলে দৈনিক অধিকারের কাছে অভিযোগ করেছেন ওই উপজেলার চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগপত্রে জানানো হয়, মেহেরধনবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্রিম প্রদত্ত বিল ১৭ লক্ষ টাকা, সম্ভাব্য বিল কাজ শুরু হয়নি এবং এ বিষয়ে পে অর্ডার হয়েছে ৫ লক্ষ টাকার; নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্রিম প্রদত্ত বিল ৫০ লক্ষ টাকা, সম্ভাব্য বিল ১২ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার ৫ লক্ষ টাকা; মঙ্গলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্রিম প্রদত্ত বিল ৫৩ লক্ষ টাকা, সম্ভাব্য বিল ১২ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার ৫ লক্ষ টাকা; চরলক্ষীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫০ লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদত্ত বিল, সম্ভাব্য ১৭ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার ৭ লক্ষ টাকা; আলমদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্রিম প্রদত্ত বিল ৪০ লক্ষ টাকা, সম্ভাব্য বিল ২২ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার বিডি-নাই; কুড়তলা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্রিম প্রদত্ত বিল ৪৩ লক্ষ টাকা, সম্ভাব্য বিল ২৫ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার ৭ লক্ষ টাকা; চন্ডিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদত্ত বিল, সম্ভাব্য বিল ৬ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার বিডি-নাই ; চরকাউনা মিরুকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্রিম প্রদত্ত বিল ৩০ লক্ষ টাকা, সম্ভাব্য বিল ৬ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার ৫ লক্ষ টাকার, হোসেন্দী নামাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৭ লক্ষ টাকার অগ্রিম প্রদত্ত বিল, সম্ভাব্য বিল ১২ লক্ষ টাকার এবং পে অর্ডার বিডি-নাই ; মানুল্লারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্রিম প্রদত্ত বিল ৩০ লক্ষ টাকা, সম্ভাব্য বিল ৫ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার ৫ লক্ষ টাকার।
বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প
এ অনুযায়ী ১০ স্কুলের মোট প্রদত্ত বিল দেখানো হয়েছে ৩৬৫ লক্ষ টাকার যেখানে সম্ভাব্য বিল ১১৫ লক্ষ টাকা এবং পে অর্ডার ৩৯ লক্ষ টাকা। হিসাব অনুযায়ী আড়াই কোটি টাকা অগ্রিম বেশি দেখিয়েছেন এই বাচ্চু মিয়া বলে অভিযোগ।
এসব বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম রেনু দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘এসব বিলের ডিলিংস করেন কিন্তু ইউএনও এবং উপজেলার সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রকৌশলী মোঃ বাচ্চু মিয়া। এগুলোর পুরো হিসাব কিন্তু আমি জানি না। আমি যেটা জেনেছি এই বাচ্চু মিয়া প্রায় ১৪ থেকে ১৫টা স্কুলের কাজ করেছে্ন। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো স্কুলে দেখা গেছে কাজ করিয়েছেন ১০ লাখ টাকার, কিন্তু অগ্রিম বিল দেখিয়েছেন ৫০ লাখ টাকার। আবার কোনো স্কুলে কাজ করেছেন ৫ লাখ টাকার কিন্তু বিল করেছে্ন ৫৩ লাখ টাকার।’
শিক্ষা অফিস সংস্কারের নামে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা টেন্ডারবিহীন আরএফকিউ-এর মাধ্যমে মো. বাচ্চু মিয়ার প্রায় ১০ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উনি এটা করতে পারেন না। সরকারি কাজে ২ লক্ষ টাকার উপর কাজ হলেই সেটা টেন্ডার থাকতে হবে। আর যদি টেন্ডার ছাড়া কাজ করি তাহলে সেটা উপজেলা পরিষদের বার্ষিক সভায় সেটার অনুমতি থাকতে হবে। তিনি একটা ফার্মের লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন কিন্তু কাজটা করেছেন উনি নিজেই।’
এখন এই সকল বিল তৈরি করেছেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এমন অভিযোগ তুলে তিনি জানান, ‘এই বিলগুলো যখন ইঞ্জিনিয়াররা ইউএনও এর কাছে সাবমিট করেন, সেই বিলটা তো তারা পাশ করেছেন। এখন ইউএনও কি বিলটা সুবিধা পেয়ে করেছেন না কীভাবে করেছেন সেটা আমার জানা নাই।’
এসব বিষয়ে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোকলেছুর রহমানের সঙ্গে দৈনিক অধিকারের কথা হলে তিনি এসব অভিযোগের বিষয়ে অবগত না বলে জানান।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ বাচ্চু মিয়া তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ পুরোপুরি ষড়যন্ত্র। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না।’
ওডি/এআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড